E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

অফিস সহকারি থেকে প্রধান শিক্ষক

দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবি নিয়ে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ 

২০২৪ আগস্ট ২৭ ১৯:০৩:৫০
দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবি নিয়ে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ 

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লে. অহিদুর রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবিতে ইউএনও অফিস অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় বিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে ইউএনও কার্যালয়ে ফেস্টুন ব্যানার নিয়ে অবস্থান করেন।

এর আগে সকাল ১০ টায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের স্লোগানে স্লোগানে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এদিকে অনিয়মের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছেন প্রধান শিক্ষক লে. অহিদুর রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লে. অহিদুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান সরকারসহ কতিপয় শিক্ষকরা মিলে বিভিন্ন অযুহাতে কয়েক লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, বিগত দিনের সরকারি ক্ষমতা ব্যবহারকারী দলীয় লোকদের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে নিয়োগ বানিজ্য, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিএনসিসির শিক্ষক থেকে অবৈধ্যভাবে প্রধান শিক্ষকে নিয়োগ। সাবেক সভাপতি লোকমান সরকারের যোগসাজেশে বিভিন্ন ভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা আত্মসাৎ করেন। বিদ্যালয় শিক্ষিকা তামান্না ম্যাডামের ৬ মাসের বেতন আত্মসাৎ করেন। বই পাঠ্যের টাকা ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। সহকারী শিক্ষক এনায়েতুল্লাহকে ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত ক্লাসের নামে ৬৮০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে প্রতি জনে ৭০০ টাকা করে দাবি করা হয়েছে। যা প্রতিমাসে রশিদ ছাড়া নেওয়া হয়েছে। এই টাকাও আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। প্রতি বছর ফরম ফিলাপের অতিরিক্ত টাকা। সরকারি নিয়ম অনুসারে (১) মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য ২ হাজর ১১০ টাকা বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ২১০ টাকা হলেও স্কুল থেকে দাবি করা হয়ে থাকে ৫ হাজার টাকা করে। এছাড়াও ডিএসএলাও গোপনে এলাও করে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরীফের নামে ছাত্রীদের শরীরে সম্পশ করা ও ছাত্রীদের প্রতি কুদৃষ্টি স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি লোকমান সরকারের দুর্নীতির কারনে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে অনেক বার প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল ও মানব বন্ধন হয়েছে। আমরা যারা আন্দোলনে যুক্ত আছি তাদের ভবিষ্যতে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং তাদের সাথে স্কুলে কোন রকম অনিয়ম করা যাবে না। আমরা স্কুলের স্বৈরাচারি, দুর্নীতি পরায়ণ, অযোগ্য প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের অপসারণ চাই।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য কহিনুর আহাদ চৌধুরী ও শফিক মিয়া বলেন, আমরা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকার পরও আমরা কোন হিসাব পায় না। প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এটা আমার এবং সভাপতির বিষয় কাউকে বলা যাবে না। আমরা বিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয় বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যালয়ে আছি। যতটুকু জেনেছি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারি হিসেবে যোগদান করেছিলেন। ১০ বছর যাবত তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক লে. অহিদুর রহমান জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। আমি ৩৮ বছর যাবত বিদ্যালয়ে আছি। বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে প্রধান শিক্ষক হয়েছে। আমার শ্বশুরবাড়িও ভৈরবে হওয়ায় কিছু দুষ্কৃতিকারীর ইন্দনে আমাকে বিদ্যালয় থেকে সরানে চেষ্টা করছে। আমি কোন অন্যায় অপকর্মের সাথে জড়িত না। আমার সব হিসাব সঠিক রয়েছে। যদি এখান থেকে যেতে হয় ছাত্র ছাত্রীদের মাধ্যমে অপমানিত হয়ে যাবো কেন। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে তা মেনে নিবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন জানান, কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীসহ অভিভাবকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা সুনিদ্রিষ্ট প্রমাণসহ যদি অভিযোগ দেন আমি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

(এসএস/এসপি/আগস্ট ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test