E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সেতু না থাকায় ভেঙে যায় ‘বিয়ে’

২০২৪ নভেম্বর ২৭ ১৮:১৪:৪৭
সেতু না থাকায় ভেঙে যায় ‘বিয়ে’

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : শত বছরের পুরনো এক গ্রাম। যেখানে মৌসুমি ফসলসহ নানা ধরনের সবজি চাষ ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে বাসিন্দারা। তিনপাশে ইছামতি নদী আর অন্যপাশে ভারতের নদীয়া জেলা। দূর থেকে দেখে মনে হবে এটা বিচ্ছিন্ন কোনো এক দ্বীপ। ওই গ্রামের বাসিন্দারা সব কিছুতে সফল হলেও তাদের দুঃখ একটাই- সেটা নদীর সেতু নিয়ে। সেতুর অভাবে গ্রামবাসীর যেন দুঃখের শেষ নেই। সেতু না থাকায় অসুস্থ্য রোগীকে হাসপাতালে নিতে দুর্ভোগ, ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে শিক্ষার্থীদের ভয় এমনকি অন্য এলাকার ছেলে-মেয়েদের এই এলাকায় বিয়ে না দেওয়া সহ নানা সমস্যা যেন তাদের নিত্যাদিনের সঙ্গী। ভারতীয় সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্রীনাথপুর হালদারপাড়া গ্রামের ঘটনা এটি।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইছামতি পাড়ের শ্রীনাথপুর হালদারপাড়া গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করত। সেসময় গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। সময়ের আবর্তনে অনেকে চাষাবাদে যুক্ত হয়। উর্বর ভূমি হওয়ায় সেখানে সবজি ও তুলা চাষ বেশি হয়। তবে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া না লাগার ফলে গ্রামটিতে ধীরে ধীরে বসতি কমতে থাকে। এখন সেখানে মাত্র ৩৫টি পরিবার বসবাস করছে।

সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমানতালে করছেন কৃষিকাজ। গ্রামের তিনপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী ইছামতি। নদীর ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাঁকো। সাঁকোর অবস্থায়ও বেহাল। তার ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পারাপার করছেন অনেকে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন হালদার বলেন, ‘সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুনে আসছি নদীর ওপর সেতু হবে। তবে এখন পর্যন্ত দেখতে পেলাম না। ছেলে-মেয়েদের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়। সেতু থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে যায় অনেকের। এ নিয়ে বিভিন্ন অফিসে ঘুরেও কোনো ফল পাইনি।’

সাধন হালদার নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করি। ভালো ফলন হলেও শুধুমাত্র সেতুর অভাবে উৎপাদিত পণ্য কম দামে বিক্রি করতে হয়। অন্য এলাকার মানুষেরা ছেলে-মেয়েকে আমাদের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাই না।’

নাসিমা খাতুন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘যাতায়াত অবস্থা খারাপের জন্য আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের বাড়িতে আসে না। একবার আমার মেয়েটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রাতের আধারে সাঁকো পার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। পরের দিন যখন হাসপাতালে নিয়ে গেলাম তখন তার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়েছিল।’

স্থানীয় শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘হালদারপাড়ায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে সেতু নির্মাণের জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।’

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, ‘ভারতীয় সীমান্তবর্তী ওই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’

(এসআই/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test