E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জে ১০ টাকার চিতই পিঠায় মিলছে ৩০ রকমের ভর্তা 

২০২৪ নভেম্বর ১৩ ১৮:৩৩:২৯
গোপালগঞ্জে ১০ টাকার চিতই পিঠায় মিলছে ৩০ রকমের ভর্তা 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এই প্রথম ১০ টাকার একটি চিতই পিঠার সাথে বিনামূল্যে মিলছে ৩০ রকমের ভর্তা। সুস্বাদু ভর্তার টানে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠার স্টলে ভিড় লেগেই থাকে। বেচা-বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভাল। ভোজন রসিকরা পরম পরিতৃপ্তির সাথে পিঠার স্বাদ গ্রহন করতে পারছেন। 

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী বাসস্ট্যান্ডে মন্টু মুন্সির এ পিঠা বিক্রির স্টল বিকাল ৩ টায় এ স্টল শুরু হয়। চলে রাত ১২ টা পর্যন্ত।

১০ টাকার চিতই পিঠার সাথে এখানে চিংড়ি ভর্তা, চ্যাপা শুটকি ভর্তা, পাবদা শুকটি ভর্তা, পুটি শুটকি ভর্তা, টাকি শুটকি ভর্তা, লইট্টা শুটকি ভর্তা, লোনা ইলিশ ভর্তা, কাচকি শুটকি ভর্তা, ডাল ভর্তা, বাদাম ভর্তা, সরিষা ভর্তা, রসুন ভর্তা, কাঁচা মরিচ ভর্তা, শুকনা মরিচ ভর্তা, টমেটো ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, আলু ভর্তা, মিক্স ভর্তাসহ ৩০ প্রকারের ভর্তা মিলছে। ভর্তা গুলো পিঠার দোকানের টেবিলে সাজানো থাকে। লোভনীয় স্বাদ গ্রহণ করতে এখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটছে। তারা ১০ টাকা দিয়ে একটি চিতই পিঠা কিনে সাথে রকমারী ভর্তার স্বাদ নিতে পারছেন। চিতই পিঠার সাথে পছন্দের বাহারী সব ভর্তার স্বাদ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন ভোজন রসিকরা।

পিঠা বিক্রেতা মন্টু মুন্সি বলেন, আমি ঢাকার যাত্রবাড়ি, শনির আখড়া সহ বিভিন্ন স্থানে পিঠার দোকান করেছি। এবছর গ্রামেরবাড়িতে চলে এসেছি। ২০ দিন আগে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ডে পিঠার স্টল বসিয়েছি। এখানে ভাপা, পাটিসাপটা, ধোসা,চিতই সহ বিভিন্ন ধরণের পিঠা দুপুরের পর থেকে বিক্রি শুরু করি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে আমার এ পিঠা বিক্রি। নানা ধরণের পিঠা তৈরী করলেও সব চেয়ে বেশী বিক্রি হয় চিতই পিঠা এবং ভর্তা।

পিঠা বিক্রেতার সহকারী বিল্লাল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি চালের গুড়ি দিয়ে চিতই সহ বিভিন্ন পিঠা বানিয়ে এখানে বিক্রি করি। এতে আমাদের ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এ শীতের মৌসুমে আমরা পিঠা বিক্রি করি। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে পিকনিকে গেলে তারা পিঠা খাওয়ার জন্য আমাদেরকে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। তখন তারা আমাদেরকে যে পিঠা তৈরি করে দিতে বলে আমরা সেই পিঠা তৈরি করে দিতে পারব। সুস্বাদু বিভিন্ন পিঠা তৈরির অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রানি (২৫) বলেন, পিঠার সাথে আমাদের এলাকায় সাধারণত ৫/৬ রকমের ভর্তা পওয়া যেত। এইবার প্রথম টুঙ্গিপাড়ায় ১০ টাকা দিয়ে একটি চিতই পিঠা কিনলে সাথে ৩০ প্রকারের ভর্তা পাওয়া যাচ্ছে। এক এক ধরণের ভর্তার স্বাদ এক এক রকম। পিঠা খাওয়া শুরু করলে ভর্তা দিয়ে এক সাথে ৮/১০ টি খেয়ে ফেলি। তাই সন্ধ্যায় ভর্তার টানে এখানে চিতই পিঠা খেতে ছুটে আসি।

পিঠা খেতে আসা নাঈমউদ্দিন (৩০) বলেন, আমি এ উপজেলায় চাকুরী করি। পরিবারের কেউ এখানে থাকে না। তাই পিঠা তৈরি করে খাওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য পিঠা খেতে ইচ্ছা হণে,এখানে চলে আসি। এ দোকানের চিতই পিঠা ও ভর্তা খুবই মজাদার।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামল বিশ্বাস (৩৫) বলেন, সন্ধ্যায় বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসলে তাদের চিতই পিঠা ও ভর্তা দিয়ে আপ্যায়ন করি। মাত্র কয়েক দিনে এ পিঠার খ্যাতি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরে জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে শীতের আমেজ শুরু হতেই গোপালগঞ্জ জেলা শহর সহ উপজেলাগুলোর বিভিন্ন হাট-বাজার, মাঠ, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। বিভিন্ন বয়সের অন্তত ৫শ’ মানুষ রকমারী পিঠা তৈরি করে ভোজন রসিকদের কাছে বিক্রি করছেন। তবে সবচেয়ে বেশী বিক্রির তালিকায় রয়েছে চিতই পিঠা,বিভিন্ন রকমের ভর্তা ও ভাপা পিঠা।

প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে পিঠা বিক্রি শুরু হলেও সন্ধ্যার পর এসব পিঠার দোকানে ভোজন রসিকদের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ক্রেতারা পছন্দের ভর্তা দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খান চিতই পিঠা। কেউবা আবার আপন জনদের জন্য কিনে নিয়ে যান। এ সুযোগে পিঠা বিক্রেতারাও কামিয়ে নিচ্ছেন দু’ পয়সা। পিঠা বিক্রি করে তারা সংসার চালাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দে।

গোপালগঞ্জ শহরের শেখ রাসেল শিশু পার্কের পিঠা বিক্রেতা জমিলা খাতুন (৪৫) বলেন, পিঠা বিক্রি করে ভালই আয় হয়। আমরা পার্কে বসে খোলা আকাশের নিচে গভীর রাত পর্যন্ত পিঠা তৈরী করে বিক্রি করি। এতে মাথায় শিশির পড়ে। মাঝে-মধ্যে ঠান্ডা জনিত রোগ দেখা দেয়। তাই কোন কোন দিন অসুস্থতা জনিত কারণে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। দোকান বন্ধ থাকলে সংসার চলে না। তাই আমাদের স্থায়ী ভাবে বসার একটু জায়গা করে দিলে উপকৃত হতাম। ব্যবসার জন্য একটা স্থায়ী ঠিকানা হতো।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৪ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test