E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ফরিদপুরে কিশোর রিক্সাচালক হোসাইন হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২

২০২৫ জানুয়ারি ১৫ ১৬:২৮:০২
ফরিদপুরে কিশোর রিক্সাচালক হোসাইন হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে কিশোর রিক্সাচালক হোসাইন ব্যাপারি (১৩) হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তুফান চৌধুরী (২১) ও আল-আমীন (৩২) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ক্লু-লেস অজ্ঞাতনামা ওই হত্যা মামলাটির মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত উপরোক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাটের রশি, চোরাইকৃত রিক্সা ও রিক্সার ব্যাটারী উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল জলিল। এ সময় জেলা পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ ও ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদ উজ্জামান।

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের এসপি আব্দুল জলিল জানান, নির্মমভাবে খুনের শিকার হওয়া কিশোর হোসাইন ব্যাপারি (১৩)‌ একজন রিক্সাচালক ছিলেন। খুনের মাত্র সাত দিন আগে তার বাবা খোকা ব্যাপারি মারা যান। ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম চর টেপাখোলা (গোলাপ মাতুবারের ডাঙ্গী) এলাকার বাসিন্দা ওই রিক্সাচালকের বাবা মারা যাওয়ায় মাত্র ১৩ বছর বয়সেই পরিবারের একমাত্র পুরুষ সন্তান হওয়ায় তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। জীবিকার জন্য গত ২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় রিক্সা নিয়ে বের হন।

কিন্তু রাত ৮ টার মধ্যে রিক্সা জমা দেওয়ার কথা থাকলে হোসাইন ব্যাপারি ভাড়ায় চালিত রিক্সা গ্যারেজে জমা না দেওয়ায় গ্যারেজ মালিক তার পরিবারকে জানালে তারা সম্মিলিতভাবে হোসাইন ব্যাপারিকে খুঁজতে থাকেন। অনেক খুঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে গত ৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় দিকে ফরিদপুর জেলা শহরের ভাটি লক্ষীপুর এলাকার তালতলা দারুল ইহসান মহিলা মাদ্রাসা দক্ষিণ দেয়ালের পাশে মেহগনি গাছ সহ অন্যান্য গাছের বাগানে হোসাইনের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যা অনুমান সাতটা হতে হইতে ৩ জানুয়ারি সকাল আটটার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা পাটের রশি দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নিহতের রিক্সাটি চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় লোকজন পুলিশকে জানালে কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিশোর হোসাইনের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত পুর্বক ময়না তদন্তের জন্য লাশ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে নিহতের বোন চম্পা আক্তার (২৯) গত ৪ জানুয়ারি কোতয়ালি থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে এজাহার দাখিল করেন।

চম্পার করা ওই হত্যা অভিযোগ ফরিদপুর জেলা কোতয়ালি থানায় (মামলা নম্বর-৭ ধারা-৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড) রুজু হয়। ফরিদপুর কোতয়ালি থানা পুলিশের পক্ষে মামলাটির তদন্ত ওই থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সনাতন কুমার মন্ডল।

এরপর ঘটনার রহস্য উন্মোচনে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার এর দিক-নির্দেশনায় ও এসআই সনাতনের নেতৃত্বে কোতয়ালি থানা পুলিশের একটি চৌকস দল তাঁদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ গুপ্তচর নিয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি সনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান তারা। অভিযানে এক পর্যায়ে ফরিদপুর সরকারি কমার্স কলেজের পিছন থেকে চুরি হওয়া রিক্সাটি উদ্ধার করে জব্দ করে পুলিশ। এসময় ওই রিক্সার সাথে কোন ব্যাটারী পায়নি পুলিশ।

এরপর গত ১৪ জানুয়ারি তারিখ রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে ওই হত্যাকাণ্ডে জাড়িত সন্দেহে আসামি ১. তুফান চৌধুরী (২১), পিতা- তুযার চৌধুরী, সাং- ভাটি লক্ষীপুর (পৌরসভা), থানা-কোতয়ালি, জেলা ফরিদপুরকে পুলিশ আটক করে তাদের হেফাজতে নেন। গ্রেফতারকৃত আসামিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নেয় তুফান চৌধুরী। এরপর তুফান পুলিশকে ওই হত্যার সাথে জড়িত তার অন্যান্য সহযোগীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ সহ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করে গ্রেফতারকৃত তুফান।

আসামি তুফান চৌধুরী (২১) পুলিশকে জানায়, রিক্সার ব্যাটারী চুরি করার জন্যই তারা হোসাইন ব্যাপারি'কে ঘন্টায় ২৫০ টাকা চুক্তিতে ডাড়া করে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। ওইদিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে ভাটি লক্ষীপুর তালতলা দারুল ইহসান মহিলা মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে মেহগনী গাছসহ অন্যান্য গাছের বাগানে হোসাইন ব্যাপারিকে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ ওই স্থানেই ফেলে রেখে আসামিরা রিক্সাটি নিয়ে ফরিদপুর সরকারি কমার্স কলেজের পিছনে গিয়ে রিক্সার ব্যাটারী খুলে ফেলে। এরপর আসামিরা আল-আমীন নামক একজন ভাংগারী দোকানদারের নিকট ৬ হাজার ৫০০ টাকায় ব্যাটারীগুলো বিক্রি করে। আটক আসামির দেওয়া তথ্য মতে মো. আল-আমীন (৩২), পিতা মৃত: নুরু হাওলাদার, সাং-লক্ষীপুর, থানা-কোতয়ালি, জেলা-ফরিদপুর এর কাছে থাকা চুরি হওয়া ওই রিক্সার ৪টি ব্যাটারী উদ্ধার করে জব্দ করার পাশাপাশি আল-আমীনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

এছাড়া, আলোচিত কিশোর হোসাইন হত্যা মামলাটির অন্যান্য আসামি গ্রেফতারে থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে, একই সাথে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

(আরআর/এএস/জানুয়ারি ১৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test