E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

লোকবল সংকট নিয়ে চলছে মাদারীপুরের টিটিসি

২০২৪ জুলাই ০৩ ১৯:৩৯:২৬
লোকবল সংকট নিয়ে চলছে মাদারীপুরের টিটিসি

মাদারীপুর প্রতিনিধি : লোকবল সংকট নিয়েই চলছে মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি)। ৪৩টি সৃষ্টিপদের মধ্যে ৩৯টি খালি আছে। তাই খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক নিয়ে চালাতে হচ্ছে টিটিসি এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। তবে এখান থেকে জেলার বহু যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ গেছেন। অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। 

সরেজমিন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার কুমারটেক এলাকায় অবস্থিত মাদারীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০১৩ সালের ২ মার্চ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরে মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ ও প্রত্যাশী সংস্থা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুারো এর বাস্তবায়নে ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারী টিটিসির উদ্বোধন করা হয়। ঐ সময় টিটিসির উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌ-পরিবহণমন্ত্রী, বর্তমান মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। দীর্ঘ সাত বছর পার হলেও এখনও লোকবল সংকটে চলছে টিটিসি। ৪৩টি সৃষ্টিপদের মধ্যে মাত্র ৪ জন আছেন। এছাড়াও খন্ডকালীন প্রশিক্ষক হিসেবে ৬ জন ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একজনসহ মোট ১১ জন দিয়ে চলছে প্রশিক্ষণের সকল কার্যক্রম। এছাড়াও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে ৭ জন আছেন। চুক্তিভিত্তিক পদগুলো হলো পিয়ন একজন, নিরাপত্তাকর্মী তিনজন, মালী একজন, ঝাড়–দার একজন ও সুইপার একজন।

খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, এখানে দুই মাস, তিন মাস, চার মাস ও ছয় মাস মেয়াদী নানা ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, সুইং মেশিন অপারেশন, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টেলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স, ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন, সিভিল কন্সট্রাকশন ও ড্রাইভিং উইথ অটো মেকানিক্স, প্রাক-বহিগর্মন ওরিয়েন্টেশন কোর্স, জাপানি ভাষা কোর্স, হাউজ কিপিং কোর্স প্রমুখ। এছাড়াও তিন দিন মেয়াদী প্রাক-বহিগর্মন ওরিয়েন্টেশন কোর্সও আছে।

সরেজমিনে আরো জানা যায়, মাদারীপুর জেলার মানুষ বিদেশ যাবার প্রবণতা বেশি থাকায় প্রাক-বহিগর্মন ওরিয়েন্টেশনে সব সময়ই বেশি লোক দেখতে পাওয়া যায়। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নানা ধরণের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানতে পারেন। এছাড়াও বিদেশ ফেরত মানুষজনদের জন্যও নানা ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এখানে ছয় মাসব্যাপি জাপানি ভাষাও শেখানো হয়। ছয় মাসব্যাপী কোর্স শেষ করে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সরকারি অর্থায়নে জাপান যাবার সুযোগ পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে টিটিসির জাপানি ভাষা প্রশিক্ষক সাদিকুর রহমান বলেন, এখান থেকে জাপানি ভাষা শিখে জাপানে কাজ করার সুযোগ আছে। ইতিমধ্যেই এখান থেকে জাপানি ভাষা শিখে বেশ কয়েকজন সরকারী অর্থায়নে জাপান যাবার সুযোগ পেয়েছেন। ভাষা শিখে বিদেশ গেলে তাদের মর্যাদাও অনেক বেশি থাকে। তারা সহজেই কাজ পেয়ে থাকেন এবং অর্থও বেশি আয় করতে পারেন।

স্ইুং মেশিন অপারেশন (গার্মেন্টস) এর প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার লাভরিন আক্তার নীলিমা বলেন, আমি এখানে গার্মেন্টসের উপর প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি। এখন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি স্বাবলম্বী হতে চাই।

স্ইুং মেশিন অপারেশন (গার্মেন্টস) এর প্রশিক্ষক আখিনুর আক্তার বলেন, বর্তমানে এই প্রশিক্ষণে ১৫ জন শিক্ষার্থী আছেন। এখান থেকে অনেকেই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশ গিয়ে আয় করছেন। অনেকেই আবার দেশে বসেও আয় করতে পারছেন। এখান থেকে ট্রেনিং এরপর যে সার্টিফেটক দেয়া হয়, তা নিয়ে বিদেশ গেলে বেশি আয় করা সম্ভব।

টিটিসিতে প্রাক-বহিগর্মন ওরিয়েন্টেশন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন শামীম। তার বাড়ি মাদারীপুর শিবচরে। তিনি বলেন, টিটিসিতে এসেছি প্রশিক্ষণ নিতে। আমি প্রথমবারের মতো কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছি। তাই কয়েকজনের পরামর্শে এখানে এসেছি। আমি জেনেছি এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে গেলে অনেক ভালো হয়।

মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার আ. হামিদ। তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। আবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো যাচ্ছেন। এখানে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে। তিনি বলেন, দেশ থেকে যারা বিদেশ যান, তারা যেন কাজ শিখে ও নিয়ম কানুন জেনে যান। তাহলে ভালো কিছু করতে পারবেন। এখান থেকে কাজ শিখে গেলেই তার মূল্যায়ন বেশি। তাই সবার উচিত প্রশিক্ষণ নেয়া ও ভাষা এবং কালচারের উপর জ্ঞান থাকা। তবেই বিদেশে বেশি আয় করতে পারবেন।

কালকিনি উপজেলার রাব্বি মুন্সি বলেন, আমি দীর্ঘদিন কাতারে ছিলাম। এখন আমি সিঙ্গাপুরে যাবো। তাই এখানে এসেছি ট্রেনিং নিতে। ট্রেনিং নিলে বিদেশে ভালো কিছু করা যায়। তাই আমি সকলকে বলবো, কেউ বিদেশ যেতে চাইলে কাজ শিখে গেলো অনেক ভালো হয়। তারা যেন টিটিসিতে এসে প্রশিক্ষণ নেন।

ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশনের ট্রেনিং নিতে আসা মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার মো.মেহেদী হাসান বলেন, আমি এই কোর্সটি করতেছি, আমি সার্টিকেটকটি অর্জন করে ইউরোপের কোন দেশে যেতে চাই।

ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশনের প্রশিক্ষক মো. নয়ন শেখ বলেন, এখানে ওয়েল্ডিং এর বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যারা দেশেই এখানে কাজ করতে চান, তারাও এখানে কাজ শিখে ভালো কিছু করতে পারেন। এছাড়াও যারা বাহিরে যেতে চান, তারাও এখান থেকে এই প্রশিক্ষণটি নিতে পারবেন। আমি মনে করি যে, যারা স্বল্প শিক্ষিত বা যারা বেকার, তারা অবশ্যই স্থানীয় টিটিসিতে গিয়ে এই কোর্সটি করে দেশের ও নিজের উন্নয়ন করা সম্ভব।

টিটিসি থেকে তিনমাসের কোর্সে ড্রাইভিং শিখছেন মাদারীপুরের ইমন আহম্মেদ। ইমন আহম্মেদ বলেন, আমি এখান থেকে তিনমাসের কোর্স করে ড্রাইভিং লাইন্সেস পেয়েছি। এখন সৌদি আরব যাচ্ছি।

ড্রাইভিং প্রশিক্ষক মো. রুবেল রানা বলেন, আমাদের এখানে ড্রাইভিং কোর্স করে অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন। আবার অনেকেই শিখতেছেন, ভবিষ্যতে তারা বিদেশ যাবেন। আমাদের এই কোর্সের শেষ ব্যাচের একজন ছাত্র সরকারীভাবে রাশিয়া গেছেন। তার নামমাত্র কিছু টাকা লেগেছে। সৌদি আরব, দুবাই, কাতার এমনকি ইতালীতেও অনেকেই গিয়েছেন। আমাদের এখানে কোর্স করলে সরকারীভাবেও যাওয়া যায় এবং নিজ উদ্যোগেও বিদেশ যেতে পারবেন। অনেকেই জানেন না, এখানে একটি টিটিসি আছে, এটা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলে, অনেক অল্প শিক্ষিত মানুষও দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যেতে পারবেন।

মাদারীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স. ম. জাহাঙ্গীর আখতার বলেন, শুধু মাদারীপুর নয় সারাদেশের টিটিসিগুলোতে জনবল সংকট আছে। এরমধ্য থেকেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। এ ব্যাপারে প্রতিমাসেই এখান থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে। তবে এখান থেকে ট্রেনিং নিলে দক্ষতা অর্জন করে দেশে এমনকি বিদেশেও ভালো কিছু করা সম্ভব।

(এএসএ/এসপি/জুলাই ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test