E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিকাশ এজেন্টকে গুলি করে টাকা ছিনতাই, ছিনতাইকারিকে পুলিশ সোপর্দ

২০২৪ অক্টোবর ০৬ ১৫:১০:২৮
বিকাশ এজেন্টকে গুলি করে টাকা ছিনতাই, ছিনতাইকারিকে পুলিশ সোপর্দ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বিকাশ এজেন্ট শাহ আলমকে গুলি করে ও তার বন্ধু অহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে জখম করে এক লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয় জনতা তিন ছিনতাইকারিকে ধাওয়া করে একজনকে বিদেশী পিস্তলসহ আটক করে গণধোলাইয়ের পর পুলিশে সোপর্দ করেছে।

শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্বনলতা গ্রামের শুশীলবাগের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকনের বাড়ির পিছনে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ি ও তার বন্ধুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গণধোলাইয়ের শিকার গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ির নাম মোঃ শাহ আলম (৩৬) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের মাটিকুমড়া গ্রামের নজির আলীর ছেলে। অপর আহত অহিদুল ইসলাম একই গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে।

আটককৃত ছিনতাইকারির নাম রবিউল ইসলাম হৃদয় (৩০)। সে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের পাইকাড়া গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে। তাকে পুলিশ পাহারায় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহ আলম ওরফে বাবলু জানান, নলতা বাজারে ফতেমা টেলিকম নামে মোবাইল বিক্রি, ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ ও নগদ এজেন্টের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ব্যবসায়ের সাত লক্ষাধিক ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এক সপ্তাহ আগে ব্রুনাই থেকে ফিরে আসা বন্ধু অহিদুলের সাথে একটি বাই সাইকেল নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। অহিদুলের কাছে বাই সাইকেল থাকলেও পিছনের ক্যরিয়ারে দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে বাম হাতে টাকার ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে তিনি অহিদুলের পিছনে পিছনে হেঁটে যাচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে তারা শুশীলবাগের সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের বাঁশবাগানের সামনে পৌঁছালে মুখে কালো কাপড় বাঁধা তিন ছিনতাইকারির মধ্যে একজন তার মুখে টর্চের আলো ফেলে। অপর দুইজন তার বন্ধু অহিদুলের মাথায় ও বাম হাতে লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়।

একপর্যায়ে ছিনতাইকারিরা তার হাতে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় তার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। একপর্যায়ে এক ছিনতাইকারি তার বাম হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। রবিউল ইসলাম হৃদয় তাকে লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুঁড়লে তা তার পেটের বাম পাশে লেগে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ সময় তার বন্ধু অহিদুল ছিনতাইকারি রবিউলকে ধাওয়া করে চিৎকার করলে সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী রেহেনা খাতুন ছিনতাইকারি রবিউলের মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করার একপর্যায়ে অহিদুল তাকে পিস্তলসহ ধরে ফেলে। তার কাছে থাকা ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা গেলেও এক লাখ টাকা পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা রবিউলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়িতে করে তাকে ও তার বন্ধু অহিদুলকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ও পরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, রবিউল ইসলাম বিদেশী পিস্তলসহ ধরা পড়ার সাথে সাথে পাইকাড়া গ্রামের বাবলু মোড়লের ছেলে আল আমিন ও শাহাদাৎ খাঁ’র ছেলে এসকেন্দার পালিয়ে যায়। দূরে অবস্থান করছিল বিদেশী পিস্তলের মালিক তালা উপজেলার মাছিয়াড়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল হালিম ওরফে পাখরা হালিম। পাখরা হালিমের নেতৃত্বে রবিউল ইসলাম, এসকেন্দার, আল আমিন, শওকত, শহীদুল ইসলাম, আনারুলসহ(ভ‚মিহীন সভাপতি) ৩০ জনেও বেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি আরিজুল ইসলাম ও ব্যবসায়ি আনারুল ইসলামের (মাছ) জবরদখলকৃত খলিষাখালির সরকারি ১৩১৮ বিঘা জমি, আটশত বিঘা গ্রামের সরকারি ১০০ বিঘা জমি ছাড়াও ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আবুল হোসেন পাড়ের কুমোরের চকের ৩০০ বিঘার মাছের ঘেরসহ চিংড়িখালি বৈরাগীর চকের বিভিন্ন মাছের ঘেরে লুটপাট চালিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে এই সন্ত্রাসীরা গত ১৪ সেপ্টেম্বর নোড়ার আল আমিন ও ২৩ সেপ্টেম্বর খলিষাখালি চরপাটার মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।

এ সময় ওই সন্ত্রাসীরা নোড়ার আবুল হোসেন, রাজু, রিয়াজ, ও খলিষাখালির সাইফুল, বাবলুসহ ৩০টির ও বেশি বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে। কমপক্ষে ১০জনকে কুপিয়ে জখম করে। ঘরছাড়া করা হয় প্রায় ১০০ পরিবারকে। ওই বাহিনীর সদস্যরা ২৮ সেপ্টেম্বর নোড়ার চকের এক হিন্দু বিধবা নারীকে গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদে খলিষাখালিতে বসবাসরত ভ‚মিহীন ও কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনকারিরা গত বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্প, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার শুরুতেই শনিবার আরিজুল ইসলামের পোষা সন্ত্রাসীরা গুলি করে শাহ আলম ওরফে বাবলুর বিকাশের টাকা ছিনতাই করে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ওই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. আসাদুজ্জামান জানান, শাহ আলমের বুকের বামপাশে লাগা গুলিটি বের করা হয়েছে। তিনি আশঙ্কামুক্ত কিনা, এখনি বলা যাচ্ছেনা। অহিদুল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বিদেশী পিস্তলসহ রফিকুল ইসলাম হৃদয়কে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তবে গণধোলাইয়ের শিকার রবিউল ইসলামকে পুলিশ পাহারায় কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় গুলিবিদ্ধ শাহ আলমের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন বাদি হয়ে ছিনতাই ও গুলি করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একইসাথে উপপরিদর্শক তাপস কুমার ঘোষল বাদি হয়ে রবিউল ইসলামসহ আরো অজ্ঞাতনামা দুই/তিন জনের বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত রবিউলের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে আরো একটি মামলা রয়েছে।

(আরকে/এএস/অক্টোবর ০৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test