E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীতে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্তে বাধা ও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

২০২৪ ডিসেম্বর ১১ ১৮:২৪:১৩
রাজবাড়ীতে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির তদন্তে বাধা ও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নলিয়া শ্যামামোহন ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাসিদা সুলতানার বিরুদ্ধে ১২টি অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অভিযোগের তদন্ত চলাকালে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমানের নিকট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানার বিরুদ্ধে অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ১৪ নভেম্বর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া শ্যামামোহন ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাসিদা সুলতানার বিরুদ্ধে স্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর চাকুরীর মেয়াদ ৮-১০ বছর অতিবাহিত হলেও নতুন নিয়োগ না দিয়ে তাকে বেতন দিয়ে কাজ করানো, সরকারী অব্যবহৃত বই বিক্রির টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা না রাখা, কোন রশিদ ছাড়াই ষষ্ট ও অস্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, অতিরিক্ত শ্রেণী খোলার জন্য বোর্ডের খরচের নামে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সুবিধা নেওয়া, বার্ষিক ক্রিড়া অনুষ্ঠান না করেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন, বিদ্যালয়ের পরীক্ষা উপ-কমিটি, অডিট কমিটি, ক্রয় কমিটি না করা, বোর্ডের নীতিমালার বাইরে শিক্ষক প্রতিনিধি করা, কোন আয়-ব্যায়ের বাজেট না করে গোজামিল করে পরিচালনা, কমিটির অনুমোদন না নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর বর্ধিত বেতন আদায় করা সহ ১২টি অনিয়ম, দুর্ণীতির অভিযোগ দায়ের করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এসএসসির ফরম পুরণের কোচিং ফির নামে বোর্ড নির্ধারিত ফি কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।

নলিয়া শ্যামামোহন ইনস্টিটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাসিদা সুলতানা এসএসসির ফরম পুরণের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বোর্ড ফির পাশাপাশি ৩ মাসের কোচিং ফি বাবদ ১৫শত টাকা করে নেওয়া হয়েছে। পুরাতন বই বিক্রির টাকা একাউন্টে জমা না রাখার কথাও স্বীকার করেন। তবে অন্যান্য অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তদন্তে তারপক্ষে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগটি তিনি কিছুই জানেন না বলেও প্রকাশ করেন।

এদিকে, বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মসিউল আজম চন্নু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান বিল্লাল, বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি মহসীন খান, জামালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জামালপুর কলেজের প্রভাষক মনিরুজ্জামান বাবু, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব কামরুজ্জামান কামরুল স্বাক্ষরিত অভিযোগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানা অনিয়ম, অসাদাচরণ, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও নারায়নগঞ্জের সাবেক এমপি শামিম ওসমানের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, উপজেলার তালতলা স্কুল, চামটা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুরশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর লোক নিয়োগ, আমতলা আইডিয়াল স্কুল, বাঁধুলী খালকুলা মাদরাসার নতুন এমপিও প্রতিষ্ঠানে ব্যাকডেটে শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে এমপিও কাগজপত্রে স্বাক্ষরের অভিযোগ করা হয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানা বলেন, নলিয়া শ্যামামোহন ইন্সটিউশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে গত রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে তদন্ত চলাকালে বালিয়াকান্দি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষার সহকারি শিক্ষক খন্দকার মনির আযম মুন্নু উপজেলা শিক্ষা দপ্তরে আমার কক্ষে ঢুকে উত্তেজিত হয়ে তদন্ত কার্যক্রম বাতিল করতে বলেন। সরকারি কাজে বাধা প্রদান আইনগত অপরাধ। তিনি বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মী নিয়ে শিক্ষা দপ্তরে এসে বিরুপ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্কুলের সভাপতিকে লিখিত ভাবে অবগত করা হয়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চিঠি প্রদান করা হলে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের স্বাক্ষরিত মিথ্যা অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দাখিল করেছেন। এ অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ১১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test