E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিএডিসি'তে চাকুরির শুরু থেকে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে মাহবুবা বেগমের রামরাজত্ব!

২০২৪ ডিসেম্বর ১৫ ১৭:৫৮:৫১
বিএডিসি'তে চাকুরির শুরু থেকে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে মাহবুবা বেগমের রামরাজত্ব!

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : অভিযোগ-অনুযোগ বা  কিছু জানতে চাইলে, তিনি তা হাসি দিয়েই উড়িয়ে দেয়।  কাউকে কোন পরোয়া করেন না তিনি। কতিপয় অসাধু ডিলার-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাঁত করে ইচ্ছা মাফিক বীজ প্রদান, কৃত্রিম বীজ সংকট, পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ডিলার নিয়োগ, ভুয়া ডিলার লাইসেন্স প্রদান, ডিলারশীপ নিয়োগ ও নবায়নে মোটা অংকের অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তারপরও নারী হয়েও অলৌকিক শক্তির জোরে  চাকুরির শুরু থেকে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে একই স্থানে থেকে রামরাজত্ব করছেন তিনি। জিম্মি করে রেখেছেন, দপ্তরের অন্যান্য ডিলার,সুবিধাভোগী কৃষক,নিন্ম কর্মচারি-কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিগ বসদেরও।  আওয়ীলীগের মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে এতোদিন রামরাজত্ব করলেও এখন বিএনপি'র পরিচয় দিচ্ছেন তিনি। অনেকের অভিযোগ, তার ইশারায় সবকিছুই ঘটছে দপ্তরে। অবৈধভাবে  উপার্জন করেছেন, কোটি কোটি টাকা। গড়েছেন বহুতল আলিশাস বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্সসহ অঢেল সম্পদ।

আলোচ্য অলৌকিক শক্তিধর নারী মোছা. মাহবুবা বেগম বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসি'র দিনাজপুর অঞ্চলের বীজ বিপণন কেন্দ্রে সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

অভিযোগ রয়েছে, মাহবুবা বেগমের কারসাজিতে নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দাম দিয়েও দিনাজপুরে মিলছেনা আলু বীজ। বীজের অভাবে জেলায় অসংখ্য চাষি আলু নিরুৎসাহিত হয়ে ভুট্টা ও গম আবাদ করছেন। কতিপয় ডিলার এবং অসাদু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে আলু বীজ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্পোরেশন- বিএডিসি দিনাজপুর অঞ্চলের বীজ বিপণন এর সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোছা. মাহবুবা বেগম এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ডিলার অসাদু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করে নেমেছে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন মহোৎসবে।

মাহবুবা বেগম ক্ষমতাসীন দল নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে কম্পিউটার অপারেটর থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছে বিএডিসি-দিনাজপুর অঞ্চলের বীজ বিপণন দপ্তরে। ২০০৬ সালে চাকুরির শুরু থেকে একই দপ্তরে দেড় যুগ (১৮ বছর) ধরে রয়েছেন। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা তার কাছে জিম্মি। এক প্রকার রাম রাজত্ব করছেন তিনি। নিজের স্বামী, দুইভাই-ভাবিসহ পরিবারের স্বজনদের নামে ১৫ টির অধিক বিএডিসি'র বীজ ডিলারশীপ লাইসেন্স করেছেন। এছাড়াও বিএডিসি বীজ ডিলারশীপ লাইসেন্স ৪৪৫ জন এর মধ্যে তার ঘনিষ্ঠ ও পছন্দের ব্যক্তিদের এক তৃতীয়াংশ লাইসেন্স রয়েছে বলে অভিযোগ।

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলারএক দরিদ্র পরিবারের সন্তান মাহবুবা বেগমের বিয়ে হয়েছে দিনাজপুর উপশহরে। এখন থাকেন শহরের দিনাজপুর ঈদগাহ আবাসিক এলাকায়। অবৈধ উপার্জনে তার এখন শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। বিলাস বহুল বহুতল বাড়ি,গাড়ি, বিপুল ব্যাংক ব্যালেন্সসহ অঢেল সম্পাদের মালিক তিনি। বিলাস বহুল আলিশান বাড়িতে একটি সুপ্রতিষ্ঠিন এনজিও সহ বেশ কয়েকটি ভাড়াটিয়া রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিমাসে এখন কমপক্ষে লাখ টাকা ভাড়া পেয়ে থাকেন।

বিএডিসি'তে স্বার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস, বড় ভাই মতিউর রহামান, ছোট ভাই মিজানুর রহমান,ভাবি শাহনাজ বেগম, বন্ধু মওদুদ হাসান ( লাইসেন্স নং- ১০০২৯) অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধবের নামে করে দিয়েছেন বিএডিসি'র বীজ ডিলারশীপ লাইসেন্স। প্রভাব খাটিয়ে শুধু লাইসেন্স করে দিয়েই ক্ষান্ত নন তিনি,তার স্বজন ও ঘনিষ্ঠ ডিলারদের ইচ্ছে মাফিক বীজ সরবরাহের বিষয়টিও তিনি দেখভাল করেন। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কারো কথা বলার সাহস নেই। ডিলার এবং অফিসের উবধর্তন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিন্ম কর্মচারীরা তার কাছে জিম্মি। আওয়ীলীগ শাসনামলে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা ও আওয়ীলীগ এর কেন্দ্রীয় নেতা শেখ ফজলে নূর তাপস এর নাম ভাঙ্গিয়ে চলতেন। এছাড়াও দিনাজপুরের সাবেক মন্ত্রী মরহুম এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ও পিতালয়ের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের সঙ্গেও ছিলো তার বেশ সখ্যতা। মাহবুবা বেগম এসব নামিদামি ব্যক্তিদের ধরে রাখতে শুধু সব সময় মিষ্টি হাসি দিয়ে বিনয়ের সুরে কথা বলা নয়, তাদের সঙ্গে ছিলো তার বেশ সখ্যতা এমন তথ্য তার ঘনিষ্ঠজনদের।

বাংদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসি দিনাজপুর অঞ্চলের নিয়োগ প্রাপ্ত কম্পিউটার অপারেটর মাহবুবা বেগম আওয়ীলীগ শাসনামলে একই দপ্তরে চারটি পদ ধরেছিলেন।

কম্পিউটার অপারেটর, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গুদাম রক্ষক ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নীতিমালা উপেক্ষা করে নিয়মববহির্ভূত অসংখ্য স্বনামে-বেনামে বীজ ডিলারশীপ তৈরি তার হাতেই।

অনেক ডিলারদের নেই নিজস্ব গুদাম,নেই দোকান বা যে স্থানের ডিলারশীপ লাইসেন্স আছে সেই স্থানে অস্তিত্ব নেই,আছে অন্য স্থানে দোকান।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আশরাফুল আলম (লাইসেন্স নং- ১০৬২),চেহেলগাজী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা জিয়াউর রহমান ওরফে নেতা মুন্না (লাইসেন্স নং-১০৬৬),সুন্দরপুর ইউনিয়নের খলিলুর রহমান (লাইসেন্স নং- ১০৬৯),ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখারুল ইসলাম রিয়েল। (লাইসেন্স নং- ১০৬৮),কোতয়ালী যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম রমজান (লাইসেন্স নং- ১০৬৩),মোঃ আব্দুল কুদ্দুস (লাইসেন্স নং- ১০৬৭)মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, (লাইসেন্স নং-১০৭১),আব্দুল্লাহ আল আমিন (লাইসেন্স নং- ১০৭৩), এনাম উল্লাহ জ্যামী (লাইসেন্স নং- ১০০৮),ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল,(লাইসেন্স নং-৯৭৭) নামে ডিলারশীপ লাইসেন্স থাকলেও এদের নেই কোন গুদাম বা দোকান। এমন অভিযোগ খোদ ডিলারদের।

গত বছর (আওয়ীলীগ শাসনামলে) দিনাজপুরে বীজ ডিলার নিয়োগে অনিয়ম, দূর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে। এনিয়ে মামলা হয়েছে। কেউ চাকুরি হারিয়ে জেল-হাজতে রয়েছে।কিন্তু মাহবুবা বেগম ধরা-ছোয়ার বাইরে! অথচ দপ্তরের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র,সিল মোহররের আলমারি এবং বীজ গুদামের চাবি তার কাছেই সংরক্ষিত থাকে।

সে সময় ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার মেসার্স মিঠুন ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারি জয়নাল আবেদিনকে বীজের ভুয়া ডিলারশীপ দেয়া হয়। সেই ভুয়া ডিলারশীপ পাশ বই দিয়ে হয়নাল পাঠ বীজও উত্তোলন করেন।কিন্তু, পরে ওই ডিলারশীপ বইটি ভুয়া বলে জানায় বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই ডিলারশীপে উপপরিচালক আব্দুর রশীদের স্বাক্ষর এবং সই রয়েছে। এনিয়ে জয়নাল কৃষি মন্ত্রণালয়, বিএডিসি চেয়ারম্যান,দূর্নীতি দমন সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।

কিন্তু, উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবা উপপরিচালক রশীদকে দিয়ে দপ্তরের নিরীহ গাড়ি চালক ফরিদুল ইসলাম এবং অফিস সহায়ক মাসুদ রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করান। ওই মামলায় ওই দু' জনকে জেল-হাজতে যেতে হয়।

এ দপ্তরের ১১ লাখ টাকা হিসেব গড়মিলে বরখাস্ত স্টোরকিপার হাফিজুর রহমান ( ৫ নভেম্বর'২০২২) এর রেল লাইনে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু ঘটে। তার দ্বি-খন্ডিত মরদেহ পাওয়া যায়। হাফিজুর ট্রেনে আত্নহত্যা করেছেন বলে চালিয়ে দেয়া হয়। পরে ধামাচাপা পড়েছে যায় ঘটনাটি। এর নেপথ্য ঘটনা এখনো অনেকের অজানা রয়েছে।

দপ্তরের ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়টি মৃত হাফিজুরের উপর চাপিয়ে দেয়া হলেও মূলত: ওই ১১ লাখ টাকার বীজ দপ্তরের দুই কর্মকর্তা র নির্দেশে বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার দুই ডিলারকে বাকিতে দিয়েছিলেন হাফিজুল। এমনি তথ্য দিয়েছেন,দপ্তরের একটি সূত্র। ওই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে আতাঁত করে অবৈধ ভাবে সুবিধা নিয়ে দিনাজপুরে অনেক ডিলার এখন অঢেল অর্থের মালিক। বীরগঞ্জ উপজেলার এক হত দরিদ্র ঘরের সন্তান ডিলারশীপ নিয়ে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। চড়ে বেড়ায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে। বীজ এবং সার কেলেঙ্কারির ব্যবসায়ীদের হোতা ওই ডিলারকে এবার চলতি মৌসুমে বারাদ্দ পেতে না পেতেই উপপরিচালক আব্দুর রশীদ ও সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবা বেগম চাহিদার তুঙ্গে থাকা ১৮ মেট্রিক টন ২৯ জাতের ধানের বীজ সরবরাহ করেছেন।

বেশ কয়েকজন ডিলার এবং কৃষকদের তারা বঞ্চিত করেছে ওই ২৯ জাতের ধানের বীজ থেকে। একই অবস্থা ধান-বীজ -২৮ ধান বীজ-২৬ এর। পছন্দসই ডিলারদের দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু চাহিদা না থাকায় ধানের ৮৯,৯২,৭৪, ব্রি-১০০,বীনা-২৫,ব্রী-৫৮ বীজগুলো অধিকাংশই পড়ে আছে গুদামে।

গত তিন বছর ধরে দিনাজপুরের আলু দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রিপ্তানী হয়েছে। সেই আলু চাষে খ্যাত দিনাজপুর জেলাতেই আলুচাষ করতে গিয়ে বীজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। নির্ধারিত দামের চেয়ে দিগুণ দামে বীজ কিনতে হচ্ছে তাদের।

বীজ এবং সারের সংশ্লিষ্ট অসাদু কর্মকর্তা,ডিলার এবং বিক্রয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সাধারণ কৃষক। শুধু আলুই নয়, সারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে আলু উৎপাদনে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে এবার কৃষকের। ফলে আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। কেউ কেউ আলুর পরিবর্তে ভুট্রা ও গম আবাদে ঝুকলেও চাষির চাষির আলু চাষের জমি অনাদাদি পড়ে আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে জেলায় ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছিল ১১ লাখ ৫৯ হাজার ১৭৫ টন। জেলায় মোট আলু উৎপাদনের ১৫ শতাংশ আগাম জাতের। বিএডিসির তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় ব্রিডার (প্রাক-ভিত্তি) দ্বারা উৎপাদিত, আমদানীকৃত বীজ দ্বারা উৎপাদিত, প্রত্যায়িত এবং মানঘোষিত শ্রেণি– এ চারটি ক্যাটেগরিতে আলু বীজ ডিলার এবং কৃষক ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিক্রি করা হয়।

উত্তরাঞ্চলের জন্য এ বছরে সরকার সানসাইন, কারেজ ও লেডিরোসেটা জাতের বীজ গ্রেড অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৬৪ এবং সর্বনিম্ন ৫৪ টাকা দরে বিক্রি করবে। সান্তানা, কুইনএনি, সেভেন ফর সেভেন ও মিউজিকা বীজ সর্বোচ্চ ৬১ এবং সর্বনিম্ন ৫০ টাকা কেজি। গ্রানোলা সর্বোচ্চ ৫৬ এবং সর্বনিম্ন ৪৪ টাকা। কৃষকরা জানিয়েছেন, এসব বীজ তাদের ৬৫ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে।

সদর উপজের কৃষাণ বাজার বীজ ডিলার ও পুলহাট দামুদার এলাকায় বীজ দোকানদার মোস্তাক রুবেল বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বীজ আলুর সরবরাহ কম। এ কারণে চাহিদামতো বীজ আলু এবার সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। আমরা যতোটুকু পাই,ততোটুকু চাষিদের দেই। নির্ধারিত টাকায় বীজ দিয়েছি। বেশি নেই নাই। চাষিদের চাহিদা মাফিক দিতে পাই বলে তারা বেশি দাম নেইয়ার অভিযোগ তুলছে। এটা সত্য নয়।

বিএডিসি'র বীজ ডিলার এসোসিয়েশন এর সভাপতি লিয়াকত আলী বেগ লিটন বলেন, কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে বীজ সরবরাহে কিছুটা অনিয়ম হচ্ছে। কোন কোন ডিলারকে কর্মকর্তারা ইচ্ছা মাফিক বীজ দিয়ে দিচ্ছেন। কেউ আবার পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে আমরা উবর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা চাই সমবন্টন। এতে ডিলারের পাশাপাশি কৃষক উপকার পাবে। কেউ অবৈধ সুযোগ নিতে পারবে না।'

অভিযোগের বিষয়ে বিএডিসি'র সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবা বেগম তার স্বামী,দুই ভাই,ভাবির নামে ডিলারশীপ আছে বলে সত্যতা স্বীকার করে হেসে হেসে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন,দপ্তর যদি আমাকে না বলদি করে একই স্থানে রাখেন,তাতে কার কি আসে যায় ? আমার সঙ্গে কোন দলীয় নেতাদের সম্পর্ক নেই। আমি কখনো অনিয়ম বা দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার উবধর্ত কর্মকর্তার নির্দেশই আমি সব করি। সেটা অনিয়ত না দূর্নীতি আমি বুঝি না। আমাকে দপ্তর সরিয়ে দিলে চলে যাবো। সমস্যা নেই। এর কিছু আমি জানাতে চাই না। '

বিএডিসি'র অভিযুক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুর রশীদ জানান, 'নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দামে বিএডিসি'র আলু বীজ কেউ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আগে ডিলারদের বীজ দেই। এর পর দেই কৃষকদের।

চলতি আলু মৌসুমে দিনাজপুর অঞ্চলের ৩টি জেলার মধ্যে দিন্সজপুরে ৪৪৫ জন ডিলারের মাঝে ১৫৪৩ মেট্রিক টন, ঠাকুরগাঁয়ে ৮০০ মেট্রিক টন ও পঞ্চগড়ে ৭০০ মেট্রিক টন আলুবীজ দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুরে এবার বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ ১৩ হাজার ৩৪ মে.টন, গম বীজ ৩ হাজার ৯৪ মে.টন. সরিষা বীজ ৫৩ মে.টন ও মসুর ডাল বীজ ১৮ মে. টন বরাদ্দ রয়েছে।

নীতিমান মেনেই আমরা বীজ বিররণ করে আসছি। বীরগঞ্জ উপজেলায় ডিলার সোহাগকে ধান-২৯ জাতের য ১৮ মে.টন বীজ দেওয়া স্বীকার করে তিনি জানান, 'রাজনৈতিক এক উবধর্তন নেতার নির্দেশে সোহাগকে সেই ধানের বীজ দেওয়া হয়েছে। আমার এখানে করার কিছুই ছিলোনা।
সব ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, আমার সঙ্গে ডিলারদের সখ্যতা নেই। তাদের কথা মতো চলি না বলেই আমার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ।

আমার অফিসের কর্মচারিরা কোন কিছু করলে আমি এজন্য দায়ি নই।যারা অন্যায় জালিয়াতি করেছে,তাদের জেলে যেতে হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। কর্মচারি হাফিজুর এর রহস্যজনক মৃত্যু হয়নি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এর বেশি কিছুই আমার জানা নেই।

(এসএএস/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test