E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জে এতিম ৩ শিশুর কাঁধে ‘ঋণের বোঝা’

২০২৪ অক্টোবর ২২ ১৮:২৫:৫০
গোপালগঞ্জে এতিম ৩ শিশুর কাঁধে ‘ঋণের বোঝা’

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : বাবার রেখে যাওয়া ব্যাংক ‘ঋণের বোঝা’ কাঁধে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ৩ এতিম শিশুর। একদিকে বাবা-মাকে হারানোর শোক, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপে  এতিম শিশু মিম (১২), জিম (১০) ও সাড়ে ৪ বছর বয়সের রকি  আতংকিত হয়ে পড়েছে। তাদের চোখে মুখে অজানা অনিশ্চিয়তার ছাপ। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে। শিশু ৩টি ওই গ্রামের প্রয়াত বদরুল ইসলাম বরকত ও লুপা বেগম দম্পত্তির সন্তান। 

জানা গেছে, ওই গ্রামের বদরুল ইসলাম বরকত দরিদ্র পরিবারের অভাব ঘুচাতে ২০১৯ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ডিসেম্বর মাসে কুয়েতে যান। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে হাসি ফুঁটাতে ও ধার-দেনার টাকা পরিশোধ করতে প্রবাসে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। বাড়িতে রেখে যাওয়া সন্তান সম্ভবা স্ত্রী লুপা বেগম প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে ২০২০ সালের মে মাসে মারা যান। সদ্য ভূমিষ্ঠ আব্দুর রহমান রকির চেহারাটাও ভালো করে দেখে যেতে পারেননি মা লুপা বেগম। রকিও পায়নি গর্ভধারিনী মায়ের আদর-স্নেহ। স্ত্রীর মৃত্যুতে দেশে ফিরে আসেন বরকত। বুকে আগলে রাখেন মা হারা শিশু আব্দুর রহমান রকিকে। মা হারা দুই কন্যা শিশু মিম ও জিম বাবাকে কাছে পেয়ে মায়ের শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠে। কিন্তু বিধিবাম, ধার-দেনার টাকার শোধের দুঃচিন্তা আর স্ত্রী হারানোর শোকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্ট্রোক করে মারা যান বরকত। তার এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে পরিবারটি ব্যাপক সংকটে পড়ে । অবুঝ ৩ শিশু মিম, জিম ও রকি বাবা-মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়ে। বর্তমান তারা অনাদর-অবহেলায় বৃদ্ধ দাদি জুলেখার সংসারে খেয়ে, না খেয়ে বড় হচ্ছে।

এদিকে, ব্যাংক ঋণের টাকা মওকুফের জন্য আত্মীয়-স্বজনরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যোগাড় করে দ্রুত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের গোপালগঞ্জ শাখায় আবেদন করেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী কোন গ্রাহক ও নমিনী যদি ২২ মাসের মধ্যে মারা যান। তাহলে ওই গ্রাহকের ঋণ মওকুফ করা হয়। কিন্তু আবেদনের সাড়ে ৩ বছর পর মুকসুদপুর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখার কর্মকর্তারা এসে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন ওই ৩ শিশুকে।

বরকতের স্বজনদের দাবি, ‘ঋণ মওকুফের জন্য সব ধরনের কাগজপত্র যথা সময়ে ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও বিষয়টি অবগত আছেন। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, কাগজপত্র তারা পায়নি। এ ঘটনায় বাবা-মা হারা এতিম ৩ ভাই বোনের মাথায় যেন বাজ পড়েছে। এতে হতবাক হয়েছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

প্রতিবেশী ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘কাগজপত্র সব জমা দেয়া হয়েছিল। আমিসহ আরও অনেকেই ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য ওদের নেই। বদরুলের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। এসব বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করলে, এতিম বাচ্চাগুলো কোথায় যাবে।’

গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বরকত মারা যাওয়ার পর ওরা আমার কাছে আসে। আমি ওদের সাথে গোপালগঞ্জ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক থেকে বলা হয়-প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে। যেহেতু প্রধান কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। পরে জানতে পারি ব্যাংক বরকতের বৃদ্ধা মা ও এতিম বাচ্চাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মুকসুদপুর শাখা ব্যবস্থাপক মো. সেলিম বলেন, ‘বিষয়টি অনেক আগের। তবে আবেদনের কপি আমি ফাইলের কোথাও পাইনি। পেলে অবশ্যই মওকুফ করা যেত। বিষয়টি আমরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়কে অবিহিত করব।’

(টিবি/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২২ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test