E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

'দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন মেনে সতর্কতার সাথে চলাচল করুন'

২০২৫ জানুয়ারি ২০ ১৮:৩৬:৫১
'দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন মেনে সতর্কতার সাথে চলাচল করুন'

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানের মহাসড়কে বেশকিছু সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর ব্যতিক্রম নয় হাইওয়ে মাদারীপুর রিজিয়নের আওতায় ফরিদপুর এলাকাটিও।

সম্প্রতি ফরিদপুরের বিভিন্ন মহাসড়কে বেশকিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার উপায় খুঁজতে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন, বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশ, মাদারীপুর রিজিয়ন এর অতিরিক্ত ডিআইজি ও ওই রিজিয়নের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় অবস্থিত হাইওয়ে থানার দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে।

তাঁদের বক্তব্য, নির্দেশনা ও তথ্য বিশ্লেষণে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে তাঁদের বলা গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো তুলে ধরা হলো-
মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন মেনে সতর্কতার সাথে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শাহিনুর আলম খান। মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান প্রধান কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, অদক্ষ ও মাদকাসক্ত চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাট নির্মাণে ত্রুটি, অনেক স্থানে পথচারী পারাপারের সেতু না থাকা আর থাকলেও তা ব্যবহার না করা, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব প্রভৃতি অন্যতম'। দুর্ঘটনার এতো সব কারণ জানা থাকা সত্ত্বেও শৃঙ্খলা ফেরে না সড়কে, যা খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে দেশের ট্রাফিক আইন-কানুন ও বিধি-নিষেধ মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

'শীতকালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ঘন কুয়াশা মনে করেন ভাংগা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় ঘন কুয়াশায় ঠিক মতো রাস্তা দেখা যায় না। গাড়ির হেড লাইটের আলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। প্রচণ্ড শীতে কখনো কখনো চালকের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ অবস্থার তাৎক্ষণিক পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটাও অসম্ভব কিছু নয়। কিছুদিন যাবৎ প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার ফলে যে সব দুর্ঘটনা ঘটছে সেগুলোর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাই বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটছে বাসের সঙ্গে ট্রাকের কিংবা বাস ও ট্রাকের সঙ্গে লেগুনা, সিএনজি, অটোবাইক, নসিমন-করিমন জাতীয় ধীরগতির যানবাহনের, যা মহাসড়কে চলাচল করার কথা নয়। বাংলাদেশে এখনও অনেক মহাসড়কে দ্রুতগতির যানবাহন ও ধীরগতির যানবাহনকে একই লেনে চলতে দেখা যায়। মোটর-সাইকেল বেপরোয়াভাবে সব লেন ধরেই চলাচল করে। এ কারণে একদিকে মহাসড়কের শৃঙ্খলা নষ্ট হয় অন্যদিকে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। সব যানবাহনকেই নিজ নিজ লেন ধরে চলার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও চালকেরা অনেকেই সে আইন মানছেন না। অনেকে আবার মহাসড়কে চলাচলের আইন কানুন না জেনে নিজেদের মনের ইচ্ছে মতো চলাচল করে থাকেন।

করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, তিনটি 'ওভার' নিয়ম মেনে চললেই মহাসড়কে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে, যথা- ১. ওভার লোড, ২.ওভার স্প্রিড ও ৩. ওভারটেক। তিনি জানান, 'করিমপুর হাইওয়ে থানা এলাকায় যেসব বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরই ভাগই ওই তিন 'ওভার' নিয়ম না মানার কারণে। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য সুযোগ বুঝে অন্য লেনে চলে যাচ্ছেন চালক আবার ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেকিং করছেন। পণ্য পরিবহনের ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি ওজনের লোডেড পরিবহনও হর হামেশাই চোখে পড়ছে। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক বিভাগকেও এসব বিষয়ে তোয়াক্কাই করতে অনিহা দেখা যায় অনেক চালক ও পরিবহন মালিকের। চালকেরা প্রায়ই বেপরোয়া আচরণ করছেন'। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পুলিশের পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্বশীল মনোভাবের পাশাপাশি তাঁদের-কেও সচেতন হতে হবে' বলেও জানান ওসি সালাউদ্দিন।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল কারো কাম্য হতে পারে না উল্লেখ করে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শাহিনুর আলম খান আরো বলেন, 'চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও আইন মেনে চলার প্রবণতা তৈরি হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য কঠোরভাবে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে ও প্রয়োজন হলে নতুন আইন তৈরি করতে হবে। আইন অমান্যকারী চালকদের অপরাধ বিবেচনায় লাইসেন্স বাতিল এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের শাস্তির আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে'। লাইসেন্সবিহীন চালকদের নিয়োগকারী পরিবহন মালিককেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি বলেও মনে করেন শাহিনুর আলম খান। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশকে আইন প্রয়োগে সহোযোগিতা করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শাহানুর আলম খান আরো জানান, রাজনৈতিক বলয়ের অদৃশ্য কারণ বা অন্য কোনভাবে যদি ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলাচলের সুযোগ পায় তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। সরকারের নির্দেশক্রমে এসব ব্যাপারে আমাদের আরও কঠোর হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশ অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে মহাসড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দুর্ঘটনা রোধে নিরলসভাবে কাজ করছে জানিয়ে শাহানুর আলম আরো বলেন, 'আসলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার বিষয়। কোন পক্ষের একার দ্বারা তা রোধ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সরকার, পরিবহণ মালিক, পরিবহণ শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ইতিবাচক মনোভাব ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে'।

(আরআর/এএস/জানুয়ারি ২০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২১ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test