E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা 

কাবুলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে 

২০২৪ নভেম্বর ২৫ ১৯:২০:১৯
কাবুলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী এসএম কাবুল হোসাইন (৩২) কারগারে। তার ছোট দোকানটি ১ মাস ধরে বন্ধ। প্রতিবেশিরা মাঝেমধ্যে খাবার দিয়ে তাদের সহযোগিতা করছেন। অর্থিক দৈন্যতায় কাবুলের ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কেয়া বেগম (২১) বিধবা শাশুড়ী ও মাকে নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তায় তিনি ভেঙ্গে পড়েছেন। তাই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই কেয়া  স্বামীর মুক্তি চেয়েছেন। 

গোপালগঞ্জ জেলার টুটাপাড়া গ্রামের মৃত হানিফ শেখের ছেলে এসএম কাবুল হোসাইন২০১৪ সালে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কুশলা ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি রাজনীতি ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে ছোট চাকরি নেন। করোনার সময় চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। ২০২১ সালে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নিয়ে কুশলা বাজারে একটি মোবাইল ফ্ল্যাক্সিলোড ও ফটোকপির দোকান দেন। এই দোকানের আয় থেকে বৃদ্ধ মা, শাশুড়ী ও অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে কাবুলের সংসার কোন রকমে চলতো।

গত ২১ অক্টোবর বিকালে কুশলা বাজার থেকে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ কাবুলকে গ্রেফতার করে। ওই দিন রাতেই স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কাবুলকে গোপালগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।

কাবুলের স্ত্রী কেয়া খানম বলেন, আমার বয়স যখন ২ বছর তখন আমার বাবা মারা যায়। অনেক কষ্টে মা আমাকে মানুষ করেছেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি টিউশনি করে সংসার চালাতাম। বিয়ের পর মা আমার সাথে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। স্বামীর সামান্য আয়ে আমাদের সংসার চলতো। আমার স্বামীকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার স্বামী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় সংঘটিত এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে কিছুই জানে না। সে এ ঘটনায় জড়িত থাকলে গা ঢাকা দিত। এলাকায় থেকে ব্যবসা করত না। আমি আমার নিরপরাধ স্বামীর মুক্তি চাই।

কেয়া আরো বলেন, আমি এখন ৯ মাসের অন্তসত্ত্বা। আগামী ১০ ডিসেম্বর আমার ডেলিভারী ডেট। ঘরে খাবার নেই। প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে আমাদের কিছু কিছু খাবার দিচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবো ? আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই। তা নাহলে বৃদ্ধ মা, শাশুড়ী ও গর্ভের সন্তান নিয়ে আমাদের মরতে হবে।

কাবুলের মা শেফালী বেগম (৬০) বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান কাবুলের বয়স যখন দেড় বছর তখন ওর বাবা মারা যায়। এরপর মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে ওকে বড় করে তুলেছি। দু’ বছর আগে কাবুলকে বিয়ে দিয়েছে। আমার পুত্রবধু এখন ৯ মাসের অন্তসত্ত্বা। আমি, আমার পুত্রবধু কেয়া ও তার মা জায়েদা বেগমকে দেখার মতো কাবুল ছাড়া আর কেউ নেই। হত্যা মামলায় কাবুল এখন জেলে আছে। আমরা এখন কিভাবে বাঁচবো। আমি আমার ছেলের জামিন চাই।

প্রতিবেশি রুবিয়া বেগম (৬৫) বলেন, কাবুল কারাগারে। তাই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বৃদ্ধ মা ও শাশুড়ী অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের টাকা পয়সা নেই। খাবার নেই। আমরা তাদের মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করছি। আমাদেরও সংসার আছে, তাই আমরা আর কত দিন দেখতে পারব? তাই মানবিক কারণে কাবুলের মুক্তি দেওয়া উচিত।

কুশলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হোসেন বলেন, কাবুল কুশলা বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। জেলে থাকায় কিস্তির টাকা ও দোকান ভাড়ার জন্য পাওনাদাররা কাবুলের মায়ের কাছে ধরনা দিচ্ছে। কাবুলের পরিবার খেতেই পারছেনা। ওরা কিভাবে কিস্তিরটাকা ও দোকান ভাড়া পরিশোধ করবে?

কাবুলের আইনজীবী গোপালগঞ্জ জেলা আইনজিবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এম.এম নাসির আহমেদ বলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর কাবুলের মামলার জামিনের শুনানীর দিন ধার্য রয়েছে। আশাকরি এ দিন আদালতের কাছে কাবুল সুবিচার পাবে।

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কাবুল শেখকে গত ২১ অক্টোবর আটক করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পাঠাই। সদর থানা পুলিশ কাবুলকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস.এম জিলানী তার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতের জন্য গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার গাড়ি বহর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার গাড়ি হামলা করে। এতে এমএম জিলানী সহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। এ সময় ভাংচুর করা হয় ১০টি গাড়ি। গাড়ি বহরে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারকে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর শওকত আলী দিদারের স্ত্রী রাবেয়া রহমান বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ১১৭ জনের নাম উল্লেখ ও ১ হাজার ৫ শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test