E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে নিহতর ঘটনায়

৮ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে হত্যা মামলা

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৭:৫৪:৫২
৮ বছর পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে হত্যা মামলা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : জেলার মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর বালিয়াতলী এলাকার আমানতগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায় ২০১৬ সালের ৩১ মে ভোরে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন সেলিম হাওলাদার (৪০)। ওই ঘটনার আট বছরেরও অধিক সময় পর ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি কর্মী সেলিম হাওলাদারকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ভাই।

আজ শনিবার সকালে মামলার বাদি মোস্তফা হাওলাদার অভিযোগ করেন, সেলিম হত্যার প্রকৃত ঘটনা ধামাচাঁপা দেয়া হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে থাকায় মামলা দায়ের করতে পারেননি। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সেলিমের আতঙ্ক শুধু মুলাদীতে নয়; আশপাশের এলাকায়ও ছিলো। তার (সেলিম) বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা ছিল। বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পূর্বে সেলিমকে ধরিয়ে দিতে জেলা পুলিশ ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষনা করেছিলো।

সর্বশেষ আদালতে দায়ের করা এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে বিএনপি কর্মী সেলিম হাওলাদারকে হত্যার অভিযোগে নামধারী ও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে আনা হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই মোস্তফা হাওলাদার। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ ফেরদৌস জানিয়েছেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সুমাইয়া রেজবী মৌরি নালিশী অভিযোগ এজাহার হিসেবে রুজু করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য মুলাদী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার এজাহারে জানা গেছে, ২০১৬ সালে মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্ধীকে সমর্থন করে বিএনপি কর্মী সেলিম হাওলাদার। এতে এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়। নির্বাচনের পর ২০১৬ সালের ১ জুন সেলিম হাওলাদার ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে আসে। স্থানীয় লঞ্চঘাট থেকে সকালে বাড়ি ফেরার পথে সফিপুর গ্রামের ৪০-৪৫ জন দুর্বৃত্তরা তার (সেলিম) উপর হামলা করে। পরে সেলিমকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলে যায়। পথচারীরা সেলিমকে উদ্ধার করে মুলাদী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

যদিও তৎকালীন মুলাদী থানার ওসি মতিউর রহমানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যের সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের ৩১ মে ভোরে সেলিমকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার খোলামোড়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০ এর সদস্যরা। ওইদিন দুপুরে সেলিমকে মুলাদী থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত তিনটার দিকে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সেলিমকে নিয়ে বের হন। এসময় উত্তর বালিয়াতলী এলাকার আমানতগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে পৌঁছলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সেলিমের সহযোগিরা তাকে (সেলিম) ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশের ওপর গুলি ছোঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে সেলিম পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে মুলাদী থানার এসআই ফারুক হোসেন, এসআই কমল ও কনেস্টবল পারভেজ আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পাইপগান, চার রাউন্ড বন্দুকের গুলি, দুটি রামদা, দুটি লোহার রড ও দুটি বন্দুকের গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। সেলিমের বিরুদ্ধে ডাকাতি অপহরনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ১১টি মামলা রয়েছে। পরবর্তীতে সেলিমের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়।

শনিবার সকালে নিহত সেলিমের ভাই ও মামলার বাদি মোস্তফা হাওলাদার বলেন, ইউপি নির্বাচনের জেরধরে বন্দুক যুদ্ধের নামে সেলিমকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাঁপা দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে তিনি দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করায় মামলা করতে পারেননি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাড়ি ফিরে তিনি আদালতে ভাই হত্যার বিচার দাবি করে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় অভিযুক্তদের স্বজনরা জানিয়েছেন, এতোবছর পর বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নেমেছে সেলিমের স্বজনরা। এখন তারা সেলিমকে বিএনপির কর্মী বানিয়ে তাকে (সেলিম) হত্যা করার অভিযোগ এনেছেন। তারা আরও বলেন, মামলার বাদি মোস্তফা হাওলাদারের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা থাকায় সে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। সেইসাথে যাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে তাদের অনেকেই কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নেই। অনেকে চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিনা অপরাধে কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। তদন্তে যা আসবে সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test