E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

নড়াইলে চাঞ্চল্যকর আনিস হত্যার জের 

প্রায় দেড়মাস ধরে চলছে বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, অব্যাহত হুমকি-ধামকি

২০২৪ জুন ৩০ ১৮:২৬:৫১
প্রায় দেড়মাস ধরে চলছে বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, অব্যাহত হুমকি-ধামকি

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের কালিয়ায় প্রায় এক মাস আগে আনিস শেখ (৩২) নামে এক যুবক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এরপর হত্যাকাণ্ডের জেরে তিন দফায় আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন রাতে দুইটি ঘেরে তাণ্ডব চালিয়ে মাছসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা গত ২৫ ও ২৭ জুন উপজেলার নড়াগাতি থানায় দুইটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও লাগাতার হুমকি-ধমকিতে এলাকা ছাড়া আসামি পক্ষের পুরুষেরা, আতঙ্কে দিন কাটছে নারীদের। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৩১ মে সন্ধ্যার দিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ওই গ্রামের মোশারফে হোসেনের ছেলে আনিস শেখ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সোহেল শেখ বাদি হয়ে উপজেলার নড়াগাতি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে। ঘটনার পরপর দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১০ জুন রাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে প্রধান আসামি জাহিদুল শেখসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

আনিস হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াগাতি থানা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর সুমন্ত বিশ্বাস বলেন, 'আনিস শেখ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র‍্যাব মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তারা সকলেই কারাগারে রয়েছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'

আসামিপক্ষের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডে অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। আনিসের ভাই সোহেল শেখের নেতৃত্বে দফায় দফায় আসামি পক্ষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। আসামি পক্ষের লোকজন ভয়ে বাড়ি উঠতে পারছে না।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন রাতে প্রথম দফায় ৬ টি এবং এক সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় দফায় আসামি পক্ষের অন্তত আরও ১০টি ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন রাতে তৃতীয় দফায় আসামি পক্ষের দুইটি ঘের থেকে ৭টি ছ্যালো মেশিন, একটি সেচ মটর এবং বিপুল পরিমাণে মাছ মেরে নিয়ে গেছে। এসময় ঘেরে থাকা ধরন্ত গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে, জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তাঁদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় নড়াগাতি থানায় গত মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ঘের মালিক মারুফ শেখ ও রুবিয়া বেগম লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ঘের মালিক মারুফ শেখ বলেন, 'প্রতিপক্ষ হওয়ায় হত্যাকাণ্ডের জেরে তাঁর ঘেরে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। তাঁর ঘের থেকে মাছ এবং চারটি ছ্যালো মেশিন নিয়ে গেছে। ধরন্ত পেঁপে ও উচ্ছে গাছ কেটে রেখে গেছে। এতে তাঁর প্রায় ১২-১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'

কলাবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ হাসিনা বেগম বলেন, 'আনিস মার্ডারের পরে তার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমাগের ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, ৫টা গরু নিয়ে গেছে। এখনও হুমকি-ধমকি দেচ্ছে, আমরা আতঙ্কে আছি, বাড়িঘরে থাকতে পারতেছি না।'

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হত্যাকাণ্ডের শিকার আনিস শেখর বড় ভাই কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য সোহেল শেখ। ঘেরে ক্ষতিসাধনের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'এসব ভুয়া কথা। ওরা নিজেরা পেঁপে গাছ এবং উচ্ছে গাছ কেটেছে।'

ভাঙচুর, লুটপাট এবং হুমকি-ধমকির ব্যাপারে তিনি বলেন, 'শুরুতে ছেলেপেলে একটু করছিল। আমি এসবের পক্ষে না। আমি কাউকে এসব করতে দেয় নি। তাদের (অভিযোগকারিদের) কথা সত্য না।'

নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'ঘেরে ক্ষতিসাধনের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করছে।'

(আরএম/এসপি/জুন ৩০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০২ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test