E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

দলীয় প্রভাবে স্থবির ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড

২০২৪ অক্টোবর ০৮ ১৫:১৭:৩৩
দলীয় প্রভাবে স্থবির ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : নেই পর্যাপ্ত জনবল। নেই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব। এক সময়ের প্রাণবন্ত ও কোলাহল মুখর ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডটি এখন অস্তিত্ব রক্ষায় ধুকছে। মৃতপ্রায় এই সরকারি দপ্তরটিতে দীর্ঘদিন জনবল না থাকায় যেমন কাজে গতি নেই, তেমনি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও নেই বললেই চলে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় পার করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাহী প্রকৌশলীদের মারধর ও টেন্ডার না দেওয়ায় হুমকি ধামকীর কারণে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে এমন স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত ২০১৪ সালের পর থেকে কোন নির্বাহী প্রকৌশলী পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফকে মারধর করে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ভাতিজা শাহরিয়ার করিম রাসেল। সে সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। এই হামলা ও ভাংচুরের খবর বিদ্যুৎবেগে সারাদেশ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভীতি ও আতংক ছড়ায়। মূলত এ ঘটনার পর থেকে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে কোন নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করতে চাননি। আবার অনেক নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঝিনাইদহে শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও তারা ভয়ে ঠিকমতো অফিস করতে পারতেন না। তাই পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী প্রকৌশলী না থাকায় এ জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৬ বছরে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আহামরি কোন উন্নয়ন হয়নি। আবার যৎসামান্য হলেও দলীয় প্রভাব বিস্তার ও কর্মকর্তাদের হুমকি ধমকি দিয়ে সব কাজ আ’লীগের নেতারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। তাই এ ভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরটি।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলা অফিসের ১৪টি পদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ ১০টি শূন্য পদ ছিল। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নতুন একজন পদায়ন করেছেন। এছাড়া দুইটি সাব-ডিভিশন ও ৭টি সেকশন অফিসে মোট ৬৫টি পদের মধ্যে ৩৭টি পদে এখন কোন লোকবল নেই।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম জানান,'লোকবল না থাকায় কোন কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশাল ভূসম্পত্তি রক্ষা করতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। অপরদিকে কাজ না থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা সাব-ডিভিশন অফিসগুলো ভেঙ্গেচুরে গেছে। অফিসের জানালা দরজা ও মূল্যবান গাছ কেটে চুরি হয়ে গেলেও ঠেকানোর কোন লোক নেই।'

সার্ভেয়ার আব্দুল বাতেন জানান,'ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রায় ৭ হাজার একর জমি রয়েছে। কিন্তু লোকবল না থাকায় ৭০ থেকে ৮০ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। নদী ও সেচখাল দখল করে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত কোনো লোকবল নেই। হরিণাকুন্ডু, শৈলকূপা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সেচখাল এবং নদীর পাড় দখল করা হচ্ছে। এ ভাবে সরকারি সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে।'

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান,'দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সরকার তাকে ঝিনাইদহে নিয়োগ করেছেন। তিনি ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্জীবিত এবং শুন্যপদে লোকবল নিয়োগ করে আবারও প্রাণবন্ত করে তুলবেন বলে জানান।'

(এসই/এএস/অক্টোবর ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test