মৌলভীবাজারে ত্রাণ, আশ্রয় ও খাবার পানির সঙ্কটে বানভাসি মানুষ
মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : প্রথম দফা ভয়াবহ বন্যার ক্ষত যেতে না যেতে মৌলভীবাজারের পাঁচটি উপজেলায় দ্বিতীয় দফা ফের বন্যায় কবলে লাখো পরিবার। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। উজানের অবিরাম ঢল আর গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে জেলার নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করে।
জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী সহ ৩ টি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত। কুশিয়ারা নদীর কয়েকটি স্থান সহ অনেক জায়গায় ভাঙন সৃষ্টি হয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বৃষ্টি আর উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানির স্রোত সময়ের ব্যবধানে বাড়ছেই। এ দুটি নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর তৈরি হয়েছ ঝুঁকি।
জেলা সদরের খলিলুর ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ব্রাহ্মণ গ্রাম হামরকোনা সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম নদীর বাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন শতশত পরিবার। একই উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা প্রায় ৩৫টি পরিবারও বন্যায় আক্রান্ত। ওই ইউনিয়নে মনুর তীরবর্তী এলাকার কয়েকটি পরিবারও বন্যায় আক্রান্ত। মনু নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় এখানে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। এছাড়া নাজিরাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এখনো নামেনি বন্যার পানি। শহরের সৈয়ারপুর এলাকাটি মনু নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এখানকার বেশকিছু বাড়িঘরেও প্রবেশ করে মনু নদীর পানি।
শহরের জুগিডর এলাকার পৌর টার্মিনালের পিছনে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধটি খুঁড়াখুঁড়ির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বুধবার ঝুঁকি এড়াতে পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানের তাৎক্ষণিক উদ্যেগে প্রায় ২শ ফুট জায়গা জুড়ে ৭শ বালুর বস্তা ফেলা হয়। বর্তমানে পানি কিছুটা কম থাকায় পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে ওই এলাকাটিতে।
জেলা সদর ছাড়াও, জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা ও রাজনগর উপজেলায় এখন বন্যার কবলে গ্রামের পর গ্রাম। বিশেষ করে জুড়ী উপজেলা শহরটি এখন বন্যায় পুরোপুরি নিমজ্জিত। এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারাও চরম দুর্ভোগে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কুলাউড়া উপজেলার পৌর এলাকা ও ভুকশিমইল ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি বন্যায় আক্রান্ত।
এসব এলাকার, গ্রামীণ সড়ক, দোকানপাট, মসজিদ-মাদ্রাসা সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ জরুরি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে কৃষকের ক্ষেত-খামার।
সরেজমিন সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা ও ব্রাহ্মণ গ্রাম সহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, গত ১৬ দিন যাবত প্রথম দফা বন্যার পর থেকেই শতশত বাড়ি কুশিয়ারা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন ফের দ্বিতীয় দফা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে এসব গ্রাম। নদী তীরবর্তী হওয়ায় প্রতি বছরই বন্যা মোকাবেলা করতে হয় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। এটা যেন তাঁদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামরকোনা গ্রামটির অধিকাংশ পরিবার পেশায় জেলে। পরিবারগুলো নদী কেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করেই চলে। গ্রামটির অধিকাংশ পরিবার পানিতে নিমজ্জিত। অনেক বাড়িতে কোমর পানি উঠে গেছে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন জেলা প্রশাসন নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রে। আবার জায়গা না পেয়ে অনেকে নিজের ঘরে চাঙ্গারি বেঁধেই বসবাস করছেন। কেউ কেউ অস্থায়ী ভাড়া বাসায় ঠাঁই নিয়েছেন।
ওই গ্রামের অনেক বাসিন্দা জানান, ঘরে পানি থাকায় বেড়েছে বিষধর সাপের উপদ্রব। বিশেষ করে রাতের বেলা ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হয় তাদের। এছাড়াও বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যানিটেশন আর জ্বালানি সমস্যা প্রকট।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পাঁচ কেজি চাল ছাড়া এখনো তেমন কোন ত্রাণ সহায়তা জুটেনি তাদের।
ওই গ্রামের শরিফুল বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, ১৫ দিন পানিতে ঘর ডুবে আছে। এখন আবার দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে। পানি কমার লক্ষণ নেই। ত্রান নিয়েও কেউ আসেনি এ পর্যন্ত। আশ্রয়ন কেন্দ্রে জায়গা নেই, তাই ঘরে পানির উপরে ভাসমান খাটের ওপরে চলে রান্না থাকা, খাওয়া সবকিছু।
শারমিন বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, ভোটের সময় আসলে এমপি, চেয়ারম্যান দেখা যায়, কিন্তু বানের পানিতে দুই সাপ্তাহ ধরে বাচ্চাদের নিয়ে দূর্বিষহ দিন কাটাচ্ছি, কেউ আসেনি খোঁজ নিতে।
হামরকোনা গ্রামে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ইটসলিং সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে দেখা যায় ওই গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ বাড়িতে কোমর পানি থাকায় শিশু সহ পরিবার নিয়ে বিকল্প থাকার সন্ধানে হাতে কিংবা মাথায় কাপড় সহ ব্যবহারী জিনিসপত্র নিয়ে ছুটছেন। এসময় কথা হয় ওই গ্রামের জেলে পরিবারের গৃহিণী হেনা বেগমের সাথে। ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে বলেন, কেউ খোঁজ নেয়নি। বাড়িতে পানি। থাকার কোন উপায় না থাকায় এখন বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছি কোথাও বাসা পাওয়া যায় কী না দেখতে। কারণ যেখানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে সেখানে জায়গা নেই। কী করবো বুঝে আসছেনা।
গ্রামটিতে প্রায় সাড়ে ৩'শ পরিবার পানিতে নিমজ্জিত। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান না পেয়ে নিজেদের ঘরেই চাঙ্গাড়ি বেঁধে সেখানেই রাত যাপন করছেন।
কথা হয় ওই গ্রামের ৮০ বয়সী বৃদ্ধ আছকান আলীর সাথে। জানান, বাড়িতে গলা পনি। থাকার কোন স্থান পাইনি। ঘরের উপর চাঙ্গাড়ি বেঁধে থাকি। এসময় ওই বৃদ্ধ এ প্রতিবেদককে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। তবে সেখানে পৌঁছার জন্য বাঁশের সাঁকোটিও পানিতে নিমজ্জিত থাকায় সম্ভব হয়নি যাওয়া।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর সর্বশেষ দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মৌলভীবাজারের মনু নদীর চাঁদনীঘাট ব্রিজ এলাকায় পানি কমে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর শেরপুরের কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাবেদ ইকবাল জানান, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর থেকে মনুমুখ পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বন্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
এদিকে সরকারি হিসেব অনুযায়ী জেলায় ৩ লাখের বেশি মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছেন।
(একে/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২৪)
পাঠকের মতামত:
- ‘আদালতে দোষী হলেও জনতার কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বীর’
- হত্যাচেষ্টা মামলায় সালমান-পলক ৪ দিনের রিমান্ডে
- ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের ১২ বছরের কারাদণ্ড
- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
- ‘পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার কাজ চলছে’
- ‘বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত সব কর্মকর্তাকে ধরা হবে’
- সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নামে প্রথম মামলা
- প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা
- 'শোষকের গুলিতে প্রাণ দিতে প্রস্তুত কিন্তু জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আপোষ হবে না'
- যাত্রাভঙ্গ
- সবার আমি ছাত্র
- দাবানলের কারণে আবার পেছালো অস্কার মনোনয়ন
- পেট খালি রাখলেই বিপদ
- ‘বিএনপির সংস্কার কর্মসূচি জাতির মুক্তির সনদ’
- ঘোষণাপত্র জারি হবে ছাত্রদের নেতৃত্বে, উপস্থিত থাকবেন সবাই
- সিটি মিনিস্টার পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
- সাতক্ষীরায় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি
- শ্যামনগরে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই
- কুশিয়ারা তীরে তিনদিনের মেলায় ২০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি
- কোটচাঁদপুরে কাঠ রিফাইন করা বয়লার বিস্ফোরণে নিহত ২
- সব বিনিয়োগ সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার আহ্বান
- জামালপুরে জাতীয় কবিতা পরিষদের কমিটি গঠন
- মাগুরায় ইসাডোর শীতবস্ত্র বিতরণ
- রক্ষাকবজ হিসেবে জামায়াত নেতাদের তদবির
- বাগেরহাটে বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন ২৫ বিসিএস কর্মকর্তা
- একমাস পর সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত ভারতে
- বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির বিষ
- সুবর্ণচরে চর জিয়া উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা
- মঞ্চে গিটার বাজাতে বাজাতেই মারা গেলেন পিকলু
- বিজয় দিবসে শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
- খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের সড়ক অবরোধ
- মাকে বাঁচাতে জবি শিক্ষার্থীর আকুতি
- পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
- নিউ ইয়র্কে সাকিব আল হাসানের নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি
- টিউলিপের বিকল্প খুঁজছে লেবার পার্টি
- পাঠ্যবইয়ে র্যাপার হান্নান ও সেজান
- ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ২৪১ জন
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- সড়কে মৃত্যু: প্রতিদিনের ট্র্যাজেডি এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব
- 'আমি নিশ্চিত, পিতা মুজিব যদি রাষ্ট্রপতির প্রটোকল মেনে বঙ্গভবনে থাকতেন, তাহলে বাঙালির এতো বড় মহাসর্বনাশ কেউ করতে পারত না'
- আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে পারবে বাংলাদেশ
- বোয়ালমারীতে অগ্নিকাণ্ডে ৪ দোকান ভস্মীভূত, অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
- ফরিদপুরে পানিতে নিখোঁজ কলেজছাত্র ফাহাদের লাশ উদ্ধার
- নড়াইলে পুলিশের কার্যক্রম শুরু
- গুরুত্বপূর্ণ অবদানে এবার যে ৫ বিশিষ্ট নারী পাচ্ছেন রোকেয়া পদক