E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জামিনে বাড়ি ফিরে দুই বংশের সংঘর্ষে আহত অর্ধ শতাধিক, নিহত ১ 

২০২৪ অক্টোবর ৩১ ১৮:৩৬:০১
জামিনে বাড়ি ফিরে দুই বংশের সংঘর্ষে আহত অর্ধ শতাধিক, নিহত ১ 

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : জামিনে বাড়ি ফিরেই কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মৌটুপি গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। নিহত ব্যক্তি কাইয়ুম (৪০) মৌটুপি গ্রামের রমিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষটি ঘটে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে কর্তা বাড়ি আর সরকার বাড়ির মধ্যে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কর্তা বাড়ির লোকজন জামিনে বাড়ি ফিরে এলেই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরেন দুই বংশ। 

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ২০ জন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত মস্তু মিয়া (৪০), মোস্তাক (২২), সায়জুল (১৮), মিলন (২২), মরক আলী (৮০) ও লিটন মিয়া (৫২) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ হয়েছে। মালেক মিয়া (৩৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা নিয়েছেন, সায়েম (১৮), রাজ্জাক (৬৫), উজ্জ্বল (১৮), সালাম (৫৫), মইনুউদ্দিন (৪৫), সেলিম (৫০), এলাস (৪৭), সোহেব মিয়া (১৮)সহ আরো ২০ জন। গুরুত্বর অন্যান্য আহতরা কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, মৌটুপি গ্রামে সরকার বাড়ির বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাফায়েত উল্লাহ ও কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা মো. তোফাজ্জল হক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ ৫৪ বছর যাবত আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রায় এক ডজন খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ঈদের পর দিন তোফাজ্জল হকের গোষ্ঠীর নাদিম কর্তা সরকার বাড়ির লোকজনের হাতে খুন হয়। অপরদিকে এই ঘটনার পর ১৩ সেপ্টেম্বর কর্তা বাড়ির লোকজনের হাতে সরকার বাড়ির ইকবাল খুন হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের কয়েকশ বাড়ি ঘর ভাঙচুর লুটপাট হয়েছে। দুটি খুনের ঘটনায় উভয় পক্ষের ২০০ আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা হয় থানায়। এরই মধ্যে কর্তা বাড়ির নাদিম হত্যা মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাড়িতে চলে আসলেও সরকার বাড়ির ইকবাল হত্যা মামলার আসামিরা জামিন না নিয়ে বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে আসলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্র রামদা, লাঠি, বল্লম, তীরসহ ইটপাটকেল নিয়ে মাঠে নেমে পরলে কাইয়ূম মিয়া বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এসময় উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, দুপুর থেকে রোগী আসা শুরু করে ৩টা পর্যন্ত রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে আসা সব রোগীকেই ভালোভাবে চিকিৎসা দিয়েছি। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ পর্যন্ত ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি ও গুরুতর আহত ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ১ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে সরকার বাড়ির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, কর্তা বাড়ির নাদিম মারা গেলে আমাদের গোষ্ঠীর কমপক্ষে দুইশ বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন লাগানো হয়। ৫২ বছর যাবত তোফাজ্জল হক তার বংশের লোকজন নিয়ে আমাদেরকে অত্যাচার নির্যাতন করছে, আমার দুই ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আজও আমার বংশের কাইয়ূমকে তারা হত্যা করেছে।

অপরদিকে প্রতিপক্ষের কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, আমার বংশের লোকজন দীর্ঘদিন পলাতক থেকে বাড়িতে গেলে সরকার বাড়ির লোকজন তাদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আমরা অত্যাচার নির্যাতন করি না বরং সরকার বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে আছি। তারা এ পর্যন্ত আমার বংশের ৪ জনকে খুন করেছে।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন মৌটুপি গ্রামের দুটি বংশের ঝগড়া বিবাদ দীর্ঘদিনের। তাদের এসব ঘটনায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এ গ্রামের মানুষের বর্বরতা নিষ্ঠুর কর্মকা- অমানুষের মত। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ সহায়তা করছে।

(এসএস/এসপি/অক্টোবর ৩১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test