E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ভৈরবে পাওনা টাকা নিয়ে সংঘর্ষে শতাধিক দোকান-বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ৫০

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০১ ১৮:০৬:০২
ভৈরবে পাওনা টাকা নিয়ে সংঘর্ষে শতাধিক দোকান-বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ৫০

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাওনা টাকা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুরসহ ৫০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১০টায় পৌর শহরের চণ্ডিবের পাগলা বাড়ি ও মোল্লা বাড়ির মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ১ ঘণ্টা চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ও এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। 

এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে আপেল মোল্লা (২৫), সানি (১৯), শরিফ আহমেদ (৩০), শাওন (১৮), আরিয়ান (১৮), হাবিবুর রহমান (২০), নাসিমা বেগম (৩৩), আরাফাত (২০), সায়েম (১৭), দিদার (২৫), সিফাত মোল্লা (২২), শাহদাত হোসেন (১৬), সুজন (৩২), মেরাজ (২২), হাসান (২০), রাতুল (১৭) ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে আপেল মোল্লা, সানি, শাওন ও শরিফ আহমেদকে কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য আহতরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, পাগলা বাড়ির মিলন মিয়ার ছেলে সাদির ও তার বন্ধুদের সাথে মোল্লা বাড়ির মস্তু মিয়ার ভাতিজার রাহাতের পাওনা টাকা নিয়ে রাত ৯টায় বাকবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে মিলন মিয়া ও মোশাররফ মোল্লা ঘটনাস্থলে আসে। পরে বাকবিতণ্ডার মিমাংসার সময় দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চবাচ্চ হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি প্রাথমিকভাবে মীমাংসা করলে সবাই যার যার বাড়িতে চলে আসে। পরে রাত ১০টায় উভয় পক্ষ ইট পাটকেল, দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এতে উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়। সেই সাথে শতাধিক বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মধ্যস্থানে থাকা নিরপরাধ মানুষদের বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর হয়েছে। এটি অমানবিক। অপরাধীদের কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী নূরু মোল্লা বলে, আমার রাস্তার পাশে একটি মুদি দোকান আছে। এই দোকানের আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। রাতে আমার বাবা দোকান বন্ধ করে বাড়ি যায়। হঠাৎ মোল্লা বাড়ি ও পাগলা বাড়ির মধ্যে ঝগড়া হলে আমার দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমার ১ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে সংঘর্ষকারীরা। এর আগেও আরো দুইবার সংঘর্ষে আমার দোকান ভেঙ্গেছে। আমি গরিব মানুষ কেমনে কি করবো।

এ বিষয়ে কাজি বাড়ির লেলিন কাজি বলেন, আমাদের বেপারী বাড়ি ও কাজি বাড়ির লোকজনের সংঘর্ষের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনাটি মোল্লাবাড়ি ও পাগলা বাড়ির মধ্যে। আমরা মধ্যস্থানে পড়েছি। গত বছরও ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়া হলেই রাস্তার পাশে থাকা আমাদের বাড়িঘর দোকান পাট ভাঙচুর করে। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে মোল্লা বাড়ির মোশাররফ মোল্লা বলেন, আমি শুনেছি আমার এক এতিম ভাতিজা রাহাতকে আমাদের মোল্লা বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছিল পাগলা বাড়ির মিলন মিয়ার ছেলে ও তার বন্ধুরা। পরে আমার ছোট ভাই মস্তু মোল্লা বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর করে। কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে পাগলা বাড়ির মিলন মিয়া বলেন, ছেলে কি নিয়ে ঝগড়া করেছে আমার জানা নাই। খবর পেয়ে এসে দেখি হট্টগোল চলছে। আমি মোল্লা বাড়ির সামনে গেলে মস্তু মোল্লা আমাকে অপমান করে। আমি বিষয়টি দ্রুত মীমাংসা করতে মোল্লা বাড়ির লোকজনকে বলে আসি। হঠাৎ মোল্লাবাড়ির লোকজন দা লাঠি নিয়ে আমার এলাকায় এসে হামলা চালায়। এতে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুল করিম জানান, রাত ১০টার পর থেকে মারামারিতে আহত রোগী আসতে শুরু করে। আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছি। গুরুত্বর আহত ৪ জনকে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। তবে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সেনা সদস্যদের সহায়তায় পুলিশসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এসএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test