E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

দেবহাটার খলিষাখালীতে ভূমিহীন নেতা কামরুল হত্যা  

প্রকাশ্য সভা সমাবেশে আসামিরা, মামলা প্রত্যাহারে বাদি-সাক্ষীদের ম্যানেজের চেষ্টা

২০২৫ জানুয়ারি ০২ ১৯:১৪:৩২
প্রকাশ্য সভা সমাবেশে আসামিরা, মামলা প্রত্যাহারে বাদি-সাক্ষীদের ম্যানেজের চেষ্টা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিষাখালির ভূমিহীন নেতা কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অধিকাংশ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। করছে সভা সমাবেশ। খলিষাখালির সরকারি জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাক্ষী ও বাদিকে ম্যানেজ করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এফিডেফিট করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

খলিষাখালি এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, শ্যামনগর থানার লুট হওয়া দুটি অস্ত্র খলিশাখালিতে আছে সোর্স হিসেবে সেনাাবাহিনীকে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে গত পহেলা নভেম্বর সকালে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করায় কালিগঞ্জের নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, তার ব্যবসায়িক অংশীদার মাছ আনারুল, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারেম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, তার ছেলে সুরুজ কাজী, সখীপুরের আব্দুল আজিজ, পারুলিয়ার আনারুল, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদ, সিরাজুলসহ একটি মহল। এ সময় তার ভাই কামরুল ইসলামকে ওই চক্রটি পিটিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে। ছয়জন ভূমিহীনকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য মজুত রাখা গোলা বারুদ দিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

২ নভেম্বরের ভোরের ঘটনা উল্লেখ করে ওই দিন বিকেল আটককৃত ছয়জনসহ নিহত কামরুলের নামে মামলা দেয় রামনাথপুরের আব্দুল আলীম। যদিও মামলাটি এক মাস আগে ২ অক্টোবর রেকর্ড দেখানো হয়। এ ঘটনায় তার ভাবী মর্জিনা বেগম বাদি হয়ে ৩ নভেম্বর আজিজুর রহমান, মাছ আনারুল, গোলাম ফারুক বাবু, সিরাজুল ইসলাম, নোড়ারচকের এছাক আলী, তার ছেলে আনারুল ইসলাম, আনারুলের শ্যালক রবিউল ইসলাম, চিংড়িখালির শহীদুল ইসলাম, তার ভাই রবিউল ইসলাম বুল্লা, তালার পাখরা হালিম, গোদাড়ার মহিউদ্দিন, মহাজনপুরের হাবিব, তুজুলপুরের জাহাঙ্গীর আলমসহ ২৩ জনের নামে থানায় অভিযোগ দিলে তা ১০ নভেম্বর রেকর্ড করা হয়। আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা এক মাসের ও বেশি সময় পূর্বে বাড়ি থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে আজিজুর রহমানকে আটক করলেও চার ঘণ্টা পর বিশেষ ব্যবস্থায় ছাড়া পায় বলে তিনি জানতে পরেন।

পরে আজিজুর, গোলাম ফারুক বাবু ও সিরাজুল ইসলাম হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তীকালিন জামিন নিলেও অন্য আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে। বিষয়টি তার ভাবী মর্জিনা বেগম ও ভাইপো ওয়াদুদ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তাকে অবহিত করার পাশপাশি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও র‌্যাব অফিসকে অবহিত করেন। এরপরও গত দুই মাসেও কোন আসামী গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি জামিনে না থাকা আসামীরা সাক্ষীদের ম্যানেজ করে সরকারি জমি নিজেদের উল্লেখ করে সাক্ষী আবুল হোসেন ও তার ছেলে রিপনকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসামীদের পক্ষে এফিডেফিড করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি সাক্ষী রিপনের মাধ্যমে খলিষাখালির ৩৫ বিঘা জমি তার তিন ভাইপো ও ভাবীর জন্য ফেলে রেখেছেন বলে ভাইপো ওয়াদুদকে অবহিত করেছে। সর্বপরি হত্যা মামলার আসামি নোড়ারচকের এছাক আলী, তার ছেলে আনারুল ইসলাম, আনারুলের শ্যালক রবিউল ইসলাম, চিংড়িখালির শহীদুল ইসলাম, তার ভাই রবিউল ইসলাম বুল্লা, তালার পাখরা হালিমসহ কয়েকজন খলিষাখালি সড়কের পাশে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে বক্তব্য রেখেছে।

এক সময়কার “খলিষাখালি বঙ্গবন্ধু ভূমিহীন আবাসন প্রকল্প” এর নাম পরিবর্তণ করে নিহত কামরুল ইসলামের নামে নামকরণ করার ঘোষণা দিয়েছে। এটা আজিজুর রহমান, মাছ আনারুলসহ হত্যা মামলার আসামী আনারুল, রবিউলের সাজানো নাটক বলে মনে করেন তিনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে এফিডেফিড করিয়ে নেওয়ার সুবিধার্থেই এসব নাটক করা হচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা যথাযথ হলে কমপক্ষে একটি আসামীকেও গ্রেপ্তার করলে অন্য আসামীরা প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে পারতো না বলে তিনি মনে করেন।

আব্দুল ওয়াদুদ জানান, তার বাবা কামরুল ইসলাম গাজী দীর্ঘদিন ধরে ভূমিহীন আন্দোলনের অগ্রসারির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভূমিহীন নেতা আানারুল ও রবিউলসহ কয়েকজন চেয়ারম্যানের জবরদখল করে নেওয়া খলিষাখালির জমির মাছ বিক্রির লভ্যাংশ লুটেপুটে খাওয়া ও মাসিক বেতনে কাজ করার সুবাদে ভূমিহীনদের উপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছেন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে মনিরুল আল আমিন। তাকেও পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। তার বাবাকে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে তারা সরাসরি যুক্ত। এখন পিঠ বাঁচাতে চেয়ারম্যান আজিজুরের পরিকল্পায় চেয়ারম্যানকে মাছ বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর ভূমিহীনদের জমি দেওয়ার কথা বলে বোকা বানাচ্ছে। শুধু সাক্ষী আবুল হোসেন ও তার ছেলে রিপনকে ম্যানেজ নয়, তাকে ও তার মাকেসহ অন্য সাক্ষীদের সরকারি জমি দখল দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কৌশলে বাবা কামরুলের নামে খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদের নামকরণের নাটক করছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকতে যারা তার বাবার হত্যার সাথে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রাজু আহম্মেদ বলেন, তিনি প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দেবহাটার পারুলিয়ার চ-িচরণ ঘোষ ১৯৫৫ সালে স্বপরিবারে দেশ ত্যাগ করার পর খলিষাখালিতে তাদের ফেলে যাওয়া এক হাজার ৩১৮ বিঘা জমি জালজালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে জবরদখলের মাধ্যমে ভোগদখল শুরু করে সখীপুরের আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, তার ছেলে সুরুজ কাজী, সখীপুরের আব্দুল আজিজ, পারুলিয়ার আনারুল, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদ, সিরাজুলসহ একটি মহল। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বোধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ওই জমি লাওয়ারিশ ঘোষণা করে। বেগতিক বুঝে তারা বিশেষ সুবিধা নিয়ে ওই জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার শর্তে নলতার চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, তার ব্যবসায়িক পার্টনার আনারুল ইসলাম (মাছ), নওয়াপাড়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়ার সেজ খোকনসহ কয়েকজনের কাছে ঘেরের মাছ বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে ওই চক্রটি ভূমিহীন নেতাদের একটি অংশকে ম্যানেজ করে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের চেষ্টা অব্যহত রাখে। ভূমিহীনদের উপর দফায় দফায় বোমা ও গুলি করে হামলা চালানো হয় । গত ১১ মাসে জেলা প্রশাসন প্রধান বিচারপতির আদেশ কার্যকর না করায় ভূমিদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা দফায় দফায় ভূমিহীনদের উপর হামলা ও মামলা করে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test