E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ধামরাইয়ে রথ উৎসব শুরু ৭ জুলাই, প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী 

২০২৪ জুলাই ০৩ ১৭:২৪:৫৯
ধামরাইয়ে রথ উৎসব শুরু ৭ জুলাই, প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী 

দীপক চন্দ্র পাল, ধামরাই : বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকার ধামরাইয়ে ৭ জুলাই থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা ও তার মাস ব্যাপী মেলা। এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই ধামরাইয়ে। ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথ যাত্রা অনুষ্ঠান। তবে মেলা চলবে মাস ব্যাপী। 

এ উৎসব হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় প্রায় ৪০০ শত বৎসর পূর্ব হতে শুরু হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারনে এই উৎসব ব্যাপক ভাবে সার্বজনীনতা লাভ করেছে। এই ধর্মীয় রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ও ইতিহাস খ্যাত ধামরাইয়ে বেড়ানোর জন্য প্রতিটি বাসগৃহে দুরদুরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন এসে ভীড় করে। অতীতে বাংলাদেশ নয় বিদেশ থেকেও হাজারো ভক্তবৃন্দরা রথ উৎসব কে কেন্দ্র করে ধামরাইয়ে এসে ভীড় জমাত। এখনো আসে। পুরো উৎসবটিই কালের বিবর্তনে এখন ধর্মীয় ভাবধারা নয় সার্বজনীন স্রোতধারায় প্রভাবিত হচ্ছে।

এই ঐতিহব্যবাহী রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা ধামরাইয়ে এখন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে এবং কায়েত পাড়ান্থ মাধব মন্দির কমিটি কর্তৃক রথের যাবতীয় ও সাজ সজ্জার কাজ ইতি মধ্যেই সম্পন্ন করেছে।

এবার রথ উৎসব ও মেলার উদ্বোধনী অনষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেস। বিশেষ অতিথি থাকনে ঢাকা বিশ আসন ধামরাইয়ের এমপি মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বেনজীর আহমদ. বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, ঢাকা জেলা প্রশাসক মোঃ আনিসুর রহমান, ঢাকার পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান খান পিপিএম বার, ধামরাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, ধামরাইয়ের মেয়র গোলাম কবীর মোল্লা, ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস, শ্রীশ্রী যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও আর পি সাহার নাতি রাজিব প্রসাদ সাহা প্রমূখ উপস্থিত থাকবেন মন্দির কমিটি সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়াও মেলাঙ্গনের আশপাশে পৌর এলাকার বিভিন্ন পথ বহু গর্তের কারনে জলমগ্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। ধামরাই পৌর এলাকা প্রধান সড়ক ,যে পথ দিয়ে টানা হবে রথ এর পাশে ড্রেন নির্মান করা হচ্ছে,ধীর গতির কারনে বৃহৎ রাস্তাটি ক্ষীনকায় রূপ নিয়েছে আজো জল কাদায় থিক থিক করছে।
অপর দিকে পৌর এলাকার মেডিকেল সড়কটি হার্ডিঞ্জের পিছনে বড় বাজার পর্যন্ত সামান্য বিষ্টি হলে সংস্কার কাজের কারনে প্রচন্ড ভাবে কাদার সৃষ্টি হয়ে চলালের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ড্রেন নিমানের অজুহাতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়কের উপ মাটি ফেলে রেখে এই দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে বলে এলাকাবাসির অভিযোগ।

মেলাঙ্গন মাধব মন্দির মাঠটিতে মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে বলে জানান কমিটির সহ সভাপতি জগদিশ সরকার। রথ উৎসব উপলক্ষে ৭ জুলাই সকাল ১০ টায় কায়েতপাড়াস্থ রথ খোলায় ও রথের সামনে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। এ সময় ডাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা ও মহিলাদের উলু ধ্বনিতে মাধব মন্দিরের বর্তমান প্রধান পুরোহিত উজ্জ্বল গাঙ্গুলী ধর্মীয় অনুষ্টান সম্পন্ন করবেন। দুপুরে মাধব মন্দিরে ভোগ রাগের পর প্রসাদ বিতরণ করা হবে আগত হাজারো ভক্ত বৃন্দের মাঝে।

বিকেলে রথের সামনে লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে উদ্ধোধনী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভা শেষে বিকেল ছয়টায় রথটানা হবে বলে কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মন্দির কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ব্রত সরকার জানিয়েছেন।

বিকেল ৪টায় মাধব মন্দির থেকে মাধব বিগ্রহসহ অন্যান্য বিগ্রহগুলি নিয়ে এসে সারাবছর যেখানে রথটি থাকে সেই রথ খোলায়,রথের উপর মূর্তিগুলি স্থাপন করা হবে। এর পর বিকেল সাড়ে ৪ টায় রথের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রথ খোলায় অস্থায়ী স্থাপিত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।

এই অনুষ্ঠানের আলোচানা সভা শেষে প্রধান অতিথী স্থাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন রথ উৎসবের পুরোহিত হাতে প্রতিকী রশি প্রদানের মাধ্যমে রথ টানার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করবেন।
এই রথটি মূর্তি সমেত লাখো ভক্ত নর-নারী পাটের রশি ধরে কায়েত পাড়ার রথ খোলা থেকে প্রধান সড়ক দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে পৌর এলাকার গোপনগরে। এখানেই রথটি প্রতিবছরের ন্যায় ৯ দিন অবস্থান করবে।

মাধব ও অন্যান্য বিগ্রহগুলি রথ থেকে নামিয়ে নিয়ে ৯ দিন পূজারীদের দ্বারা পুজিত হবে কথিত মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে। ৯ দিন পর আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা উৎসব। পূর্বের ন্যায় মাধব ও তার সহচরদের রথে চড়িয়ে ১৫ জুলাই বিকেল ৬ টায় টেনে আনবে পূর্বের স্থান ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়াস্থ রথখোলায়।

এখান থেকে মূর্তি গুলি চলে যাবে পুনরায় কায়েৎ পাড়ায় পুরোনো মাধবের নিজ আলয় মন্দিরে। রথ খোলায় রথটি সারা বছর থাকে বলে এই স্থানটির নামকরণ হয়েছে রথ খোলা। এই রথ খোলার ইতিহাসও ৪০০ বছরের। ১৯৭১ সালে ৯ এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার ও তাদের দোসররা ৭৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪৪ ফুট পাশে মুল্যবান কাঠের ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় রথ খানা পুড়িয়ে দিয়ে বাংলা ও বাঙালীর উৎসব ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে দেয়।

এ ব্যাপারে ধামরাই রথ কমিটির অন্যতম সদস্য ও শিল্পী সুকান্ত বনিক বলেন- বিগত ২০০৬ সালে ধামরাইয়ের রথ উৎসবে তৎকালীন মাধব মন্দির কমিটির সাধরন সম্পাদক ধামরাইয়ের বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক প্রয়াত ঠাকুর গোপাল বনিকের আমন্ত্রনে রথ উৎসবে বিশেষ অতিথি হয়ে আসেন ঐ সময়ের বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের দূত শ্রীমতি বিনা সিক্রী।

ধামরাই বাসীর আন্তরিক দাবীর প্রেক্ষিতে শ্রীমতি বিনা সিক্রী তার ভাষনে পূর্বের আদলে ৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক পুড়িয়ে দেওয়া রথটির আদলেই ধামরাইয়ের রথটি নির্মান করে দেবার আশ্বাস দেন। এরপর রথ ও মাধব মন্দির কমিটির দুই জন কর্মকর্তা বর্তমান প্রয়াত ঠাকুর গোপাল বণিক ও শিল্পী সুকান্ত বণিক নিজে ধামরাই থেকে ভারতের পুরিতে যান। সেখানেই রথ নির্মান খরচ বিষয়ক তত্বাবধায়ক বিষয়ে আলোচনা হয়।

এরপর ভারত সরকার বাংলাদেশের সেতু বন্ধন অটুট রাখতে ধামরাইয়ে রথটির নির্মানে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মানের প্রদক্ষেপ গ্রহন করেন।
এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের তত্বাবধানে ২০০৯ সালে ধামরাই রথের টেন্ডার হয়। টেন্ডার পেয়ে উই.ডি.সি.কেল.বিন টেকনো.টাচ -ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালের জানুয়ারী থেকে রথ নিমার্ন করেন। ২০১০ সাল থেকেই ধামরাইয়ে পূর্বের আদলে নতুন এই রথেই উপমহাদেশ খ্যাত ঐতিহাসিক রথ উৎসব চলছে। আর এই রথ উৎসবে প্রতি বছরই বাংলাদেশস্থ ভারতী দুতাবাসের কর্মকর্তবৃন্দরা অংশ গ্রহন করে থাকেন।

রথ মেলাকে সফল করার জন্য রথ পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি প্রসাশনের পক্ষ থেকে বহু সংখ্যাক পুলিশ,র‌্যাব, বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা পোষাক ও সাদা পোষাক নজরদারী করবে বলে জানান ধামরাই থানার ওসি শেখ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলে এব্যাপারে রথ কমিটির নের্তৃবৃনদদের নিয়ে থানা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়াও ইতিহাস খ্যাত রথ উৎসবকে সামনে রেখে ও সফল করার জন্য প্রশাসন এর উদ্্েযাগে উপজেলা মিলনায়তনে ধামরাইয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল মামুনের সভাপতিত্বে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেছেন রথ উৎৎসব হবে শান্তিপূর্ন ও সুন্দর ভাবে ।এতে যা যা প্রযোজন সে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ধামরাই উপজেলা কমিশনার ভুমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট প্রশান্ত বৈদ্য,ধামরাই থানার অফিসার্স ইনচাজ, শ্রী শ্রী যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন, প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক দীপক চন্দ্র পাল ,হিন্দু সম্পদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ সরকারী কর্মকর্তা বৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় রথমেলায়,আইন শৃ্খংলা বিষয়ে ও মেলাকে সফল করার জন্য বিস্তারিত আলোচনা হয়।

যশোমাধাব মন্দির পরিচালানা ও রথ কমিটির সাধারন সম্পাদক,কুমুদিনি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও আরপি সাহার নাতি রাজিব প্রসাদ সাহা বলেন প্রতিবারের মত এবারও রথ উৎসব ও মেলার সার্বিক আয়োজন ষথেষ্ঠ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। রথ উৎসব ও মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পৌর এলাকা সহ ধামরাইয়ের একটি পৌর সভা ও ১৬টি ইউনিয়নেই উৎসব মূখরতা বিরাজ করছে।আগামী ৭ জুলাই বিকেল ৪ টায় শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে মাস ব্যাপী মেলা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় রথ উৎসব।

তিনি মেলা উৎসবে শান্তি শৃংখলা ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে সবার সহযোগীতা কামনা করেছেন এবং রথ মেলা উৎসব উপভোগের করার জন্য আন্তরিকভাবে সকলেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রথ কমিটি কর্তূক গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দলও আইন শূংখলা বাহিনীর পাশপাশি পৌর শহরের পুরো মেলাঙ্গন জুড়ে শান্তি শৃংঙ্খলার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে বলে জানান।

(ডিসিপি/এসপি/জুলাই ০৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test