E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

স্কুলের জমিতে দোকান, কোমলমতি শিশুদের পাঠদান ব্যাহত

২০২৪ জুলাই ২৬ ২০:০১:৩৪
স্কুলের জমিতে দোকান, কোমলমতি শিশুদের পাঠদান ব্যাহত

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : নিম্নজলা ভূমি ও বিল বেষ্টিত এলাকাটি ছিল পশ্চাদপদ। অবহেলিত এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন একটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৫৭ শতাংশ জমি দান করা হয়। সেই জমিতেই  ১৯৪৫ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়টির নাম সাতাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সাতাশিয়া গ্রামে অবস্থিত। এ বিদ্যালয়ে পড়াশেনা করে অনেকেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে এখানে ৩শ’ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকার রাস্তাঘাট ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তাই এলাকার জমির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রশস্ত পাকা সড়ক। বিদ্যালয়ের সড়ক সংলগ্ন জমিতে ললুপ সৃষ্টি পড়ে এলাকার ৬ দখলদারের । তারা প্রায় ১০ বছর আগে বিদ্যালয়ের ৩ শতাংশ জমি দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করেন।

দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক ও কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অতি সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সাতাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখলকরে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রানজু কাজী, ইন্দা মোল্যা, জামসেদ কাজী, ইনামুল মোল্যা, টিটো মোল্যা ও শাহীন মোল্যা। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে প্রবেশ মুখে রাস্তা ঘেঁষে দোকানঘর তুলেছেন তারা। এসব ঘরে কেউ ব্যবসা করছেন, আবার কেউ ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি বেদখল হয়ে পড়েছে। এসব দোকানে সারাক্ষণ লোকজনের শোরগোলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। লেখা-পড়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্কুলে জমি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও কর্ণপাত করছেন না অবৈধ দখলদাররা। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও বেদখল সম্পত্তি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন ম্যানেজিংকমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী।

বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন,‘আমার দাদা, বাবা, চাচা ও ফুফাত ভাই অবহেলিত এ এলাকার শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়ের জন্য ৫৭ শতাংশ জমি দেন। পরে সরকার ১৯৪৫ সালে এখানে স্কুল করে দেয়। স্কুলটি এলাকার শিক্ষা বিস্তারে ভ’মিকা রেখে আসছে। ১০ বছর আগে স্থানীয় ৬ প্রভাবশালী বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। দোকানের আগতদের কোলাহলে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানাচ্ছি।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অমিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এ স্কুলে যোগদানের আগেই ঘর তুলেছেন প্রভাবশালীরা। কাশিয়ানীর সাবেক ইউএনও সাব্বিরআহমেদ ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের জমি থেকে ঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে বলেছিলেন। তারা তখন ঘর সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ইউএনও সাহেব অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার পর কেউ ঘর সরিয়ে নেয়নি। সবাই যার যার অবস্থানে রয়েছেন।’

দখলদার টিটো মোল্যা, ইন্দা মোল্যা ও জামসেদ কাজীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে, তারা বিদ্যালয়ের জমিতে দোকান ঘর তুলেছেন বলে স্বীকার করেন। জমি ফাঁকা পড়ে ছিল, তাই ঘর তুলে ব্যবসা করছেন জাানিয়ে তারা বলেন, সাবেক ইউএনও এটি ছেড়ে দিতে বলে ছিলেন। তারপর আর কেউ কিছু বলে নি। তাই তারা স্কুলের জায়গায় ব্যবসা করছেন।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেদুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।’

(এমএস/এএস/জুলাই ২৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test