E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ডাকাতির ভয়ে নৌ চলাচল বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা

২০২৪ অক্টোবর ১৩ ১৯:৫০:০৪
ডাকাতির ভয়ে নৌ চলাচল বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঘাটে নৌযান নোঙর করে ধর্মঘট করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের অরুয়াইলগামী মাল বোঝাই ট্রলারের মাঝিরা। যাত্রাপথে ডাকাতির ভয়ে ভৈরব থেকে কোন রকম মালামাল লোড ও যাত্রীরা বহন করছেনা ২০টি ট্রলার। আজ রবিবার (১৩ অক্টোবর) ভৈরব বাজার নদীরপাড় এলাকা থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে না কোন নৌযান। ঘাট খালি পড়ে আছে। এতে করে বিপাকে পড়ছে ভৈরব বাজারের ব্যবসায়ীরা ও নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা।

জানা যায়, নদী বন্দর ভৈরব থেকে থেকে সরাইলের অরুয়াইল ২২ কিলোমিটার নৌপথ। এই ২২ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ থেকে ৭টি নৌঘাটে মাল লোড আনলোড হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভৈরব, আশুগঞ্জ, আজিমপুর, বড়ইচড়া, পরমানন্দপুর, বৈশ্বর ও অরুয়াইল নৌঘাট। এই ঘাটগুলো দিয়ে ট্রলারগুলো চলাচল করার সময় আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট থেকে পানিশ^র এলাকার মা-মনী ইটখলা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে ডাকাতি সংগঠিত হয়। সরাইলের পানিশ্বর এলাকা হচ্ছে মেঘনা ও কুশিয়ারা নদীর মিলনস্থল। এ পানিশ্বর এলাকার নদী ঘোনা এলাকা হওয়ায় ত্রিমুখী নদী পথ থাকায় ডাকাতরা ডাকাতি করে সহজে পালিয়ে যেতে পারে। এদিকে দুই থানার রশি টানাটানিতে ডাকাতরা সুযোগ নিচ্ছে। ভৈরব থানা বলছে এটি আশুগঞ্জ থানার এরিয়াভূক্ত, আর আশুগঞ্জ থানা বলছে এটি সরাইল থানার এরিয়াভূক্ত। এ ঘটনা নতুন নয় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে সীমানা নিয়ে বৈষম্য। দুর্ভোগে আছেন মাঝি, সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।

আজিমপুরের কামাল মাঝি, বড়ইচড়ার ফরিদ মাঝি, পরমানন্দপুরের জাহের মাঝি ও বৈশ^রের আনফর মাঝি বলেন, আমরা একা নৌকা নিয়ে ভৈরব থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারছি না। গত ৩ মাসে ৫টির মতো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি নৌকায় ডাকাতি হয়েছে। এছাড়া চলতি মাসের ১১ ও ১২ অক্টোবর আমরা ডাকাতের ধাওয়া খেয়েছি। এ বিষয়ে ভৈরব ও আশুগঞ্জ পুলিশকে অবগত করলেও এর কোন সুরাহা হচ্ছে না। এ জন্য আমরা ধর্মঘট করেছি।

এ বিষয়ে মাঝি আজিজুল বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলাম মাঝিকে মারধোর করে ডাকাতদল। এসময় তাকে কুপিয়ে আহত করে সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। আমিও কয়েকবার ডাকাতির শিকার হয়েছি। প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে চলাচাল করতে হয় নদী পথ দিয়ে।

মাঝি মহি উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ থেকে অরুয়াইল যাওয়ার পথে ডাকাতের কবলে পড়েছিলাম। এসময় আমার ট্রলারে থাকা নারী যাত্রীদের স্বর্ণালংকার ও পুরুষ যাত্রীদের টাকা পয়সাসহ মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতদের অনুরোধ করার পরেও এক নারী যাত্রীর কান ছিড়ে রক্তাক্ত করে স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। আমরা আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্লান্ট পার হওয়ার পরই ডাকাতের কবলে পড়ি। এছাড়াও ১১ ও ১২ অক্টোবর ডাকাতদের ধাওয়া খেয়ে আমরা কোন রকম বেঁচে যায়।

ভৈরব ও অরুয়াইল নৌযান চলাচল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল বলেন, ১২ অক্টোবর নৌকা নিয়ে ভৈরব থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার পর পানিশ্বর এলাকায় ডাকাতির হামলার শিকার হয়েছি। পরে আমরা তিন চারটি নৌকা এক সাথে হয়ে অরুয়াইলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যদিও আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি তবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। ইতিমধ্যে গত ২/৩ মাসে ২০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এই কয়েকদিনে প্রায় শতাধিক মোবাইলও লুট হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে ভৈরব মোকামের ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, আমি বিভিন্ন কাঁচামাল অরুয়াইলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু অরুয়াইলগামী মাঝিরা ধর্মঘট করেছে। ডাকাতির ভয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছে। আমি ৫০০ টাকা খরচের মালামাল ১৫শ টাকা খরচ করে অরুয়াইল পাঠিয়েছি।

মসলা ব্যবসায়ী কবীর ও ভূসি ব্যবসায়ী আব্দুল বাসেদ বলেন, নদী বন্দর ভৈরব থেকে নৌ পথে ৭৫% মালামাল সরবরাহ করা হয়। ভৈরব থেকে অরুয়াইলের পথে বেশির ভাগ মালামাল নৌপথে পাঠানো হয়। কিন্তু ডাকাত আতঙ্কের কারণে বন্ধ রয়েছে অরুয়াইলের পথে নৌ চলাচল। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছি। প্রতিদিন ভৈরব ঘাট দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমরা ব্যবসায়ীরা না খেয়ে থাকতে হবে।

অরুয়াইলের যাত্রী আকবর আলী মেম্বার বলেন, আমাদের বাড়িতে যেতে সহজ পথ নৌ পথ। সড়ক পথে দীর্ঘ সময় লাগে ও হয়রানীর শিকার হতে হয়। নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। এদিকে ডাকাত আতঙ্কে নৌ পথে চলাচল করতে পারছি না। সরকার ও প্রশাসনের নজরদারী কামনা করছি।

এ বিষয়ে নৌ-ঘাটের ইজারাদার খোকা মিয়া বলেন, নৌকার মাঝিরা আমার কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছে। ডাকাতি প্রসঙ্গে আমি আশুগঞ্জ ও ভৈরব নৌ-পুলিশকে অবগত করেছি। ডাকাতির জন্য ভৈরব থেকে অরুয়াইলের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে ভৈরব নৌ-থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন বলেন, মাঝিদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের নৌ-পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। মাঝিদের নৌকা নিয়ে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রæতই এর সমাধান করতে পারবো।

(এসএস/এএস/অক্টোবর ১৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test