E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ফরিদপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১

২০২৫ জানুয়ারি ১৩ ১৯:১২:৪৮
ফরিদপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১

বিশেষ প্রতিনিধি, ফরিদপুর : ফরিদপুরের কানাইপুরে ওবায়দুর খান (২৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে, চোখ উপড়ে, পা ভেঙে ও পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত ওবায়দুর খানের মা রেখা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) ফরিদপুর কোতয়ালি থানায় রুজু হওয়া ওই মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জনকে ওই হত্যা মামলায় আসামি করেন নিহতের মা। ইতিমধ্যে রেজাউল খান (৩৮) নামের ওই মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে (৪ নং আসামি) গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওবায়দুর হত্যা মামলা ও আসামি রেজাউলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদ উজ্জামান।

আসাদ উজ্জামান বলেন, নিহতের মা রেখা বেগম বাদী হয়ে খাজা বাহিনীর প্রধান খায়রুজ্জামান খাজাকে ১ নম্বর আসামি ও তার ভাই ৯নং কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মো. আলতাফ হুসাইন (মামলার ১১ নং আসামি) সহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগপত্রে অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন বলেও জানান ওসি আসাদউজ্জামান।

ওই মামলায় উল্লেখ করা আসামিরা হলেন- ১. মো. খায়রুজ্জামান খাজা (৩৮), পিতা মৃত হানিফ মাতুব্বর, গ্রাম ভাটি কানাইপুর ২. মো. রাসেল মাতুব্বর (৩০), পিতা আলমগীর মাতুব্বর, গ্রাম মহারাজপুর ৩. মো. নাজমুল হোসেন (৪০), পিতা আক্তার শেখ, গ্রাম কাশিমাবাদ ৪. মো. রেজাউল খান (৩৮) পিতা বকবুল হোসেন খান ওরফে বইদ্যা ওরফে বইজা খান, গ্রাম ভেলাবাজ ৫. মো. রাশেদ তালুকদার (২৯), পিতা ইমানদ্দীন তালুকদার গ্রাম রায়কাইল ৬. নিজাম মাতুব্বর (৩২) পিতা আ. কাদের মাতুব্বর, গ্রাম খাস কান্দি ৭. ঝিন্টু মাতুব্বর (৪২), পিতা মৃত হানিফ মাতুব্বর, গ্রাম ভাটি কানাইপুর ৮. নাজমুল হোসেন (৩০), পিতা আলমগীর হোসেন, গ্রাম মহারাজপুর ৯. শাহ জাহান মৃধা (৩২) [১ নং আসামি খাজার ড্রাইভার], পিতা আবুল মৃধা, গ্রাম লক্ষীপুর ১০. জাহিদ শেখ (৪২), পিতা মৃত সোনামুদ্দিন শেখ, গ্রাম লক্ষীপুর ১১. শাহ মো. আলতাফ হুসাইন ওরফে আলতাফ মাতুব্বর (৫৪), পিতা মৃত- হানিফ মাতুব্বর, গ্রাম ভাটি কানাইপুর ১২. দাউদ খান(৪০), পিতা রহমান খান, গ্রাম করিমপুর ১৩. চয়ন মাতুব্বর (২৮), পিতা ইউনুস মাতুব্বর, গ্রাম ভাটি কানাইপুর ১৪. আমিন খান(৩৬), পিতা হায়দার খান, গ্রাম মৃগী এবং ১৫. এবাদত মোল্লা (২২) পিতা মো. সত্তার মোল্লা গ্রাম মহারাজপুর উভয় থানা কোতয়ালি, জেলা ফরিদপুর সহ আরও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে ওই মামলায়।

এর আগে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি খাজাসহ সবাইকে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে শনিবার বিকেলে মরদেহ নিয়ে কানাইপুর বাজার এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কানাইপুর বিসিক শিল্পনগরীর কাছে একটি তেলের পাম্পে মোটরসাইকেলে তেল নিতে যান ওবায়দুর। এ সময় খায়রুজ্জামান খাজার নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল তাঁকে তুলে নিয়ে ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পেছনে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। ওবায়দুরের দুই চোখে লোহার পেরেক দিয়ে চোখ খুঁচিয়ে উপড়ে ফেলা হয়, মাথা পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ভেঙে ফেলা হয় বাম পা, কেটে ফেলা হয় পায়ের রগ। পরে খবর পেয়ে স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে মারা যান ওবায়দুর।

ওবায়দুর কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছেলে। তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর পাঁচ মাসের একটি ছেলে রয়েছে।

ওবায়দুরের ভাই রাজিব খান দাবি করেন, ‘খাজা ও তার বাহিনী কানাইপুর এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে আসছে। তাকে এলাকার সবাই ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবে চেনে, অনেকগুলো মামলাও রয়েছে। সম্প্রতি ৫ আগস্টের পর ভাই আলতাফ চেয়ারম্যান ও খাজার নেতৃত্বে লুট ও ভাঙচুর করা হয় কানাইপুর ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেনের বাড়ি একাধিক লোকের ওপর চালানো হয় সন্ত্রাসী হামলা। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। বাজার ও স্টান্ডে চাঁদাবাজি'র সাথেও জড়িত খাজা। স্থানীয় বাজারের একাধিক হিন্দু ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক দোকান বিক্রি করিয়ে সামান্য কিছু টাকা তাকে ধরিয়ে দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। খাজার নানা অপকর্মের খবর আমার ভাই পুলিশকে কয়েকবার জানিয়েছিল। এই কারণেই কি আমার ভাইকে খাজা হত্যা করেছে, বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেন রাজিব খান।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, খাজা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। এলাকায় সে গড়ে তুলেছেন খাজা বাহিনী। এক সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের ছত্রছায়ায় ছিলেন খাজা। আব্দুর রহমানের হস্তক্ষেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা থেকেও খালাস পায়েছেন খাজা বলেও দাবি করেন তারা।

এলাকাবাসী আরও জানান, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জেলা বিএনপির এক নেতার সমর্থক ও মহানগর যুবদলের এক বহিস্কৃত নেতার সহযোগী কর্মী পরিচয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব অব্যাহত রেখেছেন খাজা। তাঁর দলে না ভিড়লে হুমকি-ধামকি দেওয়াসহ করা হতো নির্যাতনও বলে জানান স্থানীয়রা।

(আরআর/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test