E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘গুলিতে আমার ডাইন হাতটা অবশ অইয়া গেছে চিকিৎসা করবার টেহা নাই’

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৭:৫৮:৫৩
‘গুলিতে আমার ডাইন হাতটা অবশ অইয়া গেছে চিকিৎসা করবার টেহা নাই’

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : গুলিতে আমার ডাইন হাতটা অবশ অইয়্যা গেছে। চিকিৎসা কেমনে করবাম, চিকিৎসা করবার মত হাতে আর কোন টেহা পয়সা নাই- এ কথা গুলো বলছিলেন কেন্দুয়া উপজেলার ১২ নং রোয়াইবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের পাথাইরকোনা গ্রামের মৃত মুখসুদ আলীর ছেলে কৃষি শ্রমিক মো: আলমগীর মিয়া। আলমগীর মিয়া এক সন্তানের জনক। শ্রম বিক্রি করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েক মাস আগে এলাকায় কোন কাজ না থাকায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চলে যান নরসিংদী জেলার শিবপুর থানা এলাকায়। সেখানে ইটাখলা মোড়, মুন্সির হাট চরে ভাড়া করা বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন।

গুলিবিদ্ধ আলমগীরের খোঁজ খবর নিতে বৃপস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি পাথাইরকোনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিনি অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছেন। ডানহাত অবশ থাকায় এই হাতে তিনি কোন কাজ করতে পারছেন না।

পুলিশের গুলি কিভাবে বিদ্ধ হলো একথা জানতে চাইলে কৃষি শ্রমিক আলমগীর বলেন, এ ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ জুলাই রাত অনুমান ৮ টার দিকে। তিনি জানান, ওই দিন দুপুর থেকে ইটাখলা মোড় এলাকায় পুলিশের সাথে ছাত্র-জনতার বারবার সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন লোক আহত ও নিহত হয়। চোখের সামনে পুলিশ মানুষকে গুলি করে মারছে। এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখার পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আলমগীর ও তার ২০/২৫ জন সঙ্গী নিয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষে আন্দেলনে অংশ নেন।

আলমগীর বলেন, নিজের চোখে দেখতেছি যেভাবে মানুষ গুলি করে মারতাছে তাতে আমরার বাইচ্চিয়া থাইক্কিয়া লাভ কী? তখন স্টীলের পাত সংগ্রহ করে বুকের মধ্যে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নেমে যান আন্দোলনে। ৮ টার দিকে ডান হাতের কাধে গুলি বৃদ্ধ হন আলমগীর। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তার অবস্থা আশংকা জনক দেখে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু প্রচুর রক্ত করণ হতে থাকলে সেখানেও তাকে ভর্তি করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন।

আলমগীরের বড় বোন নাজমা আক্তার জানান, গুলিতে আহত হওয়ার খবর পেয়ে আমি ও আমার ছেলেরা প্রাইভেট এম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভাইকে ভর্তি করি। সেখানে বারবার আমাদের কাছে জানতে চায় আমার ভাই আলমগীর নরসিংদী কারাগারে হামলা করেছে কিনা। কিন্তু না করার পরও বারবার জিজ্ঞাস করতে থাকায় গ্রেফতারের ভয়ে সেখান থেকে আমার ভাই পালিয়ে যায়। আমার অপর এক ভাইয়ের সহযোগিতায় ২১ জুলাই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে লালবাগ থানা এলাকায় ইসলামবাগে ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়।

আলমগীর জানান, ভাইয়ের বাসায় ১২ দিন ছিলাম। সেখানে ভয়ে ভয়ে দিন কেটেছে। কোন ভালো চিকিৎসা নেওয়া যায়নি। সেখানেও বলা বলি হতে থাকে গুলিবিদ্ধ একজন লোক ইসলামবাগ এলাকায় থাকে। পরে সেখান থেকে পালিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার পুরুরা এলাকায় বোনের বাসায় আশ্রয় নেই। বেশ কিছুদিন এখানে থাকার পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তন হয়। এর পর থেকেই পরিবেশ অন্য রকম হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এখনও আমার হাত সম্পূর্ণ সুস্থ না। চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার মত ঋণ করেছি। এখন হাতে আর কোন টাকা পয়সা নেই। আমার ডাইন হাতটা অবশ হইয়া গেছে। সব সময় চিনচিন করে ব্যথা করে। আমার ঋণ পরিশোধ ও হাতের চিকিৎসার জন্য সরকারের নিকট আর্থিক সাহায্য চাই।

আলমগীরের মা রহিমা খাতুন বলেন, আমার ছেড়া (ছেলে) দিন আনে দিন খায়। পুলিশের গুলি খাইয়া ডান হাতটা অবশ হইয়া গেছে। চিকিৎসা করতে দুই লাখ টাকার মত ঋণ করছে। এই টাকা কিভাবে দিবে এই চিন্তায় সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে। তাছাড়া হাত অবশ থাকায় কাজও করতে পারে না। আমি মা হিসাবে সরকারের কাছে আমার পুতের (ছেলের) সংসারডারে বাঁচানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test