E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রত্যয় হয় জয়, না হয় মৃত্যু!

২০২৪ জুলাই ২৬ ২০:২১:১৪
নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রত্যয় হয় জয়, না হয় মৃত্যু!

তুষার বাবু, নেত্রকোণা : প্রতিবছরের মতো এ বছরও ২৬ জুলাই ১৯৭১'এ মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর ইতিহাস "নাজিরপুর যুদ্ধের" শহীদদের স্বরণে পালিত হয়েছে "ঐতিহাসিক নাজিরপুর দিবস"।

এ উপলক্ষ্যে জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় আগত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলোসহ জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বর্তমানে সারা দেশে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক বৈঠকে আলোচনায় জেলার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান লিটন আওয়ামী লীগের অবস্থান ব্যাক্ত করতে গিয়ে পুনরায় ব্যাক্ত করেন-"হয় জয়, না হয় মৃত্যু!"।

তিনি আরও জানান- সরকারের ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের তুলনামূলক এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের সংগঠনের প্রতি কর্তব্য ও আস্থার অবিচলতাকে গভীর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সেইমত অতিসত্বর সাংগঠনিক ব্যাবস্থাও গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি কমিটিতে দলের ভেতরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের চিন্হিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে আওয়ামী লীগ কোন কার্পণ্য করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে তিনি এরুপ মন্তব্য করেন যে- "প্রয়োজনে সেই সকল কমিটি ভেঙে দেয়া হবে এবং উপযুক্তদের সেই স্থানগুলোতে দায়িত্ব দিয়ে সংগঠন বিনির্মাণ করা হবে।"

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে কোটা সংষ্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র লীগের কর্মীদের বিভিন্ন হল হতে মারধোর করে বের করে দেয়া সহ দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতিতে বি.এন.পি' ও তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে কোটা আন্দোলনে ভর করার পর নেত্রকোণায় আওয়ামী লীগ সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের অবস্থান ও কর্তব্য ব্যাক্ত করতে গিয়ে তিনি নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা সহ প্রথম ঘোষণা করেন- "হয় জয়, না হয় মৃত্যু!"

মুক্তিযুদ্ধের মধ্যভাগে ১৯৭১ সালের এই দিনে নেত্রকোণার কলমাকান্দায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকার নাজিরপুরে এক রক্তক্ষয়ী সম্মুখযুদ্ধের অবতারণা হয়। এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে তৎকালীন একজন সুনামধন্য চিকিৎসক সহ মোট সাতজন অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধার শহীদ হবার ইতিহাসের মধ্যদিয়ে। গারো অধ্যুষিত কলমাকান্দার এই পাহাড়ি অঞ্চলে যখন পাক সেনাদের অত্যাচারে বাংলার এই সূর্য সন্তানদের কারোই সম্মানজনক শেষকৃত্য করা সম্ভব হচ্ছিলো না, তখন উপায়ন্তর না দেখে ভারতের সীমান্তের একদম সন্নিকটে লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী নামকস্থানে ১১৭২ নম্বর পিলারের কাছে একটি পাহাড়ি নিভৃত স্থানে এই বীর সেনানীদের সমাধিস্থ করা হয়। এই স্থানের তিন প্রান্তেই ভারতের সীমান্তরক্ষীদের চৌকি প্রহরায় এক টুকরো মুক্ত বাংলাদেশের সীমানায় যেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আছেন এই যুদ্ধে শহীদ সাত মুক্তিযোদ্ধার কবর। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি "সাত শহীদের মাজার" নামে সমাধিক পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান রেখে সীমান্ত আইনকে শিথিল করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা এখনো এই স্থানে আসা পর্যটকদের মর্যাদাপূর্ণ ভ্রমনের সুযোগ বলবৎ রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও শ্রদ্ধা নিবেদন ও গার্ড অব অনার দেয়া হয়েছে। পরে কবর জিয়ারত শেষে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ, পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামসুর রহমান ওরফে ভিপি লিটনসহ বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধারাসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এই যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন নেত্রকোনার আবদুল আজিজ ও মো. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. ইয়ার মামুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, মো. নূরুজ্জামান, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণার নাজিরপুরের এই যুদ্ধের অবদান অনেক। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যভাগেই এই সম্মুখযুদ্ধের মাহত্ব্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ দেশজুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলো। এই যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাক-হানাদার নিহত হলেও জেলা হিসেবে নেত্রকোণা তথা বাংলাদেশের বিজয়ের তখনো অনেক দেরী। নেত্রকোনাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর দিনটিকে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবস হিসেবে প্রতি বছর পালন করে আসছেন।

(টিবি/এএস/জুলাই ২৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test