E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

দেবহাটার খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা লাওয়ারিশ জমি সশস্ত্র সন্ত্রাসী মহড়ায় জবর দখলে রেখেছে বিএনপি নেতারা

২০২৪ জুন ২৯ ১৫:২৮:০৪
দেবহাটার খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা লাওয়ারিশ জমি সশস্ত্র সন্ত্রাসী মহড়ায় জবর দখলে রেখেছে বিএনপি নেতারা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি লাওয়ারিশ হিসেবে ঘোষণা করে জেলা প্রশাসককে ওই জমি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও গত ৫  মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

ফলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী মহড়ায় জবরদখলে রেখেছে হাফ ডজন বিএনপি নেতাসহ একটি ভূমিদস্যু গোষ্ঠী। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উচ্ছেদ হওয়া ভ‚মিহীনরা যাতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করতে পারে সেজন্য কমপক্ষে ৭০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী মহড়ায় রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তারা বোমা ও বাজি ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে। ওই সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময়ে ওই এলাকায় লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৭ জুন দিবাগত রাতে জগন্নাথপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমাÐার সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির সঙ্গে ওই সন্ত্রাসীরা জািড়ত কিনা তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালি মৌজার ১৩১৮ বিঘা জমি ফেলে রেখে চলে যান চণ্ডীচরণ ঘোষ ও তার শরীকরা। শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নজরুল ইসলাম, সখীপুরের আব্দুল আজিজ, আহছানিয়া মিশনে কর্মরত ইকবাল মাসুদ, পারুলিয়ার আনোয়ার হোসেন, রফিকুল হাজী. কালিগঞ্জের বরেয়ার জলিল দারোগা, একটি চক্র প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে কালভার্ট, জনস্বার্থে ব্যবহৃত সরকারি খাল ও রাস্তাসহ ১৩১৮ বিঘা জমি মালিক হিসেবে রেকর্ড করিয়ে নেন। ওই জমি তারা বিভিন্ন লোকজনের কাছে ইজারা দিয়ে মাছ চাষ করা হতো। ফলে সরকার ১৯৫৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সূত্রটি আরো জানায়, ওই জমির একাংশ লাওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করার জন্য ২০১০ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি পারুলিয়ার অহেদ মোল্লা ও ১৩১৮ বিঘা জমি লাওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করার জন্য রহিমপুরের সমছের আলী গাজীর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী ২০১০ সালের ১২ মার্চ সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালতে ১৮/১০ নং( টাইটেলশুট) মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি বিচারক এএইচএম মাহামুদুর রহমান কোলকাতা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের বিনিময় দলিলটির ৬১.৬২ ও ৬৩ নং পাতায় ১৪টি দাগসহ বিভিন্ন তথ্য যেভাবে লেখা হয়েছে তা অন্য পাতার লেখার সাথে মিল না থাকা ও খাল, কালভার্ট ও রাস্তা রেকর্ড হওয়ায় তাহা জাল বলে মনে হয়ে বলে মন্তব্য করে ওই জমি লাওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে দুইজন রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেন।

জমির মালিক দাবিদারগণ (বিবাদী) এনালগাস ট্রায়াল ও রিসিভার নিয়োগের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে এফএমএ ২১৬/১২ নং মিস আপিল দায়ের করেন। আদালত রিসিভার নিয়োগের আদেশটি ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে রুল জারির নির্দেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলার বাদি জনাব আলী ৬৯৮/১২ সিভিল মিস পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করেন। উক্ত লিভ টু আপিলে চেম্বার জজ স্থিতাবস্থা জারির উপর স্থিতাবস্থা জারি করে। ফলে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ রিসিভার নিয়োগের স্থিতাবস্থা জারির আদেশ প্রত্যাহার করেন। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টকে সিভিল রিভিউ মোকদ্দমাটি নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এফএমএ-২১৬/২০১২ নং মামলার ২০১৬ সালের ১০ আগষ্টের আদেশে নালিশি জমি লাওয়ারিশ বহাল রাখেন।একইসাথে মূল দেঃ ১৮/১০ মামলার আরজি খারিজের নির্দেশ দেন।

তবে উক্ত আদেশের ২১ ও ২২ দফায় মহামন্য হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করেন যে, নালিশী সম্পত্তি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রচলিত বিধি বিধান ও যথাযথ আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ ছাড়া ভ‚মি মন্ত্রণালয়কে একই নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আনছার গাজীসহ দুইজন বিবাদী সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল ২৫৬৮/২০১৭ দায়ের করেন। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ট্রায়াল বিচারাধীন থাকাকালিন নালিশী সম্পত্তি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রচলিত বিধি বিধান ও যথাযথ আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৮ সালের ৩০ আগষ্ট দেঃ ১৮/১০ মামলাটির আরজি খারিজ হয়ে যায়।

২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাপমারা খালের দু’পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া এবং জেলার বিভিন্ন স্থানের ভূমিহীনরা খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমিতে বসবাস শুরু করে। এরপর থেকে ওই জমির মালিক দাবিদাররা লীজ দেওয়া জমির মাছ ও ঘেরের বাসা নিজেদের দাবি করে ভূমিহীনদের নামে একের পর এক ফৌজদারি মামলা দেন। ওই জমি খাস জমি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবিতে খলিষাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির ডাকে সাড়া দিয়ে মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁসহ বিভিন্ন বামপন্থী নেতাগণ আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন।

২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ভ‚- সম্পত্তি জবরদখল ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত এক সভায় সাতক্ষীরার তৎকালিন পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের সিভিল রিভিউ ১৬৮/২১ মামলাটি শুনানী না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি থেকে ভ‚মিহীনদের উচ্ছেদ করতে আপত্তি জানালেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কথিত জমির মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর। বাধ্য হয়ে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি খলিষাখালি ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আনারুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সাতজনকে বিবাদী করে মহামান্য হাইকোর্টে ১৫০০/২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করলে ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালত ভ‚মিহীনদের উচ্ছেদের উপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে। পরে ওই মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানো হয়। ভূমিহীনদের প্রতিহত করতে দেবহাটা থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ওবায়দুল্লাহ ভ‚মিহীনদের যত্রতত্র গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের পর মাদক দিয়ে জেলে পাঠাতে থাকেন। ৩ নভেম্বর দ্রুত বিচার আইনে খালাস পাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ভূমিহীন ও স্বেচ্ছাস্বেক লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও গোলাম মুর্শিদকে সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল কোর্টের তিনতলা থেকে নীচের তলায় ডেকে নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে ডিবি পুলিশ কোর্ট চত্ত¡র থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরদিন তাদেরকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। একই দিনে নোড়ার চকের ইউনুসকে বদরতলা মাসের সেট তেকে তুলে নিয়ে পারুলিয়া জেলো পাড়া নামক স্থানে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এসব ঘটনা সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ তার পত্রিকা দৈনিক বাংলা’৭১ এ প্রকাশ করেন।

হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা জারি থাকাকালিন তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ৭৮৫ টি ভূমিহীন পরিবারের ঘরবাড়িতে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে বিরান ভূমিতে পরিণত করে দেঃ ১৮/১০ মামলার বিবাদীরা।এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভ‚মিহীনরা ঢাকা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করার পাশাপাশি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও ভ‚মি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।

২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে শহরের সুলতানপুর বড় বাজার থেকে কাচা সবজির বাজার করে পুরাতন সাতক্ষীরার কুদ্দুস আলীর মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে দিবানৈশ কলেজ মোড় ও পিএন স্কুল রোডের মাঝামাঝি জায়গা থেকে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক তারেক ইবনে আজিজ (বর্তমানে ডিবি ওসি) ও উপপরিদর্শক লোকমান হোসেন (বর্তমানে যশোরের চৌগাছায়) সাদা পোশাকে সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে তাদের মোটরসাইকেলে তুলে শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রাইভেট কারে করে খলিষাখালিসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরানোর পর বিকেল তিনটার দিকে দেবহাটা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. সুলতানা কামালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলেই রঘুনাথ খাঁ’র দুই চোখ বেঁধে ফেলা হয়। সেখান থেকে তাকে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ইলেকট্রিক শক ও কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে দেবহাটার খলিষখালিতে ঘেরে লুটপাট, বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩), ২৫-ডি তৎসহ বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩/৪/৬ ধারায় একটি ও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে কথিত জমির মালিক সুরুজ কাজীর দেওয়া আরও একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি বেসরকারি সংস্থা আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক জেলা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউÐেশনের নব্য সদস্য ডাঃ নজরুল ইসলাম সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ’র দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। প্রমান লোপাট করতে ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল চালক কুদ্দসকে থানায় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে পুলিশের শেখানো বক্তব্য ভিডিও ধারণ করা হয়। রঘুনাথ খাঁর পরিবারের সদস্যদের ম্যানেজ করতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। যাহা পরবর্তীতে ফেরৎ দেওয়া হয়। ্ ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ করা ও প্রতিবাদ করতে প্রস্তুতি নিলে প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জীকে ট্রাকের চাকার তলায় ফেলে হত্যার হুমকি দেন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। ২০২৩ সালের ২৩ আগষ্ট ও চলতি বছরের ৮ মে পুলিশ চাঁদাবাজি ও নাশকতার মামলায় রঘুনাথ খাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। প্রতিবাদে ২৪ জুন সাংবাদিক সমাজের ব্যনারে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়।

এদিকে ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ সদেস্যর বিচারপতিদের বেঞ্চ সিভিল রিভিউ ১৬৮/২১ পিটিশনটি খারিজ করে দেন। যার আদেশ নং ৪০(৭), বিধি নং-১(১) দেওয়ানী কার্যবিধি আইন,১৯০৮।

গত ২৫ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতে জমির স্বত্বহীন হওয়ার পরও সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কাজী গোলাম ওয়ারেশ, ইকবাল মাসুদ, আনছার গাজী, আব্দুল আজিজ, ডাঃ নজরুলসহ বেশ কয়েকজন ঘেরের মাছ কেনার নাম করে কৌশলে নাশকতা মামলার আসামী বিএনপি নেতা কালিগঞ্জের নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল ইসলাম, মাটি কুমড়ার জবেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে আনারুল ইসলাম (মাছ), ইন্দ্রনগরের নিতাই মাষ্টারের ছেলে মিলন বাবু, নওয়াপাড়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা গোলাম ফারুখ বাবু, দেবহাটা নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বয়ারডাঙা গ্রামের বাবর আলী মোড়লের ছেলে নজরুল ইসলাম, পারুলিয়ার শফিকুর রহমান ওরফে সেঝ খোকন, বাবুরাবাদের বেড়ে শওকতসহ কয়েকজন ১৩১৮ বিঘার দখলে নিয়েছে। তবে আনোয়ার গাজী ও ইকবাল মাসুদসহ আদালতে নিঃস্বত্ব হওয়া কয়েকজন ভ‚মিদস্যু এখনো জবরদখল করে মাছ চাষ করে যাচ্ছেন প্রশাসন ও ক্ষশতাসীন দলের কতিপয় নেতাকে ম্যানেজ করে।

স্থানীয়রা জানান, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর ওই জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাস করার ব্যবস্থা না করে নীরব থাকায় খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি সরকারি জমি জবরদখল করে মাছ চাষ করতে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল ইসলাম অস্ত্র মামলার পলাতক আসামী সন্ত্রাসী নাংলার গফুর, চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী, আব্দুর রউফ বুধো, শাহীনুর পাড়. সবুর গাজী, সাম্মাৎ শেখ, তার ছেলে আইয়ুব আলী, ইন্দ্রনগরের শামীম, মুর্শিদ, নোড়ার চকের আনারুল, নূর আলী, হামিজউদ্দিন কানার ছেলে মনি, দেবহাটার পলগাড়ার পুটু শেখ, ইব্রাহীম, আসাদুল শেখ, নোড়ারচকের আব্দুস সবুর, ইসমাইল মেম্বর, বয়ারডাঙার নজরুল মোড়লসহ ২৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীকে মাসিক বেতন দিয়ে যাচ্ছেন।

এসব সন্ত্রাসীদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে এক থেকে ৬টির বেশি অস্ত্র ও ডাকাতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

আরিজুল ইসলাম শুধু সন্ত্রাসী লালন করেন না, তিনি স্থানীয় বড় মাপের জনপ্রতিনিধি, সাংসদের কাছের লোক বলে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ কালিগঞ্জ ও দেবহাটার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে থাকেন। মাঝে মাঝে দুই থানার কতিপয় পুলিশ সদস্যদের মাছ আনারুলের নলতা অফিসে খোশ গল্প করতে দেখা যায়। পরে আনারুলের গাড়িতে করে কখনো আম আবার মাছের কাটুন নিয়ে যেতে দেকা যায়। একইভাবে নওয়াপাড়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, ইকবাল মাসুদ, সেঝ খোকন, রফিকুল হাজীসহ লাওরাশি সম্পত্তি দখলে রেখে মাছ চাষের সুবিধার্থে সাতক্ষীরা, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা থেকে ৫০ জনের বেশি সন্ত্রাসী ভাড়া করে খলিষাখালির ঘের পাহারায় রেখে দিয়েছেন। যে কারণে খলিষাখালি, ঢেপুখালি, জগন্নাথপুরসহ বিভিন্ন এলাকা এখন সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে পরিণত হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে জগন্নাথপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের বাড়িতে গত ২৭ জুন দিবাগত রাতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংগঠিত হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ওরফে সাহেব আলী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদেশের পর খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা মালিকানাবিহীন জমি কারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দখলে রেখে মাছ চাষ করছে সেটা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের অজানা নয়। যেহেতু সুভাষ ঘোষের বাড়িতে শুক্রবার ভোরে ডাকাতি শেষে মেইন রোডের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম সেক্ষেত্রে তারা বিলের দিকে গেছে। ইচ্ছা করলে প্রশাসনই যে কোন মুহুর্তে ওই এলাকা সন্স্রাসী মুক্ত করতে পারে।

এ ব্যাপারে শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করলে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

(আরকে/এএস/জুন ২৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test