E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জামাই-শ্বশুরের ‌‘রিকশা চোর সিন্ডিকেট’

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০ ১৮:২৯:৪৬
জামাই-শ্বশুরের ‌‘রিকশা চোর সিন্ডিকেট’

একে আজাদ, রাজবাড়ী : চুরি করে আনা রিকশার যন্ত্রাংশ খুলে রাখা হতো বসতবাড়ির কক্ষে। পরে সুযোগ বুঝে তা বিক্রি করতো চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা। স্থানীয়দের হাতে আটক দুই চোরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় এমন একটি কক্ষের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। আটক করেছে অভিযুক্ত মূলহোতাকে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোনাউল্লা ফকির পাড়ায় এ কক্ষের খোঁজ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, দুই মেয়েজামাই আলম ও আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়িতে চোর সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ছিলেন সোনাউল্লা ফকির পাড়ার বাসিন্দা বেলায়েত মণ্ডল। বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি করে এনে রাখতেন বাড়িতে। পরে যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করতেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী যদু ফকির পাড়ার আজাদ সরদারের বাড়িতে রিকশা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে স্থানীয় দুই চোর রহিম ও তারা ফকির। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা চক্রের মূলহোতা বেলায়েতের নাম বলেন। শুক্রবার সকালে বেলায়েতের বাড়িতে গিয়ে রিকশার যন্ত্রাংশের গোপন কক্ষ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ভিড় জমান ভুক্তভোগী অনেকেই।

ভুক্তভোগী আজাদ সরদার বলেন,‘বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে আমার বাড়িতে রিকশা চুরি করতে আসে স্থানীয় দুই চোর রহিম ও তারা ফকির। এ সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা চক্রের মূলহোতা বেলায়েতের নাম বলেন। শুক্রবার সকালে আমরা বেলায়েতের বাড়িতে গিয়ে রিকশার যন্ত্রাংশের গোপন কক্ষ দেখতে পাই। এ সময় বেলায়েতের দুই মেয়েজামাই আলম ও আলমগীর কৌশলে পালিয়ে যায়। তবে বেলায়েতকে আটক করে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়।’

বেলায়েতের বাড়ির গোপন কক্ষে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি চোরাই রিকশার যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন,‘বেলায়েত ও তার চক্রের লোকজন গভীর রাতে রিকশা চুরি করে এনে এক ঘণ্টার মধ্যে সব যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে ফেলতো। পরে তা বিক্রি করতো। তারা খুব সুকৌশলে কাজগুলো করতো। প্রতিবেশীরা কেউই এতদিন বিষয়টি বুঝতে পারেনি।’

খানখানাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন,‘এক মাস আগে খানখানাপুর থেকে আমার রিকশা চুরি হয়। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। চোর ধরার খবর পেয়ে এখানে এসে গোপন ঘরে আমার রিকশার যন্ত্রাংশ দেখতে পাই।’

মো. সেলিমের মতো অন্তত ২০ জন রিকশাচালক বেলায়েতের বাড়িতে এসে গোপন কক্ষে তাদের রিকশার যন্ত্রাংশ শনাক্ত করেছেন। সবাই তাদের রিকশা ফেরত পাওয়ার দাবির পাশাপাশি বেলায়েত ও তার চক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে, নিজ এলাকায় এমন চোর সিন্ডিকেট দেখে হতবাক দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘দৌলতদিয়া ইউনিয়ন তো দূরের কথা; গোয়ালন্দ উপজেলার কোথাও আমি কোনদিন এমন ভয়াবহ চোর সিন্ডিকেট দেখিনি। আমি এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘চোরচক্রের মূলহোতা বেলায়েত মণ্ডলকে আটক করা হয়েছে। তার বাড়ির গোপন কক্ষ থেকে চোরাই রিকশার যন্ত্রাংশগুলো জব্দ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী কেউ তার চুরি হওয়া রিকশা বা যন্ত্রাংশের যথাযথ প্রমাণ দিতে পারলে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার রিকশা বা যন্ত্রাংশ বুঝিয়ে দেয়া হবে।’

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test