E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সালথায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চলছে ডাকাতির নাটক, বিব্রত পুলিশ

২০২৪ ডিসেম্বর ২২ ১৮:০৯:২৮
সালথায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চলছে ডাকাতির নাটক, বিব্রত পুলিশ

সালথা প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ফরিদপুরের সালথায় সংঘর্ষ কমে গেলেও এলাকায়  গ্রাম্যদল পক্ষ ভারী করা, অধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে চলছে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ডাকাতির নাটক। একের পর এক ঘটছে এই ধরনের ঘটনা। এতে বিব্রত হচ্ছে পুলিশ, হয়রানির শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সৌদি প্রবাসী মো. কাউসার মাতুব্বরের স্ত্রী ইতি বেগম গোয়ালপাড়া গ্রামে তাদের নিজ বাড়িতে লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগ এনে সালথা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের আছির উদ্দিন শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর শেখ, কবির শেখ, আয়নাল শেখের ছেলে ছেকন শেখ, হালিম শেখের ছেলে সুজন শেখ, রব মোল্যার ছেলে আবুল খায়ের মোল্লা, খান পরামানিকের ছেলে কামরুল প্রামানিক, জীবন প্রমানিকের ছেলে জাকির প্রমানিক, শুক্কুর প্রমানিক, রহমান শেখের ছেলে নয়ন ও অজ্ঞাত ২-৩ জন তাদের ঘরের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে চাউলের ড্রামের মধ্যে রাখা নগদ ৮ লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালংকার এবং তের বিঘা জমির দলিল পত্রাদি লুট করে নিয়ে যায়।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান। তিনি ঘটনাটি তদন্ত করার সময় কোন তালা ভাঙ্গা না দেখায় চাউলের ড্রামের মধ্যে রাখা নগদ ৮ লাখ টাকা বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকাতি মামলার বাদি ইতি বেগম কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

এছাড়া উক্ত মামলার আসামিদের সাথে ইতি বেগমের গ্রাম্যদল পক্ষ নিয়ে ঝামেলা থাকায় বিষয়টি পুলিশের সন্দেহ হলে তারা (পুলিশ) এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন ডাকাতির ঘটনাটি পুরোটাই সাজানো। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এই লুটপাটের নাটক সাজানো হয়েছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কাউসার মেম্বারের পরিবারের লোক আওয়ামী লীগের রাজনীতি সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কাউসার মেম্বার জীবিকার তাগিদে বর্তমানে সৌদি আরব রয়েছেন। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে কাউসারের স্ত্রী ইতি বেগম গোয়ালপাড়া গ্রামে বিএনপি'র এক পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এলাকায় তার পক্ষে লোকজন ভিড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। এরই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার রাতে ডাকাতি ও লুটপাটের নাটক সাজিয়ে গোয়ালপাড়া গ্রামের কিছু নিরীহ লোককে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন।

ডাকাতি ও লুটপাট মামলার বাদী কাউসার মাতুব্বরের স্ত্রী ইতি বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমি বাড়িতে ছিলাম না। এই সুযোগে ডাকাতেরা আমার বাড়িতে ঢুকে ঘরের তালা ভেঙ্গে নগদ ৮ লক্ষ টাকা সহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়।

অভিযোগে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তারা ডাকাত কি না এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের সাথে আমার গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে ঝামেলা চলছে। তবে এরা ডাকাতির সময় ছিল কিনা আমি জানিনা। এদের নাম আমার শাশুড়ি বলেছে। তবে আমি চাই যারা ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত পুলিশ তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করবে। সে যদি আমার কোন আপন লোকও হয়, তাকেও ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর এই ঘটনায় সালথা থানা পুলিশ যদি মামলা না নেয়, তাহলে আমি কোর্টে মামলা করব।

অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে ইতি বেগমের সাথে আমাদের ঝামেলা চলছে। এ কারণেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। আশা করি পুলিশ তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটন করবে।

অপরদিকে এর আগে গত ১৩ নভেম্বর দুপুরের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সালথার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর পূর্বপাড়া একটি নতুন কবরস্থানের পাশে সোনাপুর পুর্বপাড়া গ্রামের সাহেব মোল্যার ছেলে আনিচুর মোল্যাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে। এই ঘটনায় ১৭ জনকে আসামী করে সালথা থানায় মামলা করা হয়। এদের মধ্যে আতিক ফকির, হাসেম ফকির, আতিকুর মিয়া ও কাইয়ুম নামে চারজনকে আটক করে জেল হাজতে দেয় সালথা থানা পুলিশ। এই মামলার অন্যন্যা আসামিদের বাঁচাতে ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সোনাপুর ইউনিয়নের পূর্বসোনাপুর গ্রামের মো. চানু ফকিরের বাড়িতে ঘরের টিনের চালা কেটে কয়েক ডাকাত ভেতরে ঢুকে চার বছরের এক শিশুর গলায় চাকু ধরে নগদ ৩ লাখ টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ৯ লাখ টাকার মালপত্র ডাকাতি অভিযোগ এনে ৫ ডিসেম্বর সালথা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন আনিচুর মোল্যাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মো. চানু ফকিরের স্ত্রী মোছা. শিউলী বেগম। এতে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করেন আনিচুর হত্যা প্রচেষ্টা মামলার বাদী আনিচুরের আপন ভাই হাফিজুর মোল্যা ও হাদি মোল্যাকে।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, গোয়ালপাড়া গ্রামে ঘটনা শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাই। প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত করে ডাকাতি কোন আলামত পাওয়া যায়নি। অন্য কোন বিষয় থাকতে পারে যা বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে সালথার বিভিন্ন এলাকায় গ্রাম্যদল পক্ষ ভারী, অধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ডাকাতির নাটক সাজানো হচ্ছে, এতে আমরা বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।

সহকারী পুলিশ সুপার নগরকান্দা সার্কেল মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, আমরা এই ধরনের কিছু অভিযোগ পেয়েছি। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

(এএন/এসপি/ডিসেম্বর ২২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২২ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test