E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভুয়া খতিয়ানে ১৩০ কোটি টাকার খাসজমি দখল, প্লট আকারে বিক্রির অভিযোগ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৮:৫৮:১৮
ভুয়া খতিয়ানে ১৩০ কোটি টাকার খাসজমি দখল, প্লট আকারে বিক্রির অভিযোগ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : রাজনৈতিক দল ভিন্ন হলেও দখলে তারা এক। ভুয়া খতিয়ান খুলে সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে সরকারের প্রায় ২৬ একর খাসজমি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় কতিপয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। বেদখল হওয়া জমির বাজারমূল্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা।

ওইসব জমিতে ইতোমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এমনকি প্লট আকারে বিক্রির মাধ্যমে হচ্ছে হাতবদল। বিষয়টি জানার পর নড়েচড়ে বসেছে উপজেলা প্রশাসন। ঘটনাটি নদীবেষ্টিত জেলার মুলাদী উপজেলার চরডিক্রি মৌজার হিজলা-মুলাদী সংযোগ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্লট ক্রেতা শনিবার সকালে জানান, বাড়ি করার জন্য ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি চার শতক জমি ক্রয় করেছেন। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, যথাযথ কাগজ না থাকায় রেজিস্ট্রি করা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে তিনি জমি ভোগদখল করছেন। ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে তিনি ভিষন চিন্তিত।

উপজেলা ভূমি কার্যালয় এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরডিক্রি মৌজার হিজলা-মুলাদী সংযোগ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৩৫ একর খাসজমি রয়েছে। এসএ জরিপের আগে নয়াভাঙনী নদীর অববাহিকার এসব জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ২০২২ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কতিপয় নেতাকর্মীরা তাদের পূর্ব পুরুষের নামে ভুয়া খতিয়ান খুলে প্রায় ২৬ একর খাসজমি দখল করে নিয়েছেন।

মুলাদী বন্দরের ব্যবসায়ী মোঃ আহসান হাবিব বলেন, ২০২২ সালে একটি চক্র সরকারি জমি দখলের পায়তারা শুরু করেন। ওইবছর ভূমি কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় চক্রটি ১৯৭৫ সালের ২৯৩ নম্বরের মিসকেস দেখিয়ে অনেকগুলো খতিয়ান তৈরি করে। ওইসব খতিয়ানগুলোতে উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী কতিপয় নেতাকর্মীদের পূর্ব পুরুষদের নাম রয়েছে।

অবৈধভাবে দখল করা সরকারি খাসজমি হাতবদল করা হচ্ছে জানিয়ে উপজেলার তেরচর গ্রামের তৌহিদুর রহমান বলেন, এসব জমি রেজিস্ট্রি না হওয়ায় ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ হস্তান্তর কিংবা স্ট্যাম্পে লিখে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বালু ভরাট করে প্লট আকারেও বিক্রি করা হচ্ছে।

বেদখল হওয়া খাসজমির বাজার মূল্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকারও বেশি দাবি করে গাছুয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, চরডিক্রি মৌজার প্রায় ২৬ একর জমি ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে দখল করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর খতিয়ান বাতিল ঘোষণাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভুয়া খতিয়ান বাতিল ঘোষণার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাবরে পাঠানো হয়েছে। একইসাথে বেদখল হওয়া সরকারি জমি উদ্ধারের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।

মুলাদী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরাগ শাহা বলেন, আমি কয়েকদিন আগে এ উপজেলায় যোগদান করেছি। তাই ভুয়া খতিয়ান খোলা কিংবা সরকারি জমি দখলের বিষয়টি জানা নেই। তবে কেউ অবৈধভাবে জমি দখল করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, গত ১৬ আগস্ট সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম ভুয়া খতিয়ানে জমি দখলের বিষয়টি জানতে পারেন। অবশ্য এর তিনদিন পর তিনি বদলী হয়েছেন। নতুন সহকারী কমিশনারের সাথে পরামর্শ করে সরকারি জমি উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test