E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীতে হঠাৎ পাসপোর্ট করার হিড়িক

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০২ ১৯:২৮:০২
রাজবাড়ীতে হঠাৎ পাসপোর্ট করার হিড়িক

একে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হঠাৎ করে নতুন পাসপোর্ট করার হিড়িক পড়েছে। বিগত দিনের তুলনায় পাসপোর্ট অফিসে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাসপোর্ট করতে আসছেন। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ আসছেন পাসপোর্ট করতে। এর আগে, একসঙ্গে এত মানুষের ভিড় পাসপোর্ট অফিসে কখনোই দেখা যায়নি। অতিরিক্ত এই সংখ্যক গ্রাহকের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।

চলতি আগস্ট মাসের গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাসপোর্ট অফিসের সামনে এবং সামনের রাস্তায় অস্বাভাবিক ভিড় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী গ্রাহক দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পাসপোর্ট করার জন্য।

আগে রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০টি আবেদন জমা পড়ত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক সাপ্তাহ পর থেকেই এর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। অতিরিক্ত গ্রাহকের কারণে তাই আবেদনের কাগজপত্র জমা নিলেও একই দিন ছবি তোলা কিংবা আগুলের ছাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। এ ছাড়াও পাসপোর্ট অফিসে জনবল কম থাকার কারণেও কিছুটা ভোগান্তি বাড়ছে।

জানা গেছে, নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশসহ ছবি তোলা হচ্ছে নতুন করে। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগছে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও আছে। অধিক সংখ্যক গ্রাহক আসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
সরজমিনে রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,পাসপোর্ট অফিসের মেইন ফটকের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দুই শতাধিক গ্রাহক। প্রাচীরের গা ঘেঁষে রয়েছে ছেলে-মেয়েদের আলাদা লাইন। গ্রাহকদের অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

পাসপোর্ট করতে আসা গোয়ালন্দের নগর রায়ের পাড়া গ্রামের গ্রাহক সুবোল বলেন, সামনে পূজা, পরিবার নিয়ে ভারতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছি।

নতুন পাসপোর্ট করতে আসা কালুখালীর বিধান সাহা বলেন, চিকিৎসার জন্য ভারত যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তাই নতুন পাসপোর্ট করতে এসেছি। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে এসেই দেখি লম্বা সিরিয়াল। কখন আবেদন জমা দিতে পারবো বুঝতে পারছি না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার সনজিৎ সরকার বলেন, আমার পড়ালেখা এখনো শেষ হয়নি। ঢাকায় স্নাতক পড়ছি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমার একটি পাসপোর্ট থাকা দরকার। তাই পাসপোর্ট করতে এসেছি। কিন্তু এত ভিড়, কল্পনার বাইরে।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. আবজাউল আলম বলেন, অসুস্থ, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন পাঁচটি বাই স্টেশনের মাধ্যমে ১০০ জনকে সেবা দেওয়া যায়। আর যদি রাত পর্যন্ত কাজ করা হয়, তাহলে ৪০০-৫০০ মানুষের সেবা দেওয়া সম্ভব। রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পদ রয়েছে আটটি। যার মধ্যে শূন্য রয়েছে তিনটি পদ। মাত্র পাঁচজন জনবল দিয়ে চারটি বাই স্টেশনের মাধ্যমে গ্রাহককে সেবা দিচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তিনি বলেন, পূর্বের পাসপোর্টে ভুল, গোপন নম্বর সংশোধনসহ একাধিক পাসপোর্ট করার ব্যাপারে আমরা সচেতন থেকে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে জনবলের এ চরম সংকট নিয়েও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে রাজবাড়ী পাসপোর্ট অফিস প্রায় ২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।

মো. আবজাউল আলম আরও বলেন, পুরো পাসপোর্ট অফিসে সিসি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক সচল রেখেছি। কোনো গ্রাহক বাড়িতে বসে সরকারি হোয়াটস্অ্যাপ নম্বরে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে থাকি। এ ছাড়াও ই-কিউ (ইলেকট্রনিক কিউ) টোকেন স্লিপ দেওয়া হয়ে থাকে। যাতে কেউ দালালের খপ্পরে না পড়ে। সেবাপ্রত্যাশী আমার রুমে এসেও সেবা নিতে পারবেন। আমি দালালমুক্ত রাজবাড়ী পাসপোর্ট অফিস উপহার দেব।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test