E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অবশেষে ফরিদপুরের যৌন নিপীড়ক শিক্ষক জয়নুল আবেদীন গ্রেফতার

২০২৪ জুলাই ১৫ ১৫:০৩:৪৪
অবশেষে ফরিদপুরের যৌন নিপীড়ক শিক্ষক জয়নুল আবেদীন গ্রেফতার

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুর শহরের আদর্শ বালিকা স্কুলের যৌন নিপীড়ক প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন টিটন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছেন।

২০১০ সালে বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকে গত ১৪ বছর যাবত ওই স্কুলের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি নিপীড়নসহ ছাত্রীদের নানা ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন ওই শিক্ষক। গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দেশ বরেন্দ্র সাংবাদিক প্রবীর সিকদার প্রথমে তার ফেসবুক স্টাটাসের মাধ্যমে জয়নূল আবেদীনের ছাত্রী যৌন নিপিড়নের ব্যাপারটা সামনে নিয়ে আসেন। এই ব্যাপারে দৈনিক বাংলা ৭১ দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় কাজ করে নিউজ তৈরী করছিল, কিন্তু দৈনিক বাংলা ৭১ সংবাদ প্রকাশের আগেই গত শনিবার (১৩ জুলাই) একটি গণমাধ্যম ওই নিপীড়কের ছবিসহ "যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে "শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

রবিবার তাদের ১২ জন ফরিদপুরের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে হাজির হয়ে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুলে বলেন এবং লিখিত অভিযোগ দেন। তারই প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হয় ওই নারী লোভী প্রধান শিক্ষক টিটনকে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার সন্ধ্যায় জয়নুল আবেদিনকে ফরিদপুর শহর থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদীন টিটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিয়েছেন দশম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী। নিজের ও পরিবারের মানসম্মানের ভয়ে এতদিন তারা মুখ খুলেননি।

রবিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর অবস্থান করতে দেখা যায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর একটি অভিযোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও।

জানা গেছে, টিটোন মাস্টার ২০১০ সালে আদর্শ বালিকায় যোগদানের পর থেকে গত একযুগের বেশি সময় ধরে নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রীরা ওই শিক্ষকে ঘৃণা লালসার শিকার হয়ে আসছিলেন। বর্তমান, সাবেক, সদ্য পাশ করা এমন প্রায় ১০ জন ছাত্রীর কথা বলেছেন দৈনিক বাংলা ৭১ এর সাথে। শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রীদের গায়ে হাত দিতেন ওই শিক্ষক। নিজ বাসাই প্রাইভেট কোচিং করানোর সময় শিক্ষার্থীদের একাকী পেলে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়া, ফেসবুক মেসেঞ্জারে উত্তেজনাপূর্ণ আলাপচারিতাসহ পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে বশে আনতেন তিনি। ফাঁদে পড়ে তার সঙ্গে অনেক ছাত্রী ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য হয়েছেন। যারা তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হত তাদের টেস্ট পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়ে পাশ করিয়ে দিতো এবং যারা তার কুপ্রস্তাবে রাজি হত না তাদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হতো।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শ্রেণিকক্ষে থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা, বিশেষ করে গত ১১ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করা হলে অনেক কিছুই জানা যাবে। ক্লাস চলাকালীন মেয়েদের শরীরে স্পর্শ করতেন প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষককে জানালেও তারা ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহাতাব আলী মেথু বলেন, শনিবার (১৩ জুলাই) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে দেখা করলে আমি তাকে এ বিষয় নিয়ে আজকে (রবিবার) মিটিং ডাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি এবং মিটিং এর বিষয়ে কাউকে কলও করেনি। মিটিং কেন ডাকেনি এ বিষয়ে আজ প্রধানশিক্ষককে ফোন দিলে রিং বাজলেও তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে আমি ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র থাকা অবস্থায়ও এ ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আমি ডাক যোগে পেয়েছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগকারী না থাকায় তাকে মৌখিকভাবে সাবধান হবার নির্দেশ দেই। সচেতন নাগরিক কমিটির, ফরিদপুর এবং ফরিদপুর জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি প্রফেসর শ্রিপ্রা রায় বলেন, এ প্রধান শিক্ষকে বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। অনতিবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করা হোক। এটা নিয়ে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিব আমরা। ভুক্তভোগীদের পাশে আমরা আছি।

এদিকে, গ্রেফতারকৃত জয়নুল আবেদীন টিটোন মাস্টারকে দ্রুত বরখান্ত ও তার শাস্তি দাবী করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

(আরআর/এএস/জুলাই ১৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test