E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নড়াইলে রাক্ষুসী মধুমতির রুদ্র রূপ, বিলীন হচ্ছে গ্রাম-জনপদ

২০২৪ জুলাই ০৯ ১৪:৪৬:০৩
নড়াইলে রাক্ষুসী মধুমতির রুদ্র রূপ, বিলীন হচ্ছে গ্রাম-জনপদ

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে মধুমতী নদীর সর্বগ্রাসী ভাঙনে  গ্রাম ছেড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

এবারও বর্ষা মৌসুম শুরু হবার সাথে সাথে মধুমতী নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। এ নিয়ে নদীপাড়ের মানুষেরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন । প্রতিনিয়ত তাদের একটাই চিন্তা, কখন যেন তাদের বসতভিটা মধুমতী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ! এরপর পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন, তা জানা নেই তাদের।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার আবাদি জমি, ভিটেমাটি, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সহায় সম্পদ। এমনকি বারবার ভাঙনে ওই এলাকার পাঁকা রাস্তাসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সোমবার (৮ জুলাই) সরেজমিনে তেলকাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ভাঙনের ভয়াবহতা এবং নদীপাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা।

গ্রামবাসীরা আলাপকালে জানান, একাধিকবার মধুমতী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন এখানকার মানুষ। বারবার প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন রোধের আশ্বাস দিলেও হয়নি কোন প্রতিকার। বর্ষার শুরুতে এবারও ওই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান গ্রামবাসীরা।

উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের শরিফা বেগম (৫০) জানান, 'তাদের পূর্বপুরুষের ১০০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের জমি বর্গাচাষ করে পরিবারের সকলের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এ পর্যন্ত ৩ বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবার। এবারও ভাঙনের দাঁরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ! কী করবেন ভেবেই পাচ্ছেন না। তিনি এ ভাঙনরোধে মাশরাফি বিন মোর্তজা এমপি'র সহযোগিতা কামনা করেন'।

তেলকাড়া গ্রামের হাসমত শিকদার (৭০) জানান, 'স্বাধীনতার পর থেকে শতশত পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে অন্যত্র চলে গেছে। অনেক আপনজন গ্রাম ছেড়ে কোথায় যে চলে গেছে-তাদের খোঁজ জানা নেই। তাদের সাথে কখনও আর দেখা হবে কি না তাও তিনি জানেন না'।

ভাঙন কবলিত তেলকাড়া গ্রামের বাসিন্দা রুব্বান বেগম (৪৫), রহিমা বেগম (৩৮), হেমায়েত মোল্যা (৪৪) ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান (৬০) জানান, 'মধুমতী নদীর ফি বছর ভাঙনে নদীগর্ভে তাদের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে । তাদের পুর্বপুরুষের ভিটেমাটি এখন নদীর ওপার গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে চলে গেছে। তাদের এসব জমি গুলো জবরদখল করে রেখেছে ওই এলাকার লোকজন। নদী ভাঙনে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওই সমস্ত পরিবার। আবারও ভাঙতে ভাঙতে নদীর কিনারে চলে এসেছে তাদের বসতভিটা। যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে তাতে করে বসতভিটা কখন যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়-এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এবার বসতবাড়ি ভাঙলে আর মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকবে না তাদের। তাদের একটাই আকুতি, সরকারের পক্ষ থেকে যেন ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্টু শিকদার জানান, 'মধুমতী নদীর ভাঙনে অসংখ্য বসতবাড়ি, আবাদি জমি, মাদ্রাসা, মসজিদ ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি জানান কয়েক বছর আগে এই ওয়ার্ডে ১ হাজার ৭০০ ভোটার ছিল, সেটি কমে এখন ১ হাজার ভোটার আছে। ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, কয়েক বছরের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো গ্রাম-জনপদ। তিনি মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল - ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষেয়ে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (SDE) মো: শফি উল্লাহ বলেন, নড়াইল সীমানায় মধুমতী নদী ভাঙন কবলিত যে পয়েন্টগুলো রয়েছে, সবগুলো পয়েন্টের ভাঙন রোধে সংসদের হুইপ ও নড়াইল - ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নিরলস ভাবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে ওইসব এলাকায় কাজ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সংসদের হুইপ ও সাংসদ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর এলাকায় ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় কাজ শুরু হবে।

তিনি বলেন, উপজেলার তেলকাড়া গ্রামের মধুমতী নদী ভাঙন রোধে আপাতত: কোনো বরাদ্দ নেই, এ কারণে কোনো ধরনের কাজ করতে পারছি না। প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন দেওয়া আছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে এবং বরাদ্দ পেলে আগামীতে ওই এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা হবে’।

(আরএম/এএস/জুলাই ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test