E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি, থানায় মামলা

২০২৫ জানুয়ারি ১৭ ১৮:০১:২৬
গোপালগঞ্জে মামলার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি, থানায় মামলা

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : চাঁদাবাজির অভিযোগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কাশিয়ানী উপজেলা বিএনপির সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক নিয়ামুল হোসেন মিলনের বিরুদ্ধে কাশিয়ানী থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী শিল্পী বেগম।

চাঁদা দাবি করা সংক্রান্ত ৫ মিনিটের একটি কল রেকর্ড ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার জনমানুষের মুখে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা কাশিয়ানী উপজেলা মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী নারী ও স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের বাথানডাঙ্গা-রামপুর গ্রামের মৃত জাকির মিয়ার ছেলে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। ওই বিএনপি নেতা নিজে পুলিশের সঙ্গে থেকে প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করে। পরে প্রাইভেটকারের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নিয়মানুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে প্রাইভেটকারটি জব্দ দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।

তবে, কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। উদ্ধারের পর জানা যায় প্রাইভেটকারটি মাহাবুর মিয়ার কাছে নিয়ে এসেছিল তার এক বন্ধু। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে পলাতক রয়েছে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়া।

ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে বিএনপির ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘দারোগার কাছে আমি আপনার ছেলেসহ দুজনের কথা বলেছি। আড়াই লাখ টাকা লাগবে। বিষয়টি ওসি-এসপি স্যারের নাকি নজরে গেছে। তারা অ্যাকশনে যাইতে বলছে। এই তিনজনকে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। তা ছাড়া হবে না।আজকে সকাল ১০ টার ভেতর না দিলে তোমার ছেলের নামেও মামলা হয়ে যাবে।’

এ সময় অপর প্রান্ত থেকে ইজিবাইকচালক মাহাবুর মিয়ার মা শিল্পী বেগমকে বলতে শোনা যায়, ‘কাকা আমার ছেলে তো নির্দোষ। আমি আড়াই লাখ টাকা কোহানে (কোথায়) পাবো। আমার ভিটাবাড়ি বেচলেও লাখ টাকা হবে না। তুমি আমার ছেলের একার বিষয়টি দেখো। আমি ১ লাখ টাকা দিতে পারবো।’ তখন ওই বিএনপি নেতা বলেন, ‘মোবাইলে এতো কথা না বলে আপনি আমার বাড়ি আসেন।’

এ ব্যাপারে মাহাবুর মিয়ার চাচা সৈয়দ মিয়া বলেন, ‘নিয়ামুল হোসেন মিলন রাজনীতি করে আমরা জানি। প্রাইভেটকার উদ্ধারের সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। উদ্ধারের পর থেকে নিয়ামুল হোসেন মিলন মাহাবুবের মাকে মামলা হবে বলে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে আসছেন।’

বিষয়টি স্বীকার করে বিএনপি নেতা নিয়ামুল হোসেন মিলন বলেন, ‘প্রতিদিন ওই মহিলা আমার বাড়ি এসে কান্দে। আমি কী করবো। পরে মানবিক কারণে তাদের জন্য সুপারিশ করতে গেছি। আমাকে দারোগা গৌতম বাবু বলেছে, ওরা তো ওই সময় বলছিল তিন-চার লাখ টাকা যা লাগুক তাই দিবে মামলা যেন না হয়। সেইটা দিতে বলেন, মামলা তাদের নামে হবে না। আমাকে কাশিয়ানী থানার দারোগা গৌতম বাবু যা বলছে, আমি তাই তাদের কাছে বলছি। আমি নিজের কথা বলিনি।’

এ বিষয়ে কোটালীপাড়ার থানার সাব-ইন্সপেক্টর (সাবেক কাশিয়ানী থানা) গৌতম কুমার সেন বলেন, ‘মিলন সাহেবকে আমি চিনি। তবে তার সঙ্গে মামলা সংক্রান্ত বিষয় বা টাকার কোনো বিষয় নিয়ে আমার কথা হয়নি। সে হয়তো নিজে ফেঁসে গিয়ে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিউদ্দিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার শিল্পী বেগম বাদী হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় একজনকে আসামি করা হয়েছে। আমাদের আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান। দ্রুতই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।’

এ ঘটনায় নিয়ামুল হেসেন মিলনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. সেলিম বলেন, ‘মামলা যেহেতু হয়েছে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সেইসঙ্গে সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(টি৫বি/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test