E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভাঙল ভবের হাট, শেষ হয়েছে লালন স্মরণোৎসব

২০২৪ অক্টোবর ২০ ১৪:৩৬:০১
ভাঙল ভবের হাট, শেষ হয়েছে লালন স্মরণোৎসব

একে আজাদ, কুষ্টিয়া : একতারা, দোতারা আর ঢোল-বাঁশির সুরে প্রকম্পিত হয়ে ওঠা ভবের হাটের সাধুসঙ্গ শেষ হয়েছে আজ। আখড়াবাড়ি ছাড়ছেন লালন অনুসারী ও সাধুরা। মহামানবের দর্শন, নিজেকে চেনা, অজানাকে জানার জন্য কয়েক দিন ধরে অবস্থান নেওয়া সাধু ভক্তরা বলছেন, অর্জিত লালন শিক্ষা নিজের ও পৃথিবীর শান্তির পথ হবে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে আখড়াবাড়ীর মূল মঞ্চে আলোচনা সভার মাধ্যমে এ স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

১৩৪ বছর আগে ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক আধ্যাত্মিক সাধক লালন ফকির দেহত্যাগের পর থেকে এই সাধুসঙ্গ উৎসব চলে আসছে। প্রথমে লালন ফকিরের অনুসারীরা পরে লালন একাডেমি এ উৎসব চালিয়ে আসছে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ আধ্যাত্মিক এই বাণীকে সামনে নিয়ে এবারও পহেলা কার্তিক ১৭ অক্টোবর তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব শুরু হয়।

মহামানবের দর্শন পেতে দিনক্ষণ ঠিক রেখে এবারও কয়েক দিন আগেই জাত পাত ভুলে দেশি-বিদেশি লালন ভক্তরা কুষ্টিয়ার অক্ষরবৃত্তে জড়ো হয়। লালন অনুসারীরা নিজেদেরকে খাটি করে গড়ে তুলতে সহজ মানুষের সন্ধান করেছেন। লালনের রীতি অনুযায়ী অষ্টপ্রহরব্যাপী সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ছাড়ছেন সাধু-ভক্তরা।

সকাল থেকেই মহাগুরু ফকির লালনকে বিশেষ ভঙ্গিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, গুরুকার্য শেষে গুরু শিষ্যের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আখড়াবাড়ি ছাড়ছেন সাধুরা। তারা বলছেন, হিংসা রাগ দূর করার অর্জিত লালন শিক্ষা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন। দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানবতার মুক্তির দর্শন প্রচার চালাবেন।

আজ রাতে মূল মঞ্চের আলোচনা ও লালন সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে লালন উৎসবের সমাপ্তি হয়েছে। শেষসময়ে আখড়াবাড়ি মাঠে বাউল মেলায় মেতে উঠেছেন সবাই।

গত ৩০ বছরে এবার সবচেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হয়েছে আখড়াবাড়িতে। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে। চিরদিনের অবাধ্য মনকে শুদ্ধ করতে ভক্তরা আবারও ফিরে আসবেন এই ভবের হাটে।জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা: শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো: হেলাল মাহামুদ শরিফ আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

এবারও পথপ্রদর্শক লালনকে স্মরণ এবং অবাধ্য মনকে শুদ্ধ করতে দেশ-বিদেশের হাজারো লালন অনুসারী, ভক্ত-অনুরাগী আর দর্শনার্থী আখড়াবাড়ীতে অবস্থান নিয়েছিলেন।

লালনের রীতি অনুযায়ী পহেলা কার্তিক সন্ধ্যায় অধিবাস, পরদিন দুই কার্তিক সকালে বাল্য ও দুপুরে পূর্ণ সেবার মধ্যদিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ হওয়ায় শুক্রবার বিকেলেই অনেক লালন অনুসারী অতৃপ্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আখড়াবাড়ী ছেড়ে গেছেন। বাকিরা শনিবার সকাল থেকে গুরুকার্য শেষ করে লালনের তীর্থধাম ছাড়াতে শুরু করে।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর এ স্মরণোৎসব পালন করে আসছেন তার অনুসারীরা।

(একে/এএস/অক্টোবর ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test