E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কাজের চাপ বাড়লেও কমেনি সেবার মান

নাগরিক সেবায় দুই ইউএনও’র সফলতা

২০২৫ জানুয়ারি ০৫ ১৮:২৯:৫২
নাগরিক সেবায় দুই ইউএনও’র সফলতা

আঞ্চলিক প্রতিনধি, বরিশাল : সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের নাম শুনলেও সাধারণ মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়ে দেন হরহামেষাই। তবে এরমধ্যে অনেক ভালো কর্মকর্তাও রয়েছেন। যাদের দক্ষতা, মার্জিত ব্যবহার, জনমূখী কর্মকান্ড, পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন, ন্যায় পরায়নতা ও সেবা গ্রহিতাদের কথা ধৈর্য্যরে সাথে শ্রবন করে সমাধান বের করে দেওয়া, গন্ডির বাইরে গিয়েও বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন ‘প্রতিভা কোনো সীমাবদ্ধ সিদ্ধিতে সন্তুষ্ট থাকে না, অসন্তোষই তার জয়যাত্রা পথের সারথী’। এটাই সত্য একজন কর্মদক্ষ, ন্যায় পরায়ন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পারেন দক্ষতার মাধ্যমে একটি উপজেলার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে। এমনই দুইজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হলেন- বরিশালের গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আবদুল্লাহ খান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ৫ আগষ্টের পর নানাবিধ কারনেই মাঠ প্রশাসনে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সামলানোর পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ, পৌরসভায় দায়িত্ব পালন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র পদে থাকার কারনে নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেলেও এ দুই উপজেলার নাগরিক সেবার মান একটুও কমেনি। বরং আগের চেয়ে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন।

নাগরিক সেবায় ইউএনও আবু আবদুল্লাহ’র সফলতা

বিগত ২০২৩ সালের ২৪ আগষ্ট গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন মোঃ আবু আবদুল্লাহ খান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর তার সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে এ উপজেলার নাগরিক সেবার চিত্র। পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকান্ডে ফিরে আসে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা।

অপরদিকে ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দিলেও দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলায় ছিলো ভীন্নরুপ। উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি, জামায়েত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ সহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উপজেলার সার্বিক নিরাপত্তা, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন আবু আবদুল্লাহ খান। বিশেষ করে সরকার পতনের সুযোগে একটি শ্রেনী দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছিলো। সেই প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যের বিপনণ কেন্দ্র ও কৃষি কর্নার স্থাপন করেন। যা উপজেলার সর্বত্র সুনাম অর্জন করে।

এছাড়াও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকশিত করার লক্ষ্যে উপজেলা মডেল পাঠাগার ও গৌরনদী ক্লাব এন্ড সোসাইটি চালুকরণ, শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিবেটিং ক্লাব, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ক্লাব ও বিজ্ঞান ক্লাব স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

জনবান্ধন ভূমি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে উপজেলা ভূমি অফিসে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ১ দিনের মধ্যে নামজারি কার্যক্রম সম্পন্নকরণের জন্য সহকারী কমিশনারকে নির্দেশনা প্রদান করেন। ইউএনও’র নির্দেশনায় সহকারী কমিশনার মো. রাজিব হোসেন ভূমি সেবা প্রত্যাশিদের নামজারি একদিনের মধ্যে সম্পন্ন করেন। যা দেশব্যাপি আলোচিত হয়।

জনগণের স্বাস্থ্য সেবা সমুন্নত রাখতে প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সকল প্রকার মেডিকেল টেস্টের ন্যায্য মূল্যে দৃশ্যমান স্থানে নিশ্চিতকরণ এবং জনসাধারনের স্বাস্থ্যের যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রতিটি ফার্মেসিতে ফুলকোর্স ও রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শপত্র ব্যতীত সকল প্রকার এন্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধকরণ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে অপরিষ্কার খাল-নালা পরিষ্কারকরণ ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।

এছাড়াও নির্মল পরিবেশ ও সবুজায়ন নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জুলাই বিপ্লব বিতর্ক প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করে তরুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। গৌরনদী পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার থেকে নাগরিকদের সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্বের তুলনায় শতগুন। ইতিমধ্যে গৌরনদী উপজেলা ও পৌরসভাকে একটি আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি ও তরুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আবদূল্লাহ খান কালবেলাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। সে হিসেবে যেখানেই চাকুরী করেছি সব সময় নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নাগরিকদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, যেদিন এ উপজেলায় যোগদান করেছি। সেদিনই বলেছি এ উপজেলার আমার। তাই আমার এ উপজেলার প্রতিটা নাগরিককে শতভাগ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যতদিন এ উপজেলায় রয়েছি ততদিন এভাবে সেবা প্রদান করতে চাই। পাশাপাশি উপজেলাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে গৌরনদীকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

ইউএনও ফারিহা তানজিনের সফলতা

২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন ফারিহা তানজিন। যোগদানের পর থেকে মাঠ প্রশাসনে স্বগৌরবে তারুণ্যেদীপ্ত হয়ে কাজ শুরু করেন প্রচার বিমুখ এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সরকারী নানামূখি সেবাসমূহকে সর্বাত্মক স্বচ্ছতার সাথে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জনসাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি যেন এ উপজেলার একজন স্বপ্নকন্যা।

বিশেষ করে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়ার সংখ্যালগু এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র প্রতিনিধি ও সামাজিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে উপজেলার আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। যে কারনে দেশের অন্যান্য এলাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু অপ্রতিকর ঘটনা ঘটলেও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়ার পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। যা ইউএনও ফারিহা তানজিনের বলিষ্ট ভূমিকার কারনে সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক মহল। অপরদিকে ৫ আগষ্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব পরে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এ অবস্থায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নানাবিদ পদক্ষেপ গ্রহন করেন।

সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারনে অস্থিতিশীল হওয়া বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং, জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিদর্শন সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। গত দুই মাস যাবত এ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সহজভাবে নামজারি সম্পন্ন করে চলেছেন। পাশাপাশি গণশুনানীর মাধ্যমে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের জমিজমা সংক্রান্ত এবং অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেওয়ায় সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছেন। এছাড়াও তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ভূমি অফিস কেন্দ্রীক দালালের দৌরাত্ম কমে গেছে। যে কারনে ভূমি সেবাপ্রত্যাশিরা রয়েছে স্বস্তিতে। সর্বোপরি একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে উপজেলাবাসীকে শতভাগ সরকারী সেবা দিয়ে ইতিমধ্যে উপজেলাবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন বলেন, যেখানেই চাকুরী করেছি শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে নাগরিকদের সরকারী সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সরকারি স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সকলের সহযোগিতা নিয়ে একটি সুন্দর আগৈলঝাড়া উপহার দিতে চাই। তিনি আরও বলেন, তিনি আরও বলেন, আমি হয়তো একদিন এ উপজেলায় থাকবো না; থেকে যাবে আমার কর্ম। তাই কর্মের মাধ্যমে এ উপজেলাবাসীর মনে স্থান পেতে চাই।

সার্বিক বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বর্তমান সরকারের যে নির্দেশনা। সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ের অফিসার নির্দেশনা দিয়েছি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জনমানুষের সেবা করার জন্য। পাশাপাশি যেসকল উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা পৌরসভা এবং বিভিন্ন স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন তারা অত্যন্তু সুন্দর ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সকলের সহযোগিতায় সরকারি সেবা জনমানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে যেতে পারবো।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test