E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আদমদীঘিতে কমিশন ছাড়া ফাইলে স্বাক্ষর দেন না ইউএনও-পিআইও

২০২৪ জুলাই ১৪ ১৬:২৩:৩৪
আদমদীঘিতে কমিশন ছাড়া ফাইলে স্বাক্ষর দেন না ইউএনও-পিআইও

আদমদীঘি প্রতিনিধি : বগুড়ার আদমদীঘিতে ঘুষ ছাড়া প্রকল্পের ফাইলে স্বাক্ষর না করার অভিযোগ উঠেছে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাওছার আলীকে তাদের চাহিদা মতো ঘুষ না দিলে বাড়ে জটিলতা। তাঁরা যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রাপ্য টাকা থেকে লাখে ১৮ শতাংশ টাকা দাবি করেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এতে করে ওই দুই কর্মকর্তা সকলের কাছে সমালোচনার মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।

জানা যায়, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক লেনদেনের কাজ হয়ে থাকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আর যেকোনো প্রকল্পের সভাপতি হয়ে থাকেন ইউএনও। কাজেই তাঁরা দুজনে একটি প্রকল্পের কাজের সাথে সম্পৃক্তা থাকে। তাই তাদের যোগসাজশটাও একটু বেশি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ পর্যায়ে জনসাধারণের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন সরকার। প্রতি অর্থ- বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) এবং কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) এই প্রকল্পের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে লাখ লাখ টাকা ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব বরাদ্দ দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম রাস্তা, ব্রীজ ও ড্রেন নির্মাণ করায় এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। পিআইসি’র মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে এ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। যার তদারকি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ফলে তাদের হাতে এসব বরাদ্দের সার্বিক ক্ষমতা থাকার কারনে একরকম জিম্মি করে রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের।

সরজমিনে বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত অনুসন্ধান চালায় গণমাধ্যম কর্মীরা। কথা হয় উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ও সদস্যদের সঙ্গে। তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চেয়ারম্যানরা জানান, বর্তমান ইউএনও উপজেলায় যোগদানের পর গত ৭ মাস ধরে পরিষদের জন্য বরাদ্দ ওয়ান পারসেন্ট প্রকল্প খাত আমারা একটি টাকাও পাইনি। তাঁর নিকট আবেদন করলে তিনি প্রাপ্য টাকার ৫০ শতাংশ দিতে হবে বলে দাবী করেন।

তারা অভিযোগের সুরে বলেন, রাজি না হওয়ায় দিনের পর দিন এই খাত থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ বিগত দিনে এমন ছিলনা। আমরা সময়মতো ওয়ান পার্সেন্ট প্রকল্পের টাকা পেয়ে যেতাম। এবং প্রাপ্ত সেই টাকা দিয়ে ছোট-বড় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতাম। এছাড়া টিআর-কাবিটা প্রকল্পের বিলের জন্য পিআইও’র অফিসে গেলে দুই অফিস বাবদ বিলের ১৮পার্সেন্ট টাকা দাবী করে।

এসবের দাবিকৃত পার্সেন্ট দিতে রাজি না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে বিল পাশে জটিলতা দেখায়। কয়েকদিন আগে কয়েকলাখ টাকা বিলের বিষয় নিয়ে পিআইও অফিসের স্টাফদের সঙ্গে তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি অবস্থা প্রায়।

পার্সেন্টের জ্বালায় কাজ করা মুসকিল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় হাটবাজার রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পের কাজের বিল তুলতে গেলেও ইউএনও রুমানা আফরোজ ১০ পার্সেন্ট টাকা নেন। অন্যথায় বিল দিতে দেরি করে, সমস্যা দেখিয়ে জটিলতা বৃদ্ধি করান তিনি। যেন তাদের কাছে প্রকল্পের কাজের পার্সেন্টেজ বৈধ হয়ে গেছে, এটা তাদের অধিকার। এমন পরিস্থিতি ও বিড়ম্বনা থেকে সকলে পরিত্যাণ পেতে চান।

একইভাবে ওই দুই কর্মকর্তার পার্সেন্টের ফিরিস্তি তুলে ধরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য জানান, দুই মাসে আগে ইউএনও’র কাছে প্রায় ৭ লাখ টাকার একটা প্রকল্পের বিলের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি ওই সময় ৫ পার্সেন্ট হিসাবে টাকা দাবী করে। প্রথমে তাঁর কথা শুনে অবাক হই। কারন এর আগে এভাবে কেউ চায়নি। যেহেতু তিনি এখন দায়িত্বে তাই বাধ্য হয়ে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়।

এরপর পিআইও অফিসে গেলে তাদেরও ১২-১৩ পার্সেন্টে টাকা দিতে হয়। এছাড়াও কাজের সাইট পরিদর্শনে এসেও সামান্য ত্রুটি পেলে ২০-৩০ হাজার টাকা দাবি করে বসে পিআইও কাওছার আলী। ইউএনও ও পিআইও মিলে লাখে ১৮ পার্সেন্ট টাকা নিলে কাজ করবো কিভাবে, প্রশ্নের সুরে বলেন তিনি। যদি অন্যের পাওয়া প্রকল্পের কাজ কেউ কিনে নিয়ে করতে চাইলে তার মুলধনও দেখতে পাওয়া যাবেনা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাওছার আলী জানান, ১৮ হোক কিংবা ৩৬ পার্সেন্ট, আগে তাদের কাজ সরজমিনে তদারকি করে আসেন তারা কি কাজ করছে। তারপর বলা হবে।

অভিযোগ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ বলেন, আমার সঙ্গে প্রকল্পের কাজে কোন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্পৃক্তা নেয়। এ বিষয়ে পিআইও বলতে পারবে।

(এস/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test