E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শীতে জবুথবু উত্তরাঞ্চলের জনজীবন

২০২৫ জানুয়ারি ০৩ ১৮:৩৫:৫৫
শীতে জবুথবু উত্তরাঞ্চলের জনজীবন

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : হাড় কাঁপানো শীতে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জনজীবন জবুথবু অবস্থা জনজীবনের। কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষসহ প্রাণিকুল। দিনাজপুরে আজ শুক্রবার সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। যা এই মৌসুমের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

অন্যদিকে বৃহত্তর দিনাজপুরের পঞ্চগড় জেলার তেুঁলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। এছাড়াও ঠাকুরগাঁয়ে ৯ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, রংপুরে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১০ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১১ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১০ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসা শীতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিন্ম আয়ের দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, হতদরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ।

শীতের তীব্রতার সাথে বেড়েছে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জন-জীবন। বিশেষ করে হতদরিদ্র-ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। কেউ কেউ খড়কুটো জ্বালিতে শীত নিবারণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো কিছু শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু শীতার্ত মানুষের অভিযোগ তারা পায়নি কোন শীতবস্ত্র। তারা গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে ঘন কুয়াশা। আর একারণে রেল লাইনে ট্রেন ও সড়কে যানবাহন দূর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলাতেই হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। এরপরও বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহতদের ঘটনা। সূর্যের মুল দেখা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছেনা চারদিন ধরে। সূর্য উঠলেও লুকোচুরি খেলছে।।

এদিকে দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, দু'তিনদিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে এর পর আরো কমবে তাপমাত্রা। ৩/৪ দিন পর অর্থাৎ এ মাসের ৬ অথবা ৭ তারিখে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলেএকটি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশংকায় করেছেন।

প্রচণ্ড শীতে গ্রামে বসবাসরত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। একটু গরমের আশায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। ফুটপাত ও স্টেশনে বসবাসরত ছিন্নমূল মানুষদের কষ্ট বেড়েছে সবচেয়ে বেশি

শহরে মানুষ বেচা হাট বলে খ্যাত ষষ্টিতলা এলাকার শ্রম বাজারে কাজের সন্ধানে আসা
মানুষেরা কাজ না পেয়ে হা-হুতাশ করছেন। দক্ষিণ কোতয়ালী এলাকার ষাটোর্ধ বয়সের আমিনুল উসলাম কাজের সন্ধানে এসে দুপুর পর্যস্ত বসেই আছে। কোন কাজ না থাকায় খালি হাতে বাড়িও ফিরতে পারছেন না তিনি।

আমিনুল জানালেন, 'বাপু এই ঠান্ডাত শরীরটা কাঁপি উঠেছে। তারপরও সকাল বেলাতেই আইছো।কিন্তু কোন কাম কাইজ নাই। খামো কী বা? হামার গরীবের বাঁচিবার কোন উপায় নাই।'

বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকা থেকে কাজের সন্ধানে আসা মনসুর আলীও জানালেন একই কথা। কাজ না থাকায় খুবই সমস্যায় পড়ছেন। বাড়িও ফিরতে পারছেন না। বাড়ি গেলে কিছু বাজার করে তো নিতে হবে। কিন্তু টাকা তো নেই।

শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। এতে মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তীব্র শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল আর হতদরিদ্র পরিবারগুলো। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতরভাবে দিন কাটছে তাদের। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে শীতার্ত মানুষের অভিযোগ। অপরদিকে শীতজনিত নানান রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীত জনিত রোগির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

এদিকে ঘন কুয়াশায় চলতি মৌসুমে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বোরো বীজতলা ও আলুর ক্ষতি হচ্ছে শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশা। এমনটাই জানিয়েছেন বিরল উপজেলার আদর্শ কৃষক মো. মতিউর রহমান।

অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় সঙ্গে দিনাজপুরে বেড়েছে শীতবস্ত্র-গরম কাপড়ের চাহিদা। শুধু অভিজাত বিপণী-বিতান নয়, হকার্স মার্কেট ফুটপাতের বেড়েছে গরম কাপড় কেনা-বেচার ধুম।দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহি গোর -এ-শহীদ বড় ময়দানস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে লন্ড্রি বাজার খ্যাত হকার্স মার্কেট এ। এ মার্কেটের বিশেষ গুনপছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে কাপড় পাওয়া যায়। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা মূল্যের পোষাক বিক্রি হয় এ মার্কেটে। শুধু দিনাজপুর নয়, আশ-পাশের জেলা গুলো থেকেও এখানে ক্রেতা আসেন কাপড় ক্রয়ে। শুধু গরীব আর মধ্যবিত্তরা নয়, উচ্চবিত্ত মানুষও নামি-দামি গাড়ি হাকিয়ে এসে এখান থেকে কাপড় কিনে।

দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে। তিন/ চার দিন পর আরো তাপমাত্রা কমে যাবে।বাড়বে শীতের তীব্রতা। বয়ে যাবে একটি শৈত্য প্রবাহ। এমনটাই আশংকা আবহারবিদদের।

(এসএস/এসপি/জানুয়ারি ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test