E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বাফেলো ওয়াল দিয়েও রক্ষা হয়নি ৭টি গুদাম

হালুয়াঘাটে পাহাড়ি ঢলে পানির নিচে ২০০ টন চাল

২০২৪ অক্টোবর ০৯ ১৮:৩৮:৩৮
হালুয়াঘাটে পাহাড়ি ঢলে পানির নিচে ২০০ টন চাল

নিহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট খাদ্য গুদামে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে ভিজে ক্ষতির উপক্রম হয়েছে কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০০ টন চাউল। গুদামের দরজার সামনে শক্তিশালী বাফেলো ওয়াল দিয়ে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের গতি এ্যানিমেশন সিনেমাকে হার মানায়। এটি ছিলো ময়মনসিংহ বিভাগের স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ পাহাড়ি ঢল। এর পরও গুদাম ইনচার্জ সঞ্জয় মোহন দত্ত লোকজন নিয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে রক্ষা করেন কোটি কোটি টাকার সরকারি চাল। শুক্রবার সন্ধ্যার এ ঘটনার সময় পানির উচ্চতা ছিলো ৭ ফুটের কাছাকাছি। একেক করে ভেঙে যায় ৭ গুদামের ১৪টি বাফেলো ওয়াল। এর মধ্যে একটি হাজার এবং ৬টি ৫০০ টনের গুদাম।

জানা গেছে , পাহাড়ি ঢলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪, ৫ ও ৬ নম্বর গুদাম। এর কোনোটা দুই লেয়ার এবং কোনোটা দেড় লেয়ার পানিতে তলিয়ে যায়। কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২, ৩ ও ৭ নম্বর গুদাম। পুরোপুরি রক্ষা পায় ১ নম্বর গুদাম। এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ৭ নম্বর গুদামে ৭৮ টন বোরো ধান ও প্রায় ২৫ হাজার খালি বস্তা, ৫০০ টনের ১ নম্বর গুদামে প্রায় ৪০ টন গম ও ২৫০ টন চাল এবং ৩ নম্বর গুদামে ২৩ হাজার খালি বস্তা মজুত ছিলো। ৫টি গুদামে ২৬ হাজার ৫০০ টন বোরো চাল মজুত ছিলো বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে বাতিল করা হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে কর্মরত খাদ্য অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি।

ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম জানান, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়। খামালের ওপর থেকে শুকনো চাল সরানোর কাজ শেষ হলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। বুধবার এ খবর লেখার সময় পর্যন্ত গুদামের ভেজা চাল আলাদা করার কাজ চলছিলো। এরই মধ্যে প্রাণান্ত চেষ্টায় গুদাম থেকে পানি ও ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। দিনরাত নিরলস কাজ করছেন গুদাম ইনচার্জ, অন্য স্টাফ, নিয়মিত শ্রমিক ছাড়াও অতিরিক্ত শ্রমিক। তাদের সহযোগিতা করছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হাসান আলী মিয়া।

অপরদিকে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ক্ষতিগ্রস্ত হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১২৫০ টন চাল ডেলিভারী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার পর্যন্ত ৭৫০ টন চাল খাদ্যবান্ধব ডিলারদের কাছে ডেলিভারীর জন্য পুষ্টি মিলে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে আরো ৩০০ টন চাল ডেলিভারী দেওয়ার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১২৫০ টন চাল ডেলিভারী দেওয়া হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। হালুয়াঘাট ছাড়াও ধোবাউড়া ও ময়মনসিংহ সদরের খাদ্যবান্ধব কিছু ডিলার চালগুলো ডেলিভারী পাবেন।

পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেয়ে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগের পরিচালক মোঃ মাহবুবুর রহমান, ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল কাদের, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ এরশাদুল আহমেদ প্রমুখ ক্ষতিগ্রস্ত গুদাম পরিদর্শন করেন। অন্যদিকে সার্বক্ষণিক গুদামের কাজকর্ম মনিটরিং করছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল কাদের।

সূত্র জানায়, হালুয়াঘাট খাদ্য গুদামে থাকা ৭৮ টন বোরো ধান চাল বানানোর জন্য সোমবার স্থানীয় মেসার্স শাকিল অটো রাইস মিলে হস্তান্তর করা হয়। মজুত থাকা প্রায় ৪০ টন গম ময়দা বানানোর জন্য নান্দাইলের মেসার্স জনতা ফ্লাওয়ার মিলে সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে গত রবিবার থেকেই শুরু হয়েছে পানিতে ভেজা চালের বস্তা আলাদা করার কাজ। বস্তার সংখ্যা নির্ধারণ করার পর উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বড় কোনো রাইস মিলে নিয়ে চালগুলো শুকিয়ে খাবার উপযোগী করে দ্রুত ডেলিভারী দেওয়া হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

(এনআরকে/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test