E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

রাজবাড়ীতে আমেরিকা পাঠানোর নামে অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক গ্রেপ্তার

২০২৪ জুলাই ০২ ১৯:৩১:২৯
রাজবাড়ীতে আমেরিকা পাঠানোর নামে অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক গ্রেপ্তার

বিশেষ প্রতিনিধি : সরকারী চাকুরী হারিয়ে স্ত্রীকে মৃত, তালাকপ্রাপ্ত দেখিয়ে ও পরিবারের সবাই আমেরিকা থাকে এ কথা জাহির করে নিজেকে কখনো হুমায়ন খান, কখনো রুবেল, কখনো মনিরুজ্জামান নাম ধারণ করে ও আমেরিকা প্রবাসীর পিতাকে নিজের পিতা সাজিয়ে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র সৃজন করে একাধিক বিয়ে সহ আমেরিকা পাঠানোর নামে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অবশেষে রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এ প্রতারক। ওই প্রতারকের নাম মোঃ হূমায়ুন খান ওরফে রুবেল (৪৭)। তিনি নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার জয়নগর ইউনিয়নের ঘড়িভাংগা গ্রামের মৃত শামছুল হক খানের ছেলে।

গত সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার সময় রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাবের দক্ষিন-পূর্ব কোনায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মনিরুজ্জামান খান বলেন, প্রতারক মোঃ হূমায়ুন খান ওরফে রুবেল আমেরিকায় পাঠানোর কথা বলে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে। একপর্যায়ে মিথ্যা নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রাজবাড়ী আমলী আদালত এবং নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিভিন্ন মানুষের নামে একাধিক মামলা করে। তাকে সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার সময় গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবির ওসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে ঢাকা জেলার রুপনগর থানার রুপনগর টিনসেড সেকশন ০৫, বাসা-৫৬১, রাস্তা-১৫ মোঃ বাহেজ উদ্দিনের ছেলে মনিরুজ্জামান রুবেল (৩৮) বলে প্রকাশ করে। তার স্ত্রীর পাপিয়া সে মারা যাওয়ায় বানিবহতে রেখা নামে একটি মেয়েকে দ্বিতীয় বিবাহ করেছে, তার একটি মেয়ে আছে ইভা রহমান, সে লন্ডনে থাকে। তার পিতা-মাতা এবং সৎ ভাই আমেরিকাতে থাকে, তার জন্মের ৩ মাস পরে তার মা মারা গেলে তার বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করে বলে প্রকাশ করে। তার কথা বার্তায় সন্দেহ হলে তল্লাশী করা হয়। তার সাইড ব্যাগের ভিতর থেকে একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের অনলাইন কপি, একটি জন্ম সনদের কপি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সনদ পত্রের কপি, মনিরুজ্জামান নামের একটি টিন সার্টিফিকেটের কপি। মনিরুজ্জামান নামে একটি লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আজীবন সদস্য সনদপত্র, একটি নিকাহনামা, মোঃ মনিরুজ্জামান (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) এর ঠিকাদার সংস্থার লাইসেন্সের কপি, নিকুঞ্জ সিকিউরিটি ফোর্স সার্ভিস প্রাঃ লিমিটেডের সার্টিফিকেট অফ ইনকর্পোরেশনের কপি, মোঃ বাহেজ উদ্দিনের একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি, রোকেয়া বেগমের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, সোনালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখার হিসাবের চেকের মুড়ী পাতা, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর শাখা সোনালী ব্যাংকের হিসাবের চেকবহির মুড়ি পাতা, রাজবাড়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও আমলী আদালত নং-০১ মামলার কপি পাওয়া যায়।

ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা সন্দেহ হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে তার প্রকৃত নাম মোঃ হূমায়ুন খান, তার স্ত্রী শাহানারা খানম পাপিয়া মৃত নয় সে ঢাকাতে পাপিয়ার আপন ভাই পলাশের কাছে থাকে, তার ছেলে পারভেজ ঢাকাতে একটি কোম্পানিতে চাকুরী করে ও মেয়ে ইভা রহমান লন্ডনে থাকে বলে প্রকাশ করে।

সে আরো জানায়, সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার পদে চাকুরি করতো। ২০১০ সালে তার চাকুরি চলে যায়। চাকুরি চলে যাওয়ার পরে সে আর বাড়ীতে ফেরেনি। সে ঢাকায় গিয়ে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বাহেজ উদ্দিন কে পিতা এবং রোকেয়া বেগমকে মাতা সাজিয়ে তাদের ঠিকানা কে নতুন করে নিজের ঠিকানা বানিয়ে কৌশলে জাল একটি জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম সনদ, টিন সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ বিভিন্ন ভূয়া ডকুমেন্ট তৈরী করে, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম সনদ তৈরী করে। মূলত ঢাকার ওই বাসার ঠিকানাটি মোঃ বাহেজ উদ্দিনের। মোঃ বাহেজ উদ্দিন, তার স্ত্রী সন্তান সহ বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করেন। আর্মির চাকুরী চলে যাওয়ার পরে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঢাকার রুপনগরে অবস্থান কালে মোঃ বাহেজ উদ্দিনকে বাবা এবং তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে মা বানিয়ে ওই ঠিকানা ব্যবহার করে।

প্রতারনার উদ্দেশ্যে জাল জন্ম সনদ, জাল জাতীয় পরিচয়পত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে। রুপনগর এলাকায় থাকা কালীন সময়ে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার আব্দুল গনি মল্লিকের কান্দি গ্রামের মোঃ সাঈদ সোহেলের ছেলে মোঃ সাদ্দাম হোসেন ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার দোরোইল গ্রামের মোঃ রুহুল আমিনের ছেলে মোঃ নাজমুল হোসেন সহ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে তার পিতা, মাতা, ভাই আমেরিকাতে থাকে বলে আমেরিকায় পাঠানোর কথা বলে ৬ লক্ষ টাকা নগদ গ্রহন করে। ডিবির ওসি বলেন, কিছুদিন পর কাউকেই আমেরিকায় পাঠাতে না পারলে তাদের চাপে সেখান থেকে কৌশলে সটকে পড়ে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের হাটখোরা এলাকায় আত্মগোপন করে। সেখানেও একই ভাবে প্রতারনা করে ৯ মাস আগে তার বর্তমান স্ত্রী রেখা খানমের আপন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজবাড়ীর বানিবহ এলাকায় আসে।

বানিবহতে এসে তার স্ত্রী পাপিয়াকে তালাকপ্রাপ্ত দেখিয়ে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তালাকপ্রাপ্তা রেখা খাতুন বিবাহ করে। সেখানে অবস্থান করে বিলকিছ বেগমকে ধর্ম মাতা, মোঃ আমজাদ মিয়াকে ধর্ম পিতা এবং নাসিমা বেগমকে ধর্ম বোন বানিয়ে তার প্রতারণার নতুন দিগন্ত শুরু করে। তার পিতা, মাতা ও ভাই আমেরিকাতে আছে প্রকাশ করে, মুখরোচক কল্প কাহিনী সাজিয়ে বানিবহ ইউনিয়নের গ্রাম্য ডাক্তার রঘুনাথ বিশ্বাস, আলি হোসেন খান, মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ আবুল হোসেন, আলিফ হোসেন শাওনকে আমেরিকায় পাঠানোর কথা বলে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হইলেও কাউকে আমেরিকায় পাঠাতে পারেনি। আমেরিকায় কাউকে পাঠাতে না পারায় টাকা ফেরতের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে। তখন বানিবহ এলাকার আলী হোসেন নামে এক ভূক্তভোগী বাদী হয়ে মনিরুজ্জামান রুবেলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি প্রতারনা মামলা করে।

ওসি বলেন, ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মনিরুজ্জামান রুবেল (আসল নাম হূমায়ুন খান) জেলে যায়। মামলায় জেল থেকে জামিনে এসে বিভিন্ন ভূক্তভোগীসহ বানিবহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নামে রাজবাড়ী আদালতে একের পর এক মামলা করা শুরু করে।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মোঃ হাসানুর রহমান বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় প্রতারনা মামলা দায়ের করেছেন। তাকে মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

(একে/এসপি/জুলাই ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test