E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

৩ কোটির ‘বিপণিবিতান’ অচল

২০২৫ জানুয়ারি ৩০ ১৮:৪৭:১৭
৩ কোটির ‘বিপণিবিতান’ অচল

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : বাজার উন্নয়ন, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দুইতলা বিশিষ্ট বিপণিবিতান। পেরিয়ে গেছে তিন বছর। তবে আজও তা চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হতে চলেছে ভবনটি। ইতোমধ্যে ভবনটি হয়েছে শেয়াল-কুকুর আর ছাগলের চারণভূমি। এছাড়াও উঠে যাচ্ছে ভবনের রং, খসে পড়ছে পলেস্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনেই মার্কেটটি চালু হয়নি। তাই এই প্রতিষ্ঠানের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। দ্রুত ভবনটি চালু করার দাবি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের।

দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান বাজারে দ্বিতল এ ভবনটি নির্মাণ করে সরকার। গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তাই ছিল মূল উদেশ্য।

জানা যায়, নগরবাথান বাজারে ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (দোকান) রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানায়। বাজার উন্নয়ন বলতে তিনটা টিনসেডের চাঁদনী রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বাকি জায়গায় খোলা আকাশের নিচে আর কিছু খড়ের চালা তৈরী করে দোকান সাজিয়ে বসেন। সরকারিভাবে বাজারটির উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সেখানে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে এটির নির্মান কাজ শেষ হলেও আজো চালু করা হয়নি।

এলজিইডি’র স্থানীয় অফিসে খোজ নিয়ে জানা গেছে, দেশব্যাপী গ্রামীন বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে বাজারটির উন্নয়নে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। ওই বছরের আগষ্ট মাসে দরপত্র জমা নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। শেষ হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে।

নগরবাথান বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ জানান, ‘তাদের বাজারটি অনেক পুরানো, তবে সরকারি সহযোগিতা তেমন না থাকায় শ্রীবৃদ্ধি হয়নি। তবে বাজার ঘিরে এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ গড়ে উঠেছে। বাজারে পার্শ্ববর্তী ৮ থেকে ১০ গ্রামের মানুষ এই বাজারটি তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, বাজারে ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বেশির ভাগ ব্যক্তি মালিকানার। ব্যক্তি মালিকানায় একটি এজেন্ট ব্যাংকও প্রতিষ্ঠা হয়েছে। শনিবার ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বাজার বসে। এছাড়া অন্যদিনগুলোতে ট-বাজার না থাকলেও ভবনের দোকানগুলো খোলা থাকে।’

বাজারের পাশের বাসিন্দা জহির রায়হান জানান, ‘বাজারের জায়গা অল্প। এখানে সরকারি জায়গা খুবই কম। যেটুকু জায়গা আছে সেখানে সাপ্তাহিক বাজারে দোকান বসিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা তদ্বির করে টিন সেডের তিনটি চাদনী করালেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এই অবস্থায় সরকারিভাবে প্রায় ৩ বছর পূর্বে একটি দুইতলা মার্কেট নির্মান হয়েছে। কিন্তু আজো এটা চালু না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য এটি নির্মান করলেও তাদের কোনো উপকারে আসছে না।

তিনি জানান, ওই মার্কেটে উপরের তলায় ১০ টি দোকান রয়েছে। আর নিচে উন্মক্ত রাখা আছে। যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পন্যের পসরা সাজিয়ে কেনাবেচা করতে পারবেন। কিন্তু এটা এখন এলাকার মানুষের শুধুই আশা, সটা ব্যবহারের কারো সুযোগ নেই।’

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, ‘প্রতিবছর উপজেলা পরিষদ থেকে বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়। ফলে এটা তাদের দেখার দায়িত্ব বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। এই কারণে তারা একাধিক সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে এটি চালুর অনুরোধ করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তারা দ্রুত মার্কেটটি চালুর আবেদন করেছেন।

বাজারের মাংস ব্যবসায়ী ইমন হোসেন বলেন, ‘ভবনটি চালু না থাকায় কুকুর, শেয়াল ও ছাগলের চারণভূমি হয়েছে। সেখানে এ প্রানীগুলো মলমূত্র ত্যাগ করে জায়গাটি নষ্ট করে ফেলেছে। অতিশিঘ্রই ভবনটি চালু করার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে এলজিইডি’র ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘এলজিইডি বাজারের উন্নয়নে মার্কেটটি নির্মান করেছেন। নির্মাণ শেষে উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরও সম্পন্ন করেছেন। চালুর দায়িত্ব তাদের নয়।’

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘ভবনটি এতদিনেও কেন চালু হয়নি সেটা জানতে আমরা কাজ করছি। অতিশিঘ্রই সমস্যাগুলো যাচাই করে জনগনের সেবা নিশ্চিত করা হবে।

(এসআই/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

Website Security Test