E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল পলাতক

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৮:১৮:৫৭
সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল পলাতক

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীতে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ উঠেছে।

একটানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা ধরনের অবৈধ কাজ ও অন্যায়ের সঙ্গে তারা নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।

এতদিন মুখ না খুললেও এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

ক্ষমতার দাপটে তিনি নানা ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন। হত্যা, নির্যাতন, দখলবাজি, অর্থপাচারসহ নানান ধরনের অন্যায়ের অভিযোগ রয়েছে বাবা ছেলের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তাদের সেই ত্রাসের রাজত্বের অবসান হয়েছে।

১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার টিকিটে জিল্লুল হাকিম ৫ বার সংসদ সদস্য হন। এই সুযোগে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সন্ত্রাস ও ক্যাডার বাহিনী। নিজ এলাকায় চালিয়েছেন হরিলুট। বাবা ছেলের ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, খুন হামলা ও মামলা থেকে রেহাই পাননি শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এমন কি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও।

অভিযোগ আছে, জিল্লুর ও মিতুলের নির্দেশে তাদের ক্যাডার বাহিনীর হাতে তার নিজেরই অনেক নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন এবং অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময় জিল্লুল হাকিম মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য মনোনয়ন কিনতে পারছিলেন না। অবৈধ উপায়ে এখন তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। ক্ষমতা ব্যবহার করে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন আলিশান মার্কেট। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই পলাতক আছেন জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উপরে ভর করে এতো দূর আসলেও দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করতেন তিনি। স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে একাধিক বার প্রার্থী দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে তাদের সমর্থন করেছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীকেও এলাকাচ্যুত করে রেখেছিলেন তিনি। এখন বাবা-ছেলের পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন রাজবাড়ী-২ আসনের বাসিন্দারা। তাদের নির্যাতনে এলাকা ছাড়া মানুষ ৫ আগস্টের পর থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য জিল্লুল মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ার উপক্রম হয়েছিল। সেই তিনিই এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। অভিযোগ রয়েছে স্কুল কলেজ ও মাদরাসার দফতরি নিয়োগ থেকে শুরু করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিস থেকে ১৫ শতাংশ করে কমিশন নিতেন তিনি। সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে অনেক যুবকের কাছ থেকে অর্থ নিয়েও করেছেন প্রতারণা। তাদের চাকরি তো দূরের কথা টাকাও ফেরত দেননি।

পাট্টা ইউনিয়নের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান মহির অভিযোগ করে বলেন, জিল্লুল হাকিমের নির্দেশে নির্বাচন না করার কারণে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাকে আঘাত করে। তার ভাই ডাবলুর নেতৃত্বে আমাকে মেরে আমার পা ভেঙে দিয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর। আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরপর থেকে আমি এখনো অসুস্থ। পাংশা বাজার থেকে তারা আমার ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। এখন সময় এসেছে এই অন্যায় অত্যাচারের আমি বিচার চাই। জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলেসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীদের কঠিন শাস্তি হোক।

পাংশা বয়রাট মাজাইল ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসার সহকারী একটি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে জিল্লুল হাকিম অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে চায়। আমি সেই কাগজে স্বাক্ষর না করার কারণে আমাকে অফিসে আটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে আমার বেতন ভাতা বন্ধ করে রেখেছে। আমি তার কাছে বছরের পর বছর ঘুরেছি। এটা নিয়ে কোনো সমাধান করেনি। বরং যখনই তার কাছে গিয়েছি তখনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও তার ছেলের ক্যাডার বাহিনী আমার ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। ১১ বছর ধরে আমার পরিবার নিয়ে আমি খুব অসহায়ভাবে মানবতার জীবনযাপন করেছি। আমি জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিম ও তাদের ক্যাডার মাস্তানদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

পাংশা বাগদুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক, এস এম আতাউল্লাহ শামীম রহমান অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক রোষানলে আমার ওপর হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য ষড়যন্ত্র করে এবং ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট রাতে জিল্লুল এবং তার ছেলের নেতৃত্বে আমাকে হত্যা করার জন্য তাদের মোটরসাইকেল বাহিনী এসে আমাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। আমার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। একমাত্র আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। এখন সময় এসেছে এই সন্ত্রাসী বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে আমি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি চাই, এদের অতি দ্রুতই শাস্তির আওতায় আনা হোক। জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিম তাদের ক্যাডার বাহিনীদের গোপনে অস্ত্র দিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি। তবে যেসব হত্যাকাণ্ড জিল্লুল ও তার ছেলে করেছে এ জন্য তাদের দুজনের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া দরকার।

পাংশা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমার ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়। এ হামলার নির্দেশদাতা জিল্লুল ও তার ছেলে মিতুল। আমি এ হামলার বিচার চাই। আর এ ঘটনার কারণেই আমার বাবা মারা গেছেন। বর্তমান সরকারের কাছে আমার দাবি এই সন্ত্রাসী বাবা ও তার ছেলেকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। এ কারণে আমার পরিবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো তাদের ভয়ে রয়েছে আমার পরিবার, কারণ তাদের অসংখ্য ক্যাডার বাহিনী আছে। আমি এখনো ঠিক মতো হাঁটতে পারি না, আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমার শরীরে এখনো বারো জায়গায় ভাঙা আছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের বাড়ি পাংশায় গেলে বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তারা বর্তমানে পলাতক রয়েছে।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test