E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

সুন্দরবনে ৯ দিনেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত ১৫ জেলে

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৪ ১৯:৫৫:৫২
সুন্দরবনে ৯ দিনেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত ১৫ জেলে

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : অপহরণের ৯ দিন পার হলেও মুক্তি মেলেনি বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর ১৫ জেলের। গত ২৬ জানুয়ারি গভীররাতে বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে এই জেলেদের অপহরণ করে বনদস্যু মজনু বাহিনী। একেকজন জেলের মুক্তিপণ হিসেবে ধার্য্য করা হয়েছে তিন লাখ টাকা করে। জিম্মি জেলেদের ফেরৎ পেতে ৪৫ লাখ টাকা দিতে দস্যুদের। 

আজ মঙ্গলবার বিকেলে অপহৃত জেলেদের মহাজন ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য।

তারা জানান, ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় জিম্মি জেলেদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। ধার্যকরা টাকা দ্রুত না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে জেলেদের। সুন্দরবনের অজ্ঞাত স্থান থেকে দস্যুদের মোবাইল ফোনে পরিবারের সাথে কথা বলে কান্নাকাটি করছেন জেলেরা। দস্যুদের জিম্মিদশা থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নেওয়ার আকুতি জানানো হচ্ছে। টাকা না পেয়ে ছাড়তেও নারাজ দস্যুরা।

আবার অতিরিক্ত মুক্তিপণ দাবি করায় তা পরিশোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না দরিদ্র জেলে পরিবারের পক্ষে। স্বজনকে ছাড়িয়ে আনতে মহাজনের আাড়িতে বাড়িতে ধর্ণা দিচ্ছেন পরিবারের সদ্যরা। এই পরিস্থিতিতে জিম্মি জেলেরা আদৌ জীবিত ফিরে আসবে কিনা ভেবে উৎকণ্ঠা বাড়ছে অপহৃতদের পরিবারে।

এদিকে, অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন মহাজনরা। আতঙ্কে রয়েছন দুবলার চরের চারটি শুঁটকি পল্লীর প্রায় ১২ হাজার জেলে।
মহাজনরা বলছেন, চারটি শুঁটকি পল্লীতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। দুর্গম চরে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যে কোনো সময় দস্যুরা এসে লুটপাট করলে তাদের কিছুই করার থাকবে না।

অপহৃত জেলে শ্যামনগর উপজেলার বণ্যতলা গ্রামের শাহ আলমের দরিদ্র বাবা আবু তালেব মোবাইল ফোনে জানান, তাদের অভাবের সংসার। তিন বেলার খাবার জোগাড়েই হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় তিন লাখ কোথায় পাবেন। ছেলেকে বুঝি আর ফিরে পাবেন না। একথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আলোরকোলের শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. রাজ্জাক ও বাবুল সানা জানান, ১৫ জেলের মধ্যে আরাফাত ও জাহাঙ্গীর নামে তাদের দুই জেলে রয়েছেন। তারা দস্যুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রত্যেক জেলের মুক্তির জন্য তিন লাখ টাকা করে দিতে হবে। এর কম হলে ছাড়া হবে না। জেলেরা বলেছেন তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা পরিশোধ না করলে তাদের হাত-পা ভেঙে ফেলা হবে।

আলোরকোলের শ্যামনগরের চাকলা জেলে সমিতির সভাপতি আ. রউফ মেম্বর ও রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজি জানান, দস্যুদের সঙ্গে তারা একাধিকবার কথা বলেছেন। তাদের কথা হলো ১৫ জেলেকে জীবিত ফেরত পেতে হলে প্রত্যেকের তিন লাখ করে ৪৫ লাখ টাকাই দিতে হবে। এতো টাকা শোধ করা ব্যবসায়ী বা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

দুবলার চর ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলে অপহরণের আট দিন পার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো অভিযান দেখছিনা। এতে আমরা হতাশ হচ্ছি। শুঁটকি পল্লীতে আতঙ্ক বাড়ছে।

ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি কমাল আহমেদ বলেন, জিম্মি জেলেদের মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানরা প্রতিদিন তাদের মহাজনদের বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করছে। দস্যুরা বার বার তাদের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করছে। নতুন নতুন নম্বর দিয়ে কথা বলছে। এসব নম্বর র‌্যাাব, কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা দেখছি দেকবো বলছে। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় দস্যুরা নতুন করে জেলে অপহরণেরও হুমকি দিচ্ছে। এতে জেলে-মহাজনরা আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test