E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

মাসে বিক্রি আড়াই লাখ টাকা

সকালে কলেজ, বিকেলে সামুদ্রিক মাছ ভাজাসহ নানা খাবার বিক্রি 

২০২৪ নভেম্বর ২৬ ১৭:৩৭:৪৩
সকালে কলেজ, বিকেলে সামুদ্রিক মাছ ভাজাসহ নানা খাবার বিক্রি 

মাদারীপুর প্রতিনিধি : সকালে কলেজ যায় আর বিকেলে লেকপাড়ে সামুদ্রিক নানা ধরণের মাছ ভাজাসহ বিভিন্ন মজাদার খাবার বিক্রি করেন আকাশ। এই বয়সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার কথা থাকলেও পুরো সময় কাটায় পড়াশুনা আর নিজের ব্যবসা নিয়ে। গড়ে মাসে তার বিক্রি হয় আড়াই লাখ টাকা। লেকপাড়ে সামুদ্রিক মাছ খেতে পেরে খুশি খাদ্যপ্রেমীরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর পৌরশহরের উকিল পাড়া এলাকার আলমগীর মুন্সি ও কাজল বেগমের ছেলে মেহেদী হাসান আকাশ (১৮)। বাবা ব্যবসা করেন। এক বোন ঢাকাতে পড়াশোনা করেন। আকাশ মাদারীপুর সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র।

নিজে কিছু করবেন এবং মাদকের নেশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চিন্তা থেকেই মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ের ফুটপাতে শুরু করেন কাবাব ক্যাব নামে একটি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। প্রথমে কাবাব, লুচি বিক্রি শুরু করেন। এরপর হাসের মাংস ও পরোটা। দিন দিন বেচাকেনা বাড়তে থাকে। খোলা জায়গায়, সুন্দর পরিবেশ ও খাবারের মান ভালো হওয়ায় অল্পদিনেই হাসের মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে করে আকাশের ব্যবসার প্রতি ঝোক বেড়ে যায়। নতুন পদ বাড়ানোর চিন্তা করেন। পরে কুয়াকাটা থেকে কোরাল, রূপচাদা, টোনা, চিংড়ি, লইট্টা, কাকড়া, লাক্ষা, তেলাপিয়াসহ নানা ধরণের সামুদ্রিক মাছ এনে, তা ভেজে বিক্রি শুরু করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই বেশ সাড়া করে যায়। লেকপাড়ে বসে সমুদ্রের মাছ ভাজা গরম গরম খেতে খুব পছন্দ খাদ্যপ্রেমিদের।

ভ্রাম্যমাণ চুলোর সামনেই সমুদ্রের কাচা মাছগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। ক্রেতারা এসে তাদের পছন্দমতো মাছ খাওয়ার কথা বলেন। তখন তাদের সামনেই মাছ কেটে পরিস্কার করা হয়। পরে বিভিন্ন মসল্লা দিয়ে মাছ ভেজে ক্রেতাদের সামনে দেয়া হয়। বিকেল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে এই বিক্রি। খাদ্যপ্রেমিরা মাছের সাথে লুচি ও পরোটাও খেয়ে থাকেন। অনেকেই আবার মাছ ভেজে বাড়ির জন্যও নিয়ে যান।

নানা ধরণের সামুদ্রিক মাছ, হাসের মাংসের পাশাপাশি চিকেন তন্দুরি, চিকেন বিবিকিউ, মশলাদার বটি কাবাব, অ্যারাবিয়ান রেশমি কাবার, চিকেন হরিয়াল টিক্কা, মোরগ মাখ্যান, গরুর মাংসের শিক, বাদশাহী ললিপপ, মাসালা চিকেন চাপ, চিকেন মোমোস, নাগা মোমোস, ফ্রাইড মোমোস, লুচি, চাপতি পিঠা, শাহী পরোটা, চুই ঝাল, দেশি মুরগিসহ নানা মজাদার খাবার বিক্রি করা হয়।

প্রতিদিন সকালে কলেজ যান আকাশ। এরপর দুপুরে বাসায় ফিরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বিকেলেই চলে আসেন লেকপাড়ে নিজের কাবাব ক্যাবে। ছয়জন কর্মচারী কাজ করেন এখানে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। শুক্রবার ও শনিবার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হয়। শুক্র ও শনিবার লাইনে দাড়িয়ে খাবার থেকে হয় ক্রেতাদের। প্রতি মাসে গড়ে তার আড়াই লাখের মতো খাবার বিক্রি হয়। লাভ থাকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। আগামীতে ব্যবসা আরো বড় করবেন বলে জানান মেহেদী হাসান আকাশ।

স্থানীয় কে এম জুবায়ের হাসান খান বলেন, আকাশ মাত্র একাদশ শ্রেণীতে পড়েন। এই অল্প বয়সে এভাবে ব্যবসার কথা চিন্তাই করা যায়না। আকাশকে দেখে আরো যুবকরা এগিয়ে আসবেন বলে আমি মনে করি।

খাবার খেতে আসার সোহাগ হাসান বলেন, আসলে সমুদ্রের মাছ এখানে পাওয়া যাবে, তা ভাবাই যায় না। লেকপাড়ে বসে সমুদ্রের মাছের স্বাদ নেয়া খুব আনন্দ ও মাজাদার ব্যাপার।

আরেক ক্রেতা আয়াত হাসান বলেন, কুয়াকাটা বা কক্সবাজারে গেলে সমুদ্রের মাছ খাওয়া যায়। কিন্তু মাদারীপুরের লেকপাড়ে এই মাছ পাওয়া যায়, শুনে খেতে এসেছি। দারুণ মজা। আমি প্রায় আমার পরিবার নিয়ে এখানে মাছ খেতে আসি। তবে মাঝেমধ্যে হাসের মাংসও খাই এখানের সব রান্নাই ভালো।

খেতে আসা লাবনী বেগম বলেন, লেকপাড়ে অনেকগুলো রেস্টেুরেন্ট থাকলেও এখানে খোলা পরিবেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেতে ভালোই লাগে।

কাবাব ক্যাবের স্বত্তাধিকারী মেহেদী হাসান আকাশ বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এই ব্যবসাটা শুরু করেছি। আমার বয়সের অনেকেই দেখি বাজে আড্ডা দেয়, নেশা করে। আসলে এগুলো আমার কখনওই পছন্দ না। তাই ভালো সময় কাটানোর জন্য, নেশা ও বাজে আড্ডা থেকে দুরে থাকার জন্য ও নিজের কর্মসংস্থানের জন্যই এই ব্যবসাটা শুরু করেছি। তাছাড়া এখানে ৬ জনকে কাজের ব্যবস্থাও করে দিতে পেরেছি। তবে এভাবে ব্যবসাটা অল্প সময়েই সফলতা আসবে তা কখনও ভাবতেও পারিনি। আমাদের রান্না করা হাসের মাংস ও সামুদ্রিক মাছ ভাজা এখানকার মানুষের খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শুক্রবার লাইনে দাড়িয়ে থেকেও খাবার খায় ক্রেতারা। তাই ক্রেতাদের পছন্দমতো আরো খাবারের আইটেম বাড়িয়ে ব্যবসাটাও অনেক দুর নিয়ে যেতে চাই।

মাদারীপুরের উন্নয়ন সংস্থা দেশগ্রামের নির্বাহী পরিচালক এবিএম বজলুর রহমান খান বলেন, আকাশ এত অল্প বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করছেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। সকালে কলেজ করেন, বিকেলে ব্যবসায় করেন, বর্তমানে এমন ছেলে খুজে পাওয়া যায় না। আশা করছি তাকে দেখে আরো অনেক যুবক নিজের কর্মসংস্থান নিজেই খুজে নিবেন।

(এএসএ/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test