E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

যমুনা রেল সেতু দিয়ে পূর্ণগতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল

২০২৫ জানুয়ারি ০৫ ১৮:৫৫:৫৪
যমুনা রেল সেতু দিয়ে পূর্ণগতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : প্রমত্তা যমুনা নদীর বুকে নির্মিত দেশের বৃহত্তর যমুনা রেল সেতুতে
আজ রবিবার পূর্ণগতিতে ট্রায়াল ট্রেনের (পরীক্ষামূলক) টেস্ট রান আপ ও ডাউন লাইনে চলাচল শুরু হয়েছে। আগামিকাল সোমবার পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে দুটি ট্রায়াল ট্রেনের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ টেস্ট রান চলবে। চলতি মাসের শেষ বা আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহে যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

মেধা, শ্রম ও প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারায় উচ্ছ্বাসিত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, রোববার সকাল সোয়া ৯ টার কিছু সময় পর হুইসেল বাজিয়ে চারটি কোচ ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে একযোগে রেল সেতুতে ট্রেন চালানো শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে সেতুর দুপাশ থেকে দুটি ট্রেন পারাপারের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর ৬০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।

যমুনার ওপর নির্মিত যমুনা রেলওয়ে সেতুর চিফ সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাইনুল ইসলাম জানান, রোববার পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ণগতিতে ট্রেন চলছে। এর অংশ হিসেবে প্রথমে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে দুটি ট্রেন সেতুর পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে ও পশ্চিম পাড় থেকে পূর্ব পাড়ে ছেড়ে যায়। এরপর ১০টা ২০ মিনিটের দিকে দ্বিতীয়বার ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে দুই পাশ থেকে দুটি ট্রেন সেতু অতিক্রম করে। এরপর ১১টা ০১ মিনিটে একটি ট্রেন সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে সেতুতে ওঠে ও ১১টা ০৫ মিনিটে পূর্ব পাড় থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি পশ্চিম পাড়ের সেতুর শেষ অংশ অতিক্রম করে। এর কিছু সময় পর আরেকটি ট্রেন ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হয়। এভাবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানায়, সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার পর উভয়প্রান্তের স্টেশনে রেল ক্রসিং এর সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আরও বাড়বে।

যমুনা রেল সেতুর (পূর্বনাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু) প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, রোববার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে একই সাথে আপ ও ডাউন লাইন থেকে টেস্ট রান শুরু হয়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিসীমায় রেলওয়ে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়েছে। রোববার পূর্ণগতি দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আগামিকাল সোমবারও রেল সেতুতে পূর্নগতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে ভুলত্রুটি সনাক্ত করা হবে। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলে সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই রেলসেতুটি উদ্ধোধন করা হবে।

প্রকাশ, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে বিগত সরকার ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই বছর ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রেলসেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।

প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশিয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলকে সংযোগকারী এই রেল সেতুর নাম ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু’ নির্ধারণ করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর গত ২২ ডিসেম্বর সেতুর নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেল সেতু’ রাখা হয়।

(এসএম/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test