E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ডেঙ্গুতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা

২০২৪ নভেম্বর ২৪ ১৬:৪৮:৩৩
ডেঙ্গুতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা শামসুন্নাহার বেগম। গত ১৮ নভেম্বর গভীর রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার একমাত্র ছেলে তুষার আলী (২৫)। তুষারের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও তার মৃত্যুর বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার মা। কিছুতেই থামছিল না ছেলে হারানো মায়ের কান্না। বাড়ি থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বাড়ির সামনে বসে মা শামসুন্নাহার এখন শুধু ছেলের কবরের পানে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন।

পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের নারিচা এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে তুষার আলী। লেখাপড়ায় মেধাবী তুষার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের রসায়নে অনার্স শেষবর্ষের ছাত্র ছিল। পাশাপাশি সংসার ও পড়াশুনার খরচ যোগাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্টোরি টেক সিস্টেমাতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নারিচা গ্রামে সরেজমিনে তুষারের বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে পুকুর পাড়ে তুষারের মা ও মামাসহ স্বজনরা বসে আছেন। তুষারের মা তাকিয়ে আছেন তার আদরের একমাত্র ছেলের কবরের দিকে। বাড়ি থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে ইসলামপুর নারিচা স্কুলপাড়া গোরস্থানে তাকে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বাড়ির সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে তুষারের কবর।

তুষারের ফুফু রাশিদা খাতুন বলেন, তুষারের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০৮ সালে মারা যান। তখন তুষারের বয়স মাত্র ৫/৬ বছর। বড় বোন সুমাইয়া খাতুন স্মৃতি তুষারের চেয়ে এক বছরের বড় ছিল। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে মহাসংকটে পড়েন তুষারের মা। সেলাই মেশিনে টুকিটাকি কাজ করে তাদের দিন কাটছিল। তুষার কলেজে ভর্তির পর নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশনি শুরু করে। মাঝেমধ্যে দিনমজুরের কাজও করতো। এভাবেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিল। পাঁচ বছর আগে তুষারের বোনে বিয়ে হয়ে যায়। বয়সের ভারে তুষারের মা সেলাই মেশিনের কাজ করতে পারে না। তুষার পড়াশুনার পাশাপাশি যা আয় করতো তাই দিয়ে সংসার চলতো। ছয় মাস আগে সে রূপপুর পারমাণবিকের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ নিয়েছিল।

তুষারের মামা আব্দুল আওয়াল বলেন, গত ৩ নভেম্বর তুষারের কলেজে পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসে মাকে বলে শরীরে জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে। পরের দিন সকালে তুষারকে নিয়ে ওর মা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আব্দুল্লাহর নিকটে যান। চিকিৎসক তাকে ঔষধ দেন। এতে জ্বর না কমায় ৭ নভেম্বর তুষারকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু পজেটিভ হয়। পরের দিন ছুটি নেওয়ার জন্য তুষার রূপপুর প্রকল্পে যায়। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে জ্বর আরো বেশি হলে ৯ নভেম্বর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা শেষে শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতাল ত্যাগের পরামর্শ দেন। তুষার বাড়ি ফিরে আসার পরের দিন আবারো জ্বর আসে। তাকে দ্রুত আবারো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবণতি হলে ১৬ নভেম্বর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ১৮ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

বোন সুরাইয়া ইয়াসমিন স্মৃতি বলেন, পরিবারের উপার্জন করার মতো আর কেউ রইল না। ছোট বেলা থেকে দুই ভাই-বোন অর্থকষ্টে বড় হয়েছি। আমার বিয়ে হয়েছে। ভেবেছিলাম তুষারের পড়াশুনা শেষ করে ভালো চাকুরি করে পরিবারের দুঃখ কষ্ট ঘুচাবে। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি আমার ভাইকে আল্লাহ নিয়ে গেল।

নারিচা মশুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম আজম বলেন, তুষার মেধাবী ছাত্র ছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি ছোট বেলা থেকে সে টিউশনি ও দিনমজুরি কাজ করে সংসার ও পড়াশুনার খবর যোগাতো। ছয় মাসে আগে রূপপুর প্রকল্পে শ্রমিকের কাজ নিয়েছিল। পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যাচ্ছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শফিকুল ইসলাম শামীম জানান, ৭ নভেম্বর তুষারের রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু পজেটিভ হয়। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারা বাড়ি চলে যায়। দুইদিন পর অবস্থার অবণতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুষার মারা গেছে।

(এসকেক/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test