E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ

২০২৪ জুন ২৯ ১৮:১৩:২৪
শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ বিল বেষ্টিত একটি জেলা। এ জেলায় ৩৩৪ টি খাল, ২২৯টি বিল, ১০টি নদী ও ৬টি বাওড়  রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদী থেকে খালে পানি প্রবেশ করে। তারপর এই পানি খাল থেকে বিলে ও বাওড়ে যায়। শুস্ক মৌসুমে বিল, বাড়ও থেকে খাল হয়ে পানি নদীতে নেমে যায়। এই প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিকভাবে এ জেলায় প্রতিবছর ১০ হাজার মেট্রিক টন দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ উৎপাদিত হয়। এ পানি দিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। পানির বহুমাত্রিক ব্যাবহার করে জেলাবাসী উপকৃত হন। একটি প্রভাবশালী মহল কোটালীপাড়া উপজেলার শতাধিক খাল দখলে দিয়েছে। খাল সহ বিল ঘের দিয়ে মাছ চাষ করছে। ফলে বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, পরিবেশ বিপর্যায়, জীব বৈচিত্র ধংস, নৌ চলাচল ব্যাহত ও কৃষি কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবীরা সেখানে নামতে পারছেন না। ইতিমধ্যে তারা তাদের পেশা হারাতে বসেছে। তাই এলাকাবাসী  দ্রুত দখলকৃত খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন। 

কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসন খাল দখল মুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪টি খাল অবমুক্ত করা হয়েছে।

কোটালীপাড়া উপজেলার রামনগরের বিল, রুথিয়ারপাড় বিল, মাছপাড়ার বিল, কুমুরিয়া বিল, বৈকণ্ঠপুর বিল, লখন্ডার বিল, মুশুরিয়ার বিল, পিড়ারবাড়ি বিল, পলোটানা বিল, ধোরাল বিল, চিথলিয়ার বিল, পশ্চিম দিঘলিয়ার বিল, পূর্বপাড়া বিল, চিত্রাপাড়া-শুয়াগ্রাম বিল, সাতুরিয়ার বিল, কান্দি বিল, আশুতিয়ার বিল, পোলশাইল বিল, বর্ষাপাড়া বিল, ছত্রকান্দা বিল, দেওপুরা বিল, সোনাখালি বিল, ফুলবাড়ি বিল, কোনের বাড়ি বিল, বহলতলী বিল, চাটখালির বিল, তারাইল বিল, গোপালপুর বিল, চরগোপালপুর বিল, গৌতমেরা বিল, মাচারতারা বিল, গজালিয়া বিল, তালপুকুরিয়া বিল, হিজলবাড়ি বিল, তারাকান্দর বিল, কুঞ্জবন বিল, পারকোনা বিলসহ ছোট বড় ১শ’ বিল রয়েছে। এসব বিলের শতাধিক খাল দখল করে নিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী মহল।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের দেওপুরা খাল দখল করে মাছচাষ করেছেন বহলতলী গ্রামের পরশ সিকদার, সোনাখালি কুমলাবতী খাল দখল করে মাছ চাষ করেছেন ইউপি সদস্য লায়েক শেখ, তারাইল খাল দখল করে মাছ চাষ করেছেন নির্মল মাঝি, ফুলবাড়ি খাল দখল করে মাছচাষ করেছেন ইউছুব আলী দাড়িয়া, কোনেরবাড়ি খাল দখল করে মাছ চাষ করেছেন মুজিবুর রহমান শেখ, কুঞ্জবনের খাল দখলে করে মাছ চাষ করেছেন বিপুল বাড়ৈ।

এসব খাল দখলের কারণে নৌ চলাচল ও খালগুলোর আশপাশের এলাকার কৃষকগণের কৃষি কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিলের পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ ও জীব বৈচিত্র্য।
এসব জলাশয় ধেতে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। তারা এখন প্রভাবশালীদের বাঁধার মুখে খালগুলো থেকে মাছ ধরতে পাচ্ছেন না। ফলে এসব মৎস্যজীবীরা পেশা হারিয়েছেন । পরিবার পরিজন নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী সুরেশ বাড়ৈ বলেন, আগে আমরা এলাকার বিভিন্ন খাল বিল থেকে দেশীয় মাছ ধরে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতাম। এই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমরা আর এসব খাল বিল থেকে মাছ ধরতে পারছি না। এখন আমরা এখন বেকার হয়ে পড়েছি।

উপজেলা দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, উপজেলার ছোট বড় শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন । এতে দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং নৌ চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বিলের নকশা দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব খাল উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।

খাল দখলকারী পরশ সিকদার, লায়েক শেখ, নির্মল মাঝি বলেন, খালগুলো কোন কাজে আসে না। তাই বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খাল সংলগ্ন বিলের জমি ঘের দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। মাছ চাষের লাভের টাকার ভাগ জমির মালিককে দেওয়া হচ্ছে। ধান চাষের আগে জমির মালিককে জমি পরিস্কার করে দেওয়া হয়। সেখানে জমির মালিকরা ধান চাষ করেন। এতে প্রতি বছর এ উপজেলায় মাছের উৎপাদন বাড়ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, ইতমধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করে ৪টি খাল উদ্ধার করেছি। এছাড়া খাল দখলের দায়ে ১ জনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। খাল উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোটালীপাড়া উপজেলার সব খাল দখল মুক্ত করা হবে। এখানে মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার করতে পারবেন। পরিবেশ, জীববৈচিত্র , জলাবদ্ধতা থেকে ফসল সহ দেশীয় প্রজাতির মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা হবে।

(টিবি/এসপি/জুন ২৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test