E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আন্দোলনে নিহত মাদারীপুরের তাওহীদ-রোমান 

ময়না তদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনে দুই পরিবারের আপত্তি

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১২ ১৮:৪৫:২৪
ময়না তদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনে দুই পরিবারের আপত্তি

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তাওহীদ সন্ন্যামাত ও রোমান বেপারী নিহতের ঘটনার মামলা দায়ের পর লাশ ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলনে গেলে দুই পরিবারই আপত্তি জানান। পরে পরিবারের বাধার মুখে ফিরে আসেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈম সরকার মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের তাওহীত সন্ন্যামাতের কবর থেকে লাশ উত্তোলনে আসেন। এতে আপত্তি জানান পরিবারের সদস্যরা। বাঁধার মুখে ফিরে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যরা।

অপরদিকে মাদারীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম আদালতের নির্দেশে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা এলাকায় নিহত রোমান বেপারীর বাড়িতে যান। নিহত রোমান বেপারীর মা-বাবা কোন অবস্থাতেই লাশ উত্তোলন করতে দিবে না বলে জানান। বাধার মুখে সেখান থেকেও ম্যাজিস্ট্রেট চলে আসেন।

নিহত রোমানের মা রিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের লাশ কবর থেকে উঠাতে দিবো না। আমার ছেলে মারা গেছে, তাতে আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। আমাদের টাকা-পয়সা, কোনকিছুই দরকার নেই।

নিহত রোমানের বাবা ওমর আলী বেপারী বলেন, এই লাশ কবর থেকে উঠানো হলে, মা-বোন, সন্তানসহ অন্যরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। কষ্টে আরেকটি দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই, প্রশাসনকে অনুরোধ করলে তারা বাড়ি থেকে চলে যান।

নিহত তাওহীদের মা রেশমা বেগম বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু তাওহীদ মারা যাবার ঘটনায় মামলা হয়েছে, এটা আমরা জানিনা। তাই কবর থেকে লাশ উঠাতে দিবো না।

নিহত তাওহীদের ভাই আসাদ সন্ন্যামাত বলেন, ভাই হারিয়েছি। এখন তো আর ভাইকে ফিরে পাবো না। লাশ কবর থেকে উঠালে পুরো পরিবারে ভেঙ্গে পড়বে। আমরা মামলার বাদী হলে বিষয়টি ভেবে দেখতাম। কিন্তু এখন কোন অবস্থাতেই লাশ তুলতে দিবো না।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বলেন, বিষয়টি আদালতে অবগত করা হবে। আদালতের সিদ্ধান্তেই নেয়া হবে পরবর্তী ব্যবস্থা। পরিবারের অনুমতি না পেলে লাশ কবর থেকে উত্তোলনের কোন সুযোগই নেই।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাঈম সরকার বলেন, তাওহীদ সন্ন্যামাতের পরিবারকে কয়েকঘন্টা বুঝিয়েও ব্যর্থ হয় প্রশাসন। পরে সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও আদালতের বিচারকের সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগদী এলাকায় গুলিতে নিহত হন মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সালাউদ্দিন সন্ন্যামাতের ছেলে তাওহীদ সন্ন্যামাত (২১) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা গ্রামের ওমর আলী বেপারী ছেলে রোমান বেপারী (৩২)।

এই ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট নিহত পিকআপ চালক রোমান বেপারীর স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

অপরদিকে নিহত রাজমিস্ত্রী তাওহীদ সন্ন্যামাত হত্যার ঘটনায় মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন।

এই মামলার আসামিরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খান, মাদারীপুর-৩ আসন ও ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাদারীপুর-৩ আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান, শাজাহান খানের ছোট ভাই ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান, শাজাহান খানের আরেক ভাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খান যাচ্চু, মাদারীপুরের সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ।

(এএস এ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২২ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test