E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ঐতিহ্য তুলে ধরতে ‘লাঠি খেলা’

২০২৪ নভেম্বর ০২ ১৮:২২:১৯
ঐতিহ্য তুলে ধরতে ‘লাঠি খেলা’

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : পরনে বাহারী পোশাক আর হাতে লাঠি। ঘুরছে শাঁই-শাঁই, পন-পন। ঢোলক, ঝুমঝুমি, কাড়া ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে নাচ। লাঠি দিয়ে হয় সড়কি, ফড়ে, ডাকাত ডাকাত, বানুটি, বাওই জাক, নড়ি-বাড়িসহ নানা খেলা। খেলোয়াররা তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন ও আত্মরক্ষা করে। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা তাদের নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করতেন। প্রাচীন জনপদে সম্মিলিতভাবে বর্গিদের কিভাবে মোকাবেলা করা হতো সেই বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয় লাঠি খেলার মাধ্যমে। আধুনিক সভ্যতার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুল ধরতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ লাঠি খেলা।

আজ শনিবার বিকেলে উপজেলার ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রান্নু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রাচীন এ ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি দেখতে ভিড় করে হাজারো মানুষ। খেলায় লাঠিয়ালদের লাঠির করসত দেখে মুগ্ধ উপস্থিত দর্শনার্থীরা। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা বেশ উপভোগ করে গ্রামবাংলার প্রাচীন এই খেলা।

তাদের দলের সুসজ্জিত লাঠি খেলা প্রদর্শন মুগ্ধ করেছে সকল লাঠি প্রেমীদের। এ খেলায় স্থানীয় ৮ থেকে ১০ টি লাঠিয়াল দল অংশ গ্রহণ করেন। লাঠি খেলা উপলক্ষে বাহারি সব দোকানও বসে স্কুল মাঠটিতে। কেউ হেটে আবার কেউবা ভ্যান বা মোটর সাইকেল যোগে দুপুরের পর থেকে স্কুল মাঠে আসতে শুরু করে দর্শনার্থীরা। উদ্দেশ্যে গ্রামীন ঐতিহ্য লাঠিখেলা দেখা। সুর্য পশ্চিম দিগন্তে একটু হেলে পরলেই শুরু হয় খেলা।

প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও তাকে আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। এসব দৃশ্য দেখে আগত দর্শকরাও করতালির মাধ্যমে উৎসাহ যোগায় খেলোয়াড়দের। হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নিয়মিত আয়োজন করার দাবি দর্শকদের।

কাতলাগাড়ী থেকে আশা দর্শনার্থী রুবেল হোসেন জানান, ‘আগে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা প্রায়ই অনুষ্ঠিত হত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব খেলাধুলা হারিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর হলেও লাঠি খেলা দেখতে পেরে খুশি তারা। প্রতি বছর এ ধরনের খেলার আয়োজনের দাবি জানান তাদের।’

স্থানীয় যুবক আজিজুর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাপ-দাদাদের ‍মুখে লাঠিখেলার কথা শুনে বড় হয়েছি। তবে কালের বিবর্তনে এ খেলা হারিয়ে গেছে। যুবসমাজকে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে এ খেলা নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন।’

মানুষকে আনন্দ দিয়ে নিজে আনন্দ পাওয়ার জন্যই এ খেলা করেন বলে জানান অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়রা। তারা বলেন‘, লাঠি খেলা দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই লাঠি খেলা যুগের পর যুগ বাঁচিয়ে রাখতে লাঠিয়াল ফেডারেশন করার দাবি জানাচ্ছি।’

লাঠিখেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবছর পূর্তি উপলক্ষে রান্নু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ খেলার মাধ্যমে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরা ও যুবসমাজকে মাদকসহ নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখায় একমাত্র লক্ষ্য।’

(এসআই/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test