E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৩০, আটক ৮

২০২৪ জুলাই ১৮ ১৯:২৬:৫৯
মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৩০, আটক ৮

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ৮ জনকে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শকুনী লেকের পানিতে পরে দীপ্ত দে (২২) নামে এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন শকুনী লেক থেকে দীপ্ত দে‘র লাশ উদ্ধার করেছে।

নিহত দ্বীপÍ দে মাদারীপুর শহরের মাস্টার কলোনী এলাকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন দে এর ছেলে। সে মাদারীপুর সরকারী কলেজের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায় হলেও তারা বহু বছর ধরে মাস্টার কলোনী এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোটা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মাদারীপুর শহরের ডিসিব্রিজ এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। পরে মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধিসহ উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৮ জনকে আটক করেছেন। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এদিকে ছাত্রলীগ ও পুলিশের তাড়া খেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে সারা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নতুন শহর, প্রধান সড়ক, সুমন হোটেল এলাকা, কলেজ রোড, পুরান বাজার, সিটি মার্কেট এলাকা, ইটেরপুল, চৌরাস্তা, পুরানবাজার, ইউআই স্কুল রোডসহ শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। পুরান বাজারে কয়েকটি দোকান, আওয়ামীলীগ অফিস, মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দেন শিক্ষার্থী দ্বীপ্ত দে। এসময় তাদের বাধা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করেন। এসময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দ্বীপ্ত দে মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকের মধ্যে পড়ে যান। খবর পেয়ে মাদারীপুরের ফায়ার সার্ভিসের চারজন কর্মী এসে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে দ্বীপ্ত দে এর লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠান।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর শেখ আহাদুজ্জামান বলেন, আমাদের চারজন কর্মী চেষ্টা চালিয়ে একজন শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে। পরে পুলিশ লাশ তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

আন্দোলনকারী আল-আমিন, সুমন, রিপন হোসেনসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। এসময় প্রথমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ও পরে পুলিশ আমাদের উপর হামলা করেন এবং গুলি করেন। এই ঘটনায় আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দ্বীপ্ত দে নামের এক শিক্ষার্থী লেকের পানিতে পরে মারা যান।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, লেক থেকে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। বিচ্ছিন্নভাবে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমাদের অনেক পুলিশও আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

এ ব্যাপারে জানতে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিজিভ করেননি। তাই তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

(এএসএ/এএস/জুলাই ১৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test