E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীতে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল করে মিল নির্মাণের অভিযোগ

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৮:৩৪:৪৭
রাজবাড়ীতে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল করে মিল নির্মাণের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ী জেলা শহরের কাজিবাঁধা এলাকায় ৮ একর ৯২ শতাংশ জমির ওপর ২০১৫ সালে নির্মিত হয় জেলার শতভাগ উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গোল্ডেশিয়া জুটমিল। এই মিলটির মালিকানায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী। অভিযোগ উঠেছে সাধারণ মানুষের বেশ কিছু জমি দখল করে নির্মাণ করা হয় মিলটি।

ক্ষমতার পালাবদলের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন এসব ভুক্তভোগীরা। দখল হওয়া জমি ফেরত পেতে রাজবাড়ীতে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প, রাজবাড়ী প্রেসক্লাব, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কাজিবাঁধা গোল্ডেশিয়া জুট মিল তৈরির সময় অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনের জমি দখল করে জুটমিল নির্মাণ করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ইরাদত আলী। হত্যা, হামলা, মামলার ভয়ে তখন কিছু বলতে পারেননি ভুক্তভোগীরা। নিরুপায় হয়ে তারা মুখ বুঝে তখন সব সহ্য করেছেন। সরকার পতনের পর তাদের দখল হওয়া জমির ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তারা। এখন অবৈধভাবে দখল হওয়া জমিগুলো ফেরত পেতে চান ভুক্তভোগীরা। জমি ফিরে পেতে তারা বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৫ সালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের কাজিবাঁধা এলাকায় গোল্ডেশিয়া জুট মিলের নির্মাণকাজ শুরু করেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী ইরাদত আলী। ৮ একর ৯২ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা জুটমিলটির এক তৃতীয়াংশই অন্যের জমি জোরজবরদস্তি করে দখল করে নিমার্ণ করা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন কাজী ইরাদত আলী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, হত্যার হুমকি দিয়ে জমিগুলো দখল করে। জমির ব্যাপারে যারা মুখ খুলেছিল তখন তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের জেল খাটানো হয়। মিলটি নির্মাণের পর উৎপাদন শুরু করে ২০১৭ সালে। মিলে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান ছিল। হঠাৎ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বৃত্তরা জুটমিলে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে ধরিয়ে দেয় আগুন। ফায়ার সার্ভিস সঠিক সময়ে যেতে না পারায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো মিলে। মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় জুটমিলটি।

জুট মিল বর্ধিতকরণকালে অবৈধভাবে ভূমি দখলের অভিযোগ করেছেন কাজিবাঁধা গ্রামের আব্দুস ছালাম শেখ। তিনি বাদী হয়ে গত ১৪ আগস্ট ৫৪ জন স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র রাজবাড়ীর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পসহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও প্রেসক্লাবে জমা দিয়েছেন।

আব্দুস ছালাম শেখ বলেন, আমাদের আবাদকৃত জমি ছিল। এক সময় সেখানে পেঁয়াজ, পাট, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হতো। জুটমিল তৈরির সময় কাজী ইরাদত আলী আমার জমি জোর করে দখল করে নিয়ে নেয়। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমিসহ অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরিত অনেকের জমি রয়েছে। যা কাজী ইরাদত আলী ও তার লোকজন অবৈধভাবে দখল করেছিল। আমরা এতদিন ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। সরকার পরিবর্তন হয়েছে তাই আমরা এখন কথা বলতে পারছি। এখন আমাদের জমি আমরা ফেরত চাই।

ভুক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজী ইরাদত আলী জুট মিল তৈরির সময় আমার মায়ের জমি দখল করে নেয়। এগুলো নিয়ে আমরা মামলামকদ্দমা করেছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। কাজী সাহেব আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তিনি জমির ব্যাপারে কিছু করেননি। গত ৫ আগস্ট মিলে কারা আগুন দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। এখন যদি কাজী সাহেব মিলটি চালু করতে চায় তাহলে আমাদের জমির অংশ ফেরত দিয়ে তারপর মিল করুক। এই জমির কারণে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের ৪ ভাইকে তারা জেলে পাঠিয়েছিল। স্থানীয়রা পরে আমাদের জামিনে বের করে আনে।

তবে জমি দখলের কেউ মিলের কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ইরাদত আলী অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।

গোল্ডেশিয়া জুট মিলের পরিচালক (প্রশাসন ও বাণিজ্য) পদের দায়িত্বে ছিলেন জুট মিলের মালিক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীর পুত্রবধূ আফসানা নওমী তাকিনা। তিনি মিলটির প্রশাসনিক কাজ দেখভাল করতেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তরা আমার শ্বশুরের বাড়িসহ জুট মিলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আগুন দিয়েছে।ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক কষ্ট করে ব্যাংক লোন করে জুটমিলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। রাজবাড়ীর মানুষের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে মিলটি নির্মাণ করা হয়। কোনোদিন চিন্তাও করিনি জুটমিলটি পুড়িয়ে দেবে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তেমনি কর্মসংস্থান হারিয়েছেন হাজারের বেশি শ্রমিক। ইন্সুরেন্স পাওয়ার বিষয়টি এখন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মিলটি চালুর চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ৩০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। পুনরায় মিল চালুর ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছি। কবে নাগাদ চালু করতে পারব বলতে পারছি না।

জমি দখলের বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, মিলটি বর্ধিত করণে কিছু জায়গা কেনা হয়েছিল। অনেকের টাকা দেওয়া হয়েছে, কিছু টাকা বাকি রয়েছে। প্রত্যেকের টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। কারো জমি জোরপূর্বক নেওয়া বা দখল করার অভিযোগ মোটেও সত্য নয়।

সব মিলিয়ে জুটমিলের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি মিল কর্তৃপক্ষের। মিলে প্রায় ১৫০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান ছিল।

জুটমিলের ড্রয়িং বিভাগের শ্রমিক মৌসুমি খাতুন বলেন, আমরা এই মিলে কাজ করে সংসার চালাতাম। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে বেতন পেতাম। বেতনের টাকা দিয়ে কিস্তি দিতাম, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতাম, খাওয়া দাওয়া করতাম। কিন্তু মিল পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে আমাদের কোন কাজ নেই। এখন আমরা কিভাবে সংসার চালব। আর কীভাবে কিস্তি দেব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ভুক্তভোগী জমির মালিকরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগটি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test