E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা

২০২৪ নভেম্বর ৩০ ১৯:৫৭:৩২
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্সে এবার পাওয়া গেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। জানিয়েছেন পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া। এটা এযাবত কালের সর্বোচ্চ টাকা। আজ শনিবার সকাল ৭ টাকা থেকে গণনা শুরু করে সন্ধ্যা ৬টায় গণনা শেষ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্সে এবার পাওয়া গিয়েছিল ২৯ বস্তা টাকা। দানবাক্সে বিদেশী মুদ্রা, সোনা-রুপার অলঙ্কার এবং বেশ কিছু চিঠি আর চিরকুটও পাওয়া গেছে।

শনিবার সকাল ৭টায় মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মো. হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুবেল মাহমুদের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এরপর টাকাসহ সমস্ত জিনিস সিনথেটিক বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলার মেঝেতে ঢেলে মসজিদ কমিটি ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বাছাই ও গণনা শুরু করা হয়। সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল মোট ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। সঙ্গে বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রুপার গহনা। প্রতি তিনমাস অন্তর দানবাক্স খোলা হয়। তবে এবার খোলা হয়েছে তিন মাস ১৩ দিন পর।

পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদাসার ১২৮ জন ছাত্র, ৩৫ জন শিক্ষক ও স্টাফ, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ১৫০ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৭৫ জন স্টাফ টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন। দেশী মুদ্রার পাশাপাশি পাওয়া গেছে বেশ কিছু বিদেশী মুদ্রা এবং সোনা-রুপার অলংকারও। কেউ কেউ ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেলও (৫০ হাজার টাকা) দান করেছেন। পাওয়া গেছে মনোবাঞ্ছা পূরণের আর্তি প্রকাশ করা বহু চিঠি এবং চিরকুটও। সার্বিক তদারকি ও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন প্রশাসন ক্যাডারের ৯ জন, ১০ জন সেনা সদস্য, ১৬ জন পুলিশ সদস্য ও ৯ জন আনসার সদস্য।

এসব টাকা মুদ্রামান অনুযায়ী পৃথক করে ব্যাংকের গণনা মেশিনের মাধ্যমে ১০০টি নোটের বান্ডেল বাঁধা হয়। সমুদয় টাকা রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম। দানবাক্সের বাইরেও মানতকারীরা বিভিন্ন জাতের গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কবুতর, দুধ এবং সবজিও দান করে থাকেন। এগুলি উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করে ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে গড়ে ওঠা এই মসজিদে দেশ-বিদেশের নানা ধর্মের মানুষ অনুদান পাঠায়। প্রতি জুমার দিন দেশের নানা জেলার প্রচুর মানুষ এখানে নামাজ আদায় করে অনুদান দিয়ে যান। অনেকে মানি অর্ডারের মাধ্যমেও অনুদান পাঠান। এখানে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে মানুষের বিশ্বাস। ব্যাংকে জমা রাখা দানের টাকার লভ্যাংশ থেকে মসজিদ কমপ্লেক্সের নানা রকম খরচ মিটিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের নানা আপদ বিপদে সাহায্যও করা হয়ে থাকে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেছেন, দান বাক্সে পাওয়া টাকা থেকে অসহায় জটিল রোগিদের অনুদান দেওয়া হয়। মসজিদ কমপ্লেক্স মাদ্রাসার ১৩০ জন এতিম ছাত্রের খরচসহ মসজিদ পরিচালনার খরচও মেটানো হয়। জমানো টাকা থেকে পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের আরও দুটি শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণের কাজও করা হবে।
গত বছর ৬ মে পাওয়া গিয়েছিল ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। গতবছর ৯ আগস্ট পাওয়া গিয়েছিল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। গতবছর ৯ ডিসেম্বর পাওয়া গিয়েছিল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এবছর ২০ এপ্রিল পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৭ টাকা। এবছর ১৭ আগস্ট পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এবার পাওয় গেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা।

(এসএস/এসপি/নভেম্বর ৩০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test